প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ

মুক্তবুলি ডেস্ক ||

ইব্রাহীম খাঁর জন্ম শাবাজনগর গ্রাম, ভুঞাপুর, টাঙ্গাইল, ১৮৯৪ সালে। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএ, ১৯১৬ সালে কলকাতা সেন্ট পলস কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ অনার্স, ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। টাঙ্গাইলের করটিয়া ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৯২০ সালে যোগদান করেন। কংগ্রেসে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে অংশ স্কুলকে জাতীয় বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেছিলেন। ১৯২৪ সালে আইনে ডিগ্রি নিয়ে ময়মনসিংহ জজ কোর্টে আইন ব্যবসায় নিয়োজিত হন।
১৯২৬ সালে করটিয়ার জমিদার ও দানবীর ওয়াজেদ আলী খান পন্নী চাঁদ মিয়ার অর্থসাহায্যে সা’দৎ কলেজ প্রতিষ্ঠা তার জীবনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে অবিভক্ত বাংলার আইন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পাকিস্তান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল তার। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের প্রার্থীরূপে টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। প্রাদেশিক প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন পুরো পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রথম সভাপতি ছিলেন ১৯৪৮ থেকে ’৫২ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৩ সালে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালের ময়মনসিংহ-২ আসন থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের (কাইয়ুম) মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৬৭ সালে রেডিও ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত জাতীয় আদর্শের পরিপন্থী সমর্থন জ্ঞাপন করেন। বিভিন্ন সময় তিনি স্থাপন করেছিলেন ভুয়াপুরে হাইস্কুল, বালিকা বিদ্যালয়, কলেজ, করটিয়া জুনিয়র গার্লস মাদরাসা ইত্যাদি। অসংখ্য ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, ভ্রমণকাহিনী ও শিশুপাঠ্য গ্রন্থ রচনা করে তিনি স্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ নাটক : কামাল পাশা (১৩৩৪), আনোয়ার পাশা (১৩৩৭), ঋণ পরিশোধ (১৯৫৫), ভিস্তি বাদশা (১৩৫৭), কাফেলা। উপন্যাস : বৌ বেগম (১৯৫৮)। গল্পগ্রন্থ : আলু বোখারা (১৯৬০), উস্তাদ (১৯৬৭), দাদুর আসর (১৯৭১), মানুষ। স্মৃতিকথা : বাতায়ন (১৩৭৪), লিপি সংলাপ।

ভ্রমণকাহিনী : ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র (১৯৫৪)। শিশুসাহিত্য : ব্যাঘ্রমামা (১৯৫১), শিয়াল পণ্ডিত (১৯৫২), নিজাম ডাকাত (১৯৫০), বেদুঈনদের দেশে (১৯৫৬), ছোটদের মহানবী সা: (১৯৬১), ইতিহাসের আগের মানুষ (১৯৬১), গল্পে ফজলুল হক (১৯৭৭), ছোটদের নজরুল ইত্যাদি।

ব্রিটিশ আমলে ‘খান সাহেব’ ও ‘খান বাহাদুর’ এবং পাকিস্তান আমলে ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেছিলেন। ১৯৬৩ সালে নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজসেবা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ অবদান রাখেন। তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন ‘প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ’ হিসেবে। মৃত্যুবরণ করেন ঢাকায় ২৯ মার্চ, ১৯৭৮ সালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *