কামরুন নাহার আঁখি
প্রিয় চিঠি,
আমার প্রথম লেখা চিঠিটা লিখছি তোমাকেই, তোমারই হাত ধরে কতো মানুষ তাদের কতো আবেগ, কতো অনুভূতি, ভালো লাগা, ভালোবাসার সাপ্মান বয়ে চলেছে যুগের পর যুগ। অথচ আমরা ! আমাদেরই প্রয়োজনে তোমাকে দিয়েছি ছুটি, আজ আমরা সময়ের সাথে নিজেদেরকে নিয়েছি বদলে, এখন আমরা লিখি মোবাইল ফোনে অথবা ল্যাপটপে। কিছু মূহুর্তের ব্যাবধানেই আমাদের লেখাগুলো পৌঁছে যায় তার কাংখিত ঠিকানায়, কিন্তু….. সেখানে… একটা চিঠি আসবার জন্য যে প্রতিক্ষা সেটি কোথায় ? সেখানে নেই ডাক পিয়নের সাইকেলের বেল, বালিকার লুকিয়ে ভীরু নয়নে নীল খামের মুখ উন্মোচনের সুখ, চিঠির ভাজে বেলি, বকুল, অথবা গোলাপের পাঁপড়ি ছড়ানো আবেগ, গোটা গোটা অক্ষরে খুব যত্নে তৈরী করা প্রেমিকার হাতের লেখাটা, বারে বারে ভুল হয়ে যাওয়া লেখাটায় কাটাকুটির দাগ, ছিড়ে ফেলা ডায়েরির পাতা, মুচড়ে ফেলে দেয়া…. মাটিতে লুটানো কাগজের স্তূপ, নেই গভীর রাতে প্রবাসী স্বামীকে লিখতে বসা কোন বধুর কাঁজল ধোঁয়া দু’ফোটা অশ্রু ছাপ, নেই দুরে থাকা ছেলেটার একটা চিঠির জন্য ব্যাকুল মায়ের দিন গোনা, মুঠোফোন আমাদেরকে মুক্তি দিয়েছে এগুলো থেকে, জীবনকে করেছে সহজ।
এখন মাত্র দু’টাকার বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাংখিত খবরটুকু, তাই তো! কাগজ আর কলমের বিচ্ছেদ আমাদেরকে ভাবায় না। উত্তর আসার প্রতিক্ষা আমাদেরকে কাঁদায় না। যন্ত্রের সাথে বসবাস করতে করতে আমরাও পরিণত হচ্ছি যন্ত্রমানবে! আমাদের আবেগ গুলোও যন্ত্রের ভাষায় কথা কয়। প্রিয় চিঠি…. তোমাকে কথা দিচ্ছি… তোমাকে লেখা এই চিঠিটা আমি কাগজের বুকে একে দেব, তারপর হয়তো… রঙিন ঘুড়ির সাথে পাঠাবো আকাশের ঠিকানায়…. অথবা ভাসাবো জলে ।
চিঠি… তুমি চিঠি হয়ে ওঠো আবার! ফিরে আসো নতুন করে। না হয়- ছোট্ট চিরকুট হয়েই আসলে, তবু এসো…। খুব যত্নে গুছিয়ে দেয়া কাপড়ের ভাঁজে অথবা প্রতিদিনের ব্যবহারের চশমার খাপে এক টুকরো কাগজে লেখা থাকুক… ভালো থেকো, নিজের খেয়াল রেখো! এটুকু লেখাতেই মনে পড়ুক দুরে থাকা কোন এক অতি পরিচিত মুখ। একই ছাদের তলায় বাস করা দুটি মানুষের মাঝেও বেচে থাকুক….. চিঠি! কোন এক ভালোলাগা মুহূর্তে কাগজের বুকে ছোট্ট করে লেখা হোক…. ভালোবাসি। তোমারি হাত ধরে কিছুটা প্রাণ আসুক আমাদের যান্ত্রিক সভ্যতায় এ আমার আশির্বাদ তোমাকে! বেঁচে থাকো…. মানুষের মাঝে অনুভূতির প্রকাশ হয়ে….. এ আমার অসমাপ্ত চিঠি।