সাব্বির আলম বাবু
‘ও বউ ধান ভানে রে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া
নতুন নতুন চাল ভানে হেলিয়া দুলিয়া-ও বউ চাল ভানে রে…
গ্রাম গঞ্জে কৃষানীদের কন্ঠে এরকম গান আর উৎসবের উপলক্ষ্য দেখা যেত যখন নবান্নের ঘনঘটা হতো পৌষ-পার্বনে ।
অগ্রহায়ণে কৃষকের ধান কাটা আরম্ভের সাথে সাথে কৃষাণীরা ঘরে ঘরে ধানের চাল ভানা বা চালগুড়া করা আর পীঠাপুলির তৈরীর মহাসমারোহ শুরু করে দিত। গ্রাম্য গৃহবধুরা সকলে মিলে একে অপরের হাত ধরে নানা রকম গান ও গল্প করে এসকল কাজ করতো। যেন চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যেত। এ জন্যই হয়তো প্রবীণ জ্ঞানী ব্যক্তিরা প্রবাদ রচনা করেছেন ‘ধান ভানতে শীবের গীত’। এসবের প্রচলন সাধারনত হিন্দু সমাজের কৃষক-কৃষানীদের বাড়ীতেই বেশী দেখা যেত। লালমোহন উপজেলার চরলক্ষী গ্রামের কৃষাণী উষা রানী বলেন, অতীতে সাধারণত সুন্দরী অথবা তেতুঁল কাঠের ঢেঁকি তৈরী হতো। পরবর্তীতে কাঁঠাল কাঠ ব্যাহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে চালের কলের আর্বিভাবে ঢেঁকির সে রকম কদর আর নেই। অথচ পুষ্টিবিদদের মতে, কলে ছাঁটা চালের চেয়ে ঢেঁকি ছাটা চালের পুষ্টিমান বেশী।
ঢেঁকিতে চাল ছাঁটার আলাদা একটা ছন্দ থাকে । তিনচারজন মিলে পা দিয়ে ঢেঁকির পাটাতনে পাড় দেয় বা চাপা দেয় আর একজন ঢেঁকির সামনের দাঁতের নীচে গর্তের ভেতর থাকা চাল নাড়ায়। এই কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকির্পূণ যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এভাবে চাল ভানতে ভানতে গৃহবধুদের অনেক সময় সারারাত লেগে যেত।
কৃষক ও কাঠ মিস্ত্রি নিখিল জানান, একটি ঢেঁকি বানাতে সুন্দরী, শীল কড়ই অথবা তেঁতুল গাছের সাড়ে ৪ হাত লম্বা, একফুট প্রস্থের এক পিচ কাঠ লাগবে। তারপর কাঠলা- লম্বা সাড়ে তিন হাত- দেড় হাত উপরে দেড় হাত নীচে। নাচোনী-দুই হাত লম্বা এক পিচ, মশাল দুই হাত লম্বা এক পিচ, লোডগারা এক পিচ, লোহার লাগ্গা এক পিচ লাগবে। সুপ্রাচীনকাল থেকে ঢেঁকির প্রচলন শুরু হলেও আধুনিক প্রযুক্তি তথা কলের আগ্রাসনে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ গ্রামবাংলার ঘর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। অচিরেই এটিকে দেখা যাবে যাদুঘরে। তাই আমাদের সকল সচেতন মহলের উচিত ঢেঁকিকে বাচিয়ে রাখা।
সাব্বির আলম বাবু
লালমোহন, ভোলা
০১৭১৬২৯৪৪১০