আত্মকথা

ফারহানা করিম তুলি
.
আমি হিরামণি, বাবা-মায়ের আদরের হিরা।
অনেক আশা ছিল আমিও দশের এক হবো,
হয়েছি তো হয়েছি-
টিভি ওয়ালারা, পত্রিকার প্রথম পাতায়, সামাজিক যোগাযোগে
খালি আমি আর আমি আর আমার রক্তাক্ত দেহ।
.
না না আমি এখানে আমার ধর্ষণের বর্ণনা ছাপাতে আসি নি,
আমি দেখছি সকলে কেমন আমায় নিয়ে কাব্য লেখে, গল্প লেখে,
আবার আমার হয়ে বিচারও চায়।
বলি তিনটি মাস পর আমার নামটি মনে থাকবে?
তখনো কী পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় আমার ছবি রাখবে?
থাকবে না… রাখবেও না.. কারণ তোমাদের তনু আপুর কথা মনে নেই,
তোমাদের নুসরাত আপুর কথাও মনে নেই,
তোমাদের মনে নেই ৩, ৪, ৫ ধর্ষিতাদের নাম,
মনে নেই যে বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল তার পরিচয়।
.
তবে আমায় নিয়ে কেন এতো মাতামাতি? আমি সদ্য ধর্ষিতা তাই?
কেন আমার নাম নিয়ে নিজেদের সহানুভূতি বাড়াচ্ছো?
তোমাদের মধ্যে কেউ বুঝি কোন মেয়েকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করো নি?
আরে মেয়েরা তখনি ধর্ষিতা হয়, যখন পুরুষের নোংরা চোখ তাদের গিলে খায়,
বাসে-ট্রেনে ইভটিজিং করে বিকৃত স্বাদ নিয়ে চলে যায়।
সাবধান বোনেরা, কাল তুমি ধর্ষিতা হলে তোমায় নিয়ে কাব্য হবে..
কিন্তু ৪/৫ জন মানুষ নামধারী তোমায় থাবা বসালে,
সবাই তোমার নগ্নতা দেখে ঘরের দোর দেবে।
.
কেউ বাঁচাতে আসবে না কারণ এই দেশে
মিথ্যে সহানুভূতির নাটক হয়।
সাবধান বোনেরা, কাল তুমিও ধর্ষিতা হবে,
আবার অন্য কেউ পুরুষের যৌন লালসার
খোরাক হলে তোমায় ভুলে যাবে।
যেমন আমিও বিলুপ্ত হতে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *