মুক্তা অভিমুক্তি
পৃথিবীর ক্ষতটা একদিন
শুকায়ে আসবে।
হয়তো চিহ্নটা রয়ে যাবে।
হোম কোয়ারান্টাইনের আজ
তেষট্টিতম দিনে,
ভাবছি একাকী নিরবে বসে—
কোনো এক গোধুলী লগনে,
হবে দেখা তোমার সনে।
তোমায় নিয়ে যাবো আমি
নীল পাহাড়ের দেশে,
যেখানে আকাশ মিশেছে
পাহাড়ের চূড়ায়,
আর ভুবন দিগন্তে।
যেখানে মেঘেরা খেলা করে
পবনের সাথে,
তুমি চাইলে মেঘের ভেলা
এনে দেবো হাতে।
তুমি সজল নয়ন দুটি বন্ধ করে,
দুবাহু বাড়ায়ে আমায়
টেনে নিবে বুকে।
থাকবে নাকো আর কোনো বাধা,
এতদিনে মাস্কে ঢাকা
তোমার নির্জীব ওষ্ঠ যুগলে
গভীর চুম্বন এঁকে দিতে।
কোনো এক জোৎস্না রাতে
থাকবে তুমি আমার সাথে,
যেখানে চাঁদের আলো করে খেলা
ঢেউয়ের জলে ভেসে।
জেলে নৌকার বাতিগুলো
মিটমিটিয়ে জ্বলবে,
আর দুষ্টু বাতাস চুলগুলো তোমার
এলোমেলো করে দিবে।
চাঁদের আলোয় মুখখানি তোমার
খানিক দেখা যাবে,
আর নদীর চলন ছলাৎ ছলাৎ
শব্দ শোনা যাবে।
আহা! বিধাতার কী অপূর্ব সৃষ্টি!
নেই কোনো তফাৎ—
আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা
রমনী ও নদীর সাথে।
শিশির সিক্ত এক সাতসকালে
হেটে বেড়াবো ওই রমনা পার্কে।
যেথায় নিত্য লীলা করে পাখি
গুঞ্জনে হেসে হেসে।
হবে কি দেখা ঐ রমনীর সাথে?
যিনি বকুলের তলায় নিত্য আসে
বকুল কুড়ায়ে মালা গেঁথে
বিক্রি করবে বলে?
তার থেকে একটি মালা কিনে নিয়ে,
তোমার খোপায় দেবো গুজে।
পার্কের ওপাশটাতে চোখ পড়বে,
কেউ করছে ব্যায়াম
আর কেউ বেড়াচ্ছে দৌড়ে।
হঠাৎ মনে হবে—
তোমার ওজনটা বেশ বেড়েছে,
লকডাউনে ঘরে থেকে থেকে।
খরতপ্ত এক রৌদ্র দুপুরে,
তোমায় নিয়ে যাবো সেখানে–
যেখানে কৃষাণের
বুকের ঘাম মুছে দেয়
কৃষাণীর শাড়ির অঞ্চলে।
কাক ডাকে কা কা–
তৃষ্ণায় বুক ফেটে আসে।
ক্লান্ত দুটি চোখের পাতার
মিলন ঘনিয়ে আসে।
তুমি বলবে, একটু পানি হবে?
আহা কৃষাণীর সে কি মমতা,
বসার জন্য পরম যত্নে
খেজুরের পাতায় বোনা মাদুর
নিজ হাতে দেয় পেতে।
সঙ্গে চিড়ে মুড়ি পাটালির গুড়
আর নারিকেলের ফালি দেয় খেতে।
মাটির কলসির ঠান্ডা পানীয়—
অঙ্গ শীতল হয়ে আসে।
কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে,
তোমার সাথে থাকবো আমি
শাহবাগের জ্যামে আটকে।
দশ বারো বছরের ছেলেটি
বাসের জানালায় দাঁড়িয়ে হাঁকবে
মামা, চকবার আইসক্রিম লাগবে?
তুমি বলবে,
‘ভ্যানিলা কোন আইসক্রিম হবে?’
ভ্যানিলা কোন্ না পেয়ে
অবশেষে তুমি চকবারই খাবে।
‘তুমি পড়াশোনা করোনা?’
তুমি শুধাবে ছেলেটিকে।
বলবে ছেলেটি মাথা নেড়ে,
ম্যাডাম, “সারাদিন —–
বাসে ফেরি করে যা পাই,
তা-ই দিয়েই আমাদের
সংসার চলে।”
অনেক প্রশ্ন তোমার মনে
জমাট বেধেই থাকবে।
গোধুলির লাল রঙ
মিলিয়ে যায় নিমিষে,
ঐ বুঝি আযানের
সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসে।
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে তুমি
দাঁড়াবে তুলসি তলে,
আর শঙ্খের সুমধুর সুর
বেজে উঠবে জোরে।
আমি সেতারে সুর তুলছি
দাড়ায়ে দুয়ারে —
ঐ বুঝি মহাকাল
ডাকছে আমারে।।