গুচ্ছ কবিতা

সায়ীদ আবুবকর

রাতের নগরী

রাতের নগরী নেশায় উত্তাল।
নাচে তন্বী স্বপ্নের নারীরা
নগরনাট্যমে। বেসামাল
মানুষেরা; ওঠে
উথলে তাদের শিরা-উপশিরা
উন্মাদ উচ্ছ্বাসে। ঠোঁটে
বাজে শিস, প্রাণে কবন্ধ কামনা-
নীলপদ্মপায়ে নর্তকীর, ঝরে ঝরে পড়ে সোনা।

এইসব মানুষেরা কেবলি শরীরী;
কেবলি কামান্ধ কায়ার উল্লাসে
বেতাল, বেহুঁশ; এদের স্বপ্নের সিঁড়ি
ওঠে নাই ঊর্ধ্বাকাশে,
উল্টো নেমে গেছে নিচে, বহু নিচে
অথৈ অন্ধকারে ডোবা নরকেরও নিচে-
ঘৃণার কিরিচে
যেখানে জন্মান্ধ ডাকিনীরা কাটে চৌপ্রহর
মানুষের অবোধ অন্তর।

খলিফাপট্টিতে আমি থাকি

খলিফাপট্টিতে আমি থাকি।
খলিফারা ব্যস্ত সারাদিন
শরীরের মাপজোঁক নিয়ে।
কি-সুন্দর বানায় পোশাক;
কত না ক্লায়েন্ট প্রতিদিন
দূর-দূরান্তর থেকে আসে!

আমি এইসব খলিফার
মুখগুলো চেয়ে চেয়ে দেখি
আর ফিরে যাই অতীতের
সোনায় মোড়ানো ইতিহাসে।
খলখল হাসে ইতিহাস;
‘খলিফা’ শব্দটি মুখ ঢাকে
লজ্জায় কারণ এক কালে
খলিফা যে ছিলো ওসমান.
ওমর, আবুবকর, আলী।

তবু আমি থাকি, আমি আছি
আমাদের খলিফাপট্টিতে।

নিস্তব্ধতার গান

স্তব্ধ করে রাখো বুক
আর বেঁধে রাখো ঠোঁট।
কিছুই বলে না যেন মুখ,
উলট পালট

যতই দ্যাখো না চারদিকে!
কথা বলবে না কোনো,
উল্টা পাল্টা যা-ই যাক লিখে
আর যা-ই তুমি শোনো।

কেন যে হৃদয়ে রাখো আজও
কবিতার কথা, কুসুমের কথা!
পারলে ছুরির মতো বাজো;
না হলে, কেবলি নিস্তব্ধতা!

এখানে গানের-সুরের-প্রেমের
দিন আর পাবে না কো;
বুঝা হয়ে গেছে ঢের,-
চুপ করে তুমি থাকো

যেন লাশ,
যেন বিস্মৃতির অন্ধকারে
সভ্যতার কোনো লুপ্ত ইতিহাস
বেতসবনের ধারে!

চুপ! চুপ! আরো চুপ! নয়
টুঁ শব্দও কোনো, এ-নরকে!
যদি নড়ে ওঠে একবারও আহত হৃদয়,
টের পেয়ে যাবে লোকে!

একটাই ছিলো বটগাছ

আমাদের গোটা গ্রামে একটাই ছিলো বটগাছ,
আর সব গাছগুলো মনে হতো দেখে লিলিপুট;
তার দিকে চোখ তুলে করতে পারতো না কেউ আঁচ
আকাশ খামচে ধরা এ-গাছটা আসলে কয় ফুট!

একটাই বটগাছ ছিলো আমাদের গোটা গ্রামে,
যার সব ডালে বসে নিতো ক্লান্ত পাখিরা বিশ্রাম;
অতঃপর উচ্চৈঃস্বরে জুড়তো সঙ্গীত তার নামে,
পাখিদের সে-সঙ্গীতে গমগম করতো সারা গ্রাম।

সেই বটগাছে চড়ে দেখা যেত দূর-দূরাস্তর,
পৃথিবীটা মনে হতো আমাদের মুঠের ভেতর;
কারা সেই গাছ কেটে তুললো সেখানে নাচঘর!
সেই ঘরে নাচে আজ বাটপার, জল্লাদ ও চোর।

আসে না আর সে পাখি, ভাসে না বাতাসে সেই সুর
ঘেউ ঘেউ করে শুধু গ্রামময় অজস্র কুকুর।

২ comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *