পর্ব – ১
প্রচারমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। একবিংশ শতাব্দর সূচনা থেকেই গণমাধ্যমের এই প্রবণতা লক্ষণীয়। আর মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ প্রত্যক্ষ করছে মিথ্যা কীভাবে কায়েম হয় সত্যের স্থলাভিষিক্তরূপে। এভাবেই টিভি, ইন্টারনেট, কাগজ অহির ধারক-বাহকদের মিথ্যা ইজমে বিভ্রান্ত করছে। পাঠক-দর্শকদের চোখ, মন, মস্তিষ্কও ওইসব মতলববাজ মিডিয়াকর্মী ও মিডিয়ামালিকদের কুহকে কুহেলিত। ওদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় তাওহিদপন্থীরা কোণঠাসা। হলুদ সাংবাদিকদের কাটতি রমরমা। তাদের বড়ই সুদিন। তাদের টেকনোলজির টেকনিকে হকপন্থীরা দুর্দিনের শিকার। এই থিওরি বিশ্বদরবারে যেমন সত্য, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অভিন্ন। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টিকালচার কলকাতার কুহকদের কথকতায় বন্দী। কলকাতার বুলি বিলিয়ে ভুলাচ্ছি বাস্তবতাকে। সুযোগসন্ধানীদের শক্তিশালী প্রচারযন্ত্রের যন্ত্রণায় সত্যসন্ধানীদের সমাজ সহজেই ছোটো হয়ে আসছে। সততা, সাহস, ন্যায়নিষ্ঠতা, নৈতিকতা, সদগুণ নির্বাসনে। তোষামোদের তৈলে তৈলাক্ত তৈলপ্রেমিকরা জাতির মাথায় ছড়ি ঘুরাচ্ছে। ওদের সবার উদ্দেশ্য এক। আর তাহলো কুরআনের সৈনিকদের জঙ্গি জাতি হিসেবে উপস্থাপন। কিন্তু আমরা ইতিহাস থেকে এর অসারতা প্রমাণ করব। আমাদের এ প্রয়াস ১০০ পর্বে সমাপ্ত হবে। মুক্তবুলির পাঠকদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তোহফা দেয়ার জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজন।
হাম্বুরাবির একনায়কত্ব :
ইসায়িপূর্ব ১৯৫০ সনে (অর্থাৎ আজ থেকে ৩৯৬৭ বছর পূর্বে) ষষ্ঠ রাজা হিসেবে ব্যবিলনে হাম্বুরাবির অভিষেক ঘটে। তিনি সুমেরদের পরাজিত করে ব্যবিলন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। ব্যবিলনের পূর্ব নাম ছিলো সেন্নার। আল কুরআন ও বাইবেলে যার নাম বাবেল। রাজা হাম্বুরাবির স্বৈরাচারিতা আজও স্মরণীয়। তিনি ছিলেন জমিদার, অমাত্য, পুরোহিত ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের বিশ্বস্ত পৃষ্টপোষক। তার আইন কানুনের মর্ম ছিলো ‘লাভ সবটাই ধনীর, লোকসান পুরোটা গরিবের’। আল কুরআনে বর্ণিত নবি ইবরহিমের সমকালীন বাদশাহ নমরুদ আর হাম্বুরাবি সম্ভবত একই ব্যক্তি।
কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ওপর তিনি এক তৃতীয়াংশ খাজনা ধার্য করেন। ফলের বাগান হলে দিতে হতো দুই তৃতীয়াংশ। খাজনা দিতে দেরি হলে সুদ ও ক্ষতিপূরণ আদায় করা হতো। কেউ অসমর্থ হলে তাকে দাস বানানো হতো। হাম্বুরাবি বলতেন, ‘তার কানুন দ্বারা তিনি ধনী ও বড় লোকদের স্বার্থ সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।’ (রেবতী বর্মণ: সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, পৃ ৩৫-৩৬)
ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের সংঘাত :
ভারতের প্রাচীন বৈদিক সমাজ নানা দিক দিয়ে কলুষিত। শ্রেণি সংগ্রাম, বর্ণবাদ, দখল ইত্যাদিতে পূর্ণ তৎকালীন সমাজ। সেখানে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে শ্রেণি প্রাধান্যের জন্য সংঘর্ষ। অথর্ববেদ ও তৈত্তিরীয় সংহিতায় আমরা দেখি ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় পরস্পর পরস্পরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করছে। পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক আতঙ্কে মোড় নেয়। সংঘাত অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। এই বড়ত্বের দাবি নিয়ে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে বহুবর্ষব্যাপী একটা যুদ্ধের মুখোমুখি হয় উভয় বাহিনী। পুরাণে এই যুদ্ধকে ব্রাহ্মণ ভার্গব ও ক্ষত্রিয় হৈহয় পরিবারের যুদ্ধ বলা হয়েছে। এ যুদ্ধে ব্রাহ্মণদের সিপাহসালার ছিলেন পরশুরাম ও ক্ষত্রিয় নেতা ছিলেন কার্তবীর্জার্জুন।
প্রাচীন ঋষি ও পুরোহিতরা ছিলো অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক মোক্তার। নিম্নশ্রেণিগুলোর মধ্যে যেন উচ্চশ্রেণির প্রতি বিরোধীভাব না থাকে সেজন্য ব্রাহ্মণেরা পরলোক, স্বর্গ-নরক ও পরিশেষে জন্মান্তরবাদের তত্ত্ব রচনা করেন। সংস্কৃত সাহিত্যে যারা ব্রাহ্মণদের অনুশাসন মানে না তাদেরকে বলা হয়েছে ‘অনার্য’। (রেবতী বর্মণ: সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, পৃ. ৪৫) অনার্য মানে অসভ্য, অসাধু, অভদ্র। অর্থাৎ হিন্দু না হলেই তারা অসভ্য, বর্বর, অমানুষ, ম্লেচ্ছ …। বর্তমান যুগেও তাদের কাছে শুনতে পাই, ‘বীরের প্রধান ধর্ম স্বদেশ রক্ষণ/হিন্দুর প্রধান কার্য যবন (মুসলিম) নিধন।’ (মনোমোহন গোস্বামী: পৃত্থিরাজ, উদ্ধৃতি, মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক: ভারতের মুসলমান ও স্বাধীনতা আন্দোলন, পৃ ১৩৩)
চলবে …
السلام عليكم ورحمة الله ةبركاته
আশা করি আল্লাহর অেশেষ মেহেরবানীতে ভাল আছেন। আপনার লেখা আসলেই আমাদেরকে জ্ঞান আহরনের সহায়ক। জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার লেখা । চালিয়ে যাবেন ধন্যবাদ। বিশেষকরে আমার লেখার পরামর্শ দিবেন।