আবদুর রাজ্জাক
শুদ্ধ ও সুন্দরে বাংলা এখন আর কেউ বলে না- বোধকরি,
প্রকৃত বাংলাভাষার প্রয়োগ নিয়ে বাঙালিরা উদাসীন।
সকল ক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহারে
কখনও কখনও আমি অবাক হয়ে যাই।
প্রতিবাদের সেই প্রবল কিন্তু মহিমাদীপ্ত ভাষা আর নাই
যে ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু।
প্রতিবাদের ভাষা এখন হয়েছে উগ্র, সহিংস, অশ্লীল
কিন্তু……
“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম“ শব্দের তেজদীপ্ত
বঙ্গবন্ধুর সুন্দর উচ্চারনের মতো রাজনীতির ভাষা
এখন পালিয়েছে লোকালয় থেকে অনেক দূরে।
রাজনীতির ভাষা এখন শুনলে কানে দিতে হয় হাত ।
গনতন্ত্রের নামে নেতাদের উচ্চারিত ভাষায়,
মাঠে ময়দানে যেন দহনতন্ত্রের বিষ ছড়ায়।
রাজনীতিকরা বাংলা ভাষায় সুন্দর করে , বলিষ্ঠ ও তীব্র
বুলি যেমন বলতে ভুলে গেছেন এখন,
ঠিক শিক্ষিত ও শিক্ষক শ্রেনীর ভাষা প্রয়োগেও
প্রতিনিয়ত শোনা যায় ভয়ানক জগাখিচুড়ি।
টকশো,ফটকা বাজার, আবত্তহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে
শিক্ষিতদের বক্তব্যের বিশেষ্য ও বিশেষণে
শতকরা চল্লিশ থেকে ষাটভাগ শোনা যায় ইংরেজী শব্দ।
আমরা আজ যে বাংলায় কথা বলি
তা বোধকরি এক বিপন্ন প্রজাতির বাংলা।
যে ভাষা উর্দূ , হিন্দি, ফারসি বিশেষ করে
ইংরেজি ভাষার মিশ্রণে দূর্বল হয়েছে এর ভিত্তি।
তাই আজ যেন —
প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ইংরেজির কাছে মার খাচ্ছে।
ভাষার রাস্তাটা তৈরি করে গিয়েছিল, আমাদের
প্রাণাধিক প্রিয় ভাষাশহিদেরা।
আর সেই রাস্তাটাকে রাজপথে পরিনত করল মহান স্বাধীনতা।
সেই বাংলা ভাষার রাজপথটিকে আরও প্রশস্ত ও মসৃন করতে
যথার্থ উদ্যোগ না নেয়ায়
অপব্যবহারে এর পিচ নষ্ট হয়ে খোয়া বেরিয়ে গেছে।
এখন ইংরেজির আলকাতরা দিয়ে,বাংলাকে ঢেকে দেয়ায়
বাংলা ভাষা হচ্ছে শ্রীহীন।
আমরা পারিনা চেক অথবা জাপানিদের মতো
আমাদের বাংলা ভাষাকে সুরক্ষা করতে?
যদি পারতাম– তাহলে…
ভাষার জন্য যারা বুকের তাজা রক্ত
অবলিলায় ঢেলে দিয়েছিল পিচঢালা রাজপথে
তাদের আত্মা শান্তি পেতো অনন্তকাল।