বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঝালকাঠির প্রবীণ সাংবাদিক মানিক রায়

কে এম সবুজ ।।

বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ঝালকাঠির প্রবীণ সাংবাদিক মানিক রায়। ৩০ মে ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আসিসিবি) সন্ধ্যা ৭টায় এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, আজকের পত্রিকার সম্পাদক ও বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের জুরিবোর্ড প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।

সম্মাননাপ্রাপ্ত গুণি সাংবাদিক মানিক রায়কে ৫০ হাজার টাকা, উত্তরীয় ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়। তাঁর মতো দেশের ৬৪ জেলার একজন করে গুণি সাংবাদিককে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য নির্বাচিত ১১ জন রিপোর্টারকে আড়াই লাখ টাকা করে পুরস্কৃত করা হয়।

সাংবাদিক মানিক রায় বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকতার ৩৯ বছর পার করেছি, এখনো বাইসাইকেল চালিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছুটে বেড়াই গ্রামের পথে প্রান্তে। ৬৫ বছর বয়সেও পেশার হাল ছাড়িনি কখনো। এখনো যুবকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাংবাদিকতা করি। শেষ বয়সে এসে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের জন্য আমাকে নির্বাচিত করায় আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমার জীবনে এটাই বড় ধরণের সম্মাননা। শুধু আমিই নয়, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের ৬৪ জেলার গুণী সাংবাদিককে বাছাই করে অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে, এটা দেশের একটি বিরল ঘটনা। আমি তাদের এ উদ্যোগতে স্বাগত জানাই। আশাকরি বসুন্ধরা গ্রুপের সবকটি মিডিয়া দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।

মানিক রায় বলেন, আমি সাংবাদিকতার শুরু থেকে সততার সঙ্গে পেশার মর্যাদা দিয়ে আসছি। আজ আমার মর্যাদা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি ও আমার পরিবার। যখন আমাকে এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচন করা হলো, তখন থেকেই আমার পরিবারে আনন্দ বিরাজ করছে। এই অ্যাওয়ার্ডটি আমার জন্য অনেক সম্মানের এবং গৌরবের। বসুন্ধরা গ্রুপের সফলতা কামনা করছি।

মানিক রায় ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ঝালকাঠি পৌরসভা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। অনন্ত কুমার রায় ও সোনা লক্ষী রায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তাঁর বাবা পৌরসভায় চাকরি করতেন। পরে তাঁরা শহরের পূর্বচাঁদকাঠি জেলেপাড়া এলাকায় বাড়ি করেন। লক্ষী নীড় নামের বাড়িতেই তাঁরা বসবাস করেন। ঝালকাঠি শহরের পৌর আদর্শ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঝালকাঠি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাশ করেন। ছাত্র অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। ছাত্রজীবনে বাইসাইকেল চালিয়ে শহরের একপ্রাপ্ত থেকে অপরপ্রান্তে ছুটতেন। বাসা থেকে স্কুলে যাওয়া আসার জন্যও সাইকেলই ছিল তাঁর যাতায়াতের মাধ্যম। ১৯৮৩ সালে তিনি ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কপোরেশন (বিবিসি) এর ট্রাভেল ম্যাসেঞ্জার হিসেবে সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন তিনি।

পরে দৈনিক ভোরের কাগজ ও দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকায় কাজ করেন। বর্তমানে তিনি চ্যানেল আই, দৈনিক জনকন্ঠ, ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি), দি বাংলাদেশ টুডের জেলা প্রতিনিধি এবং ঝালকাঠি থেকে প্রকাশিত দৈনিক শতকন্ঠ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। সেই বাইসাকেল চালিয়ে এখনো সাংবাদিকতা করছেন তিনি। মানিক রায় বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি), গণমাধ্যম বিষয়ক সংস্থা ম্যাস্-লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী বিণা রায় ঝালকাঠির সঙ্গীত প্রশিক্ষক। ছেলে বাধন রায় ও মেয়ে মৈত্রী রায় চৈতি স্নাতোকত্তর সম্পন্ন করেছে।
সামাজিক কর্মকান্ড : 
সামাজিক কর্মকান্ডে সাংবাদিক মানিক রায়ের বিচরণ রয়েছে। বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের। পাশাপাশি কিশোলয় খেলাঘর’র সভাপতি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত ঝালকাঠি মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্রিকেট কোচ, আপগ্রেডেড ক্রিকেট আম্পায়ার, আম্পায়ার অ্যান্ড স্কোরার এসোসিয়েশন, ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রক্তদান : 
অসহায় মানুষের জন্য তিনি ৮ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন (রক্তের গ্রুপ ‘বি’ পজেটিভ)।
সাহিত্যাঙ্গণ : 
বিভিন্ন সময় তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্য সংকলন, ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা অসংখ্য ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প রয়েছে।
প্রশিক্ষণ : 
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-সংস্থা থেকে মানবাধিকার, সুশাসন, অ্যাডভোকেসি, ম্যানেজমেন্ট, পরিবেশ, এনজিও কার্যক্রম, আর্সেনিক, এইচআইভি/এইডস, সমাজ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাংগঠনিক দক্ষতা উন্নয়নসহ নানা বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সাংবাদিক মানিক রায়।
লোক সংস্কৃতি : 
ঝালকাঠির সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেশের লোক সংস্কৃতি বিষয়ক প্রকাশনা এর আওতায় ‘ঝালকাঠির লোক সংস্কৃতি’ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের অভিজ্ঞতা ও লেখা এবং ছবি তোলা ও ছবি সংগ্রহ কাজে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
পুরস্কার : 
সাংবাদিক মানিক রায় বরিশাল বিভাগের চারণ সাংবাদিক হিসেবে ২০১৪ সালে মাইনুল হাসান স্মৃতি পদক লাভ করেন। এছাড়াও ঝালকাঠির রাজাপুর প্রেসক্লাব থেকে সম্মাননা, ২০১৬ সালে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ব্র্যাক থেকে সম্মাননা ও ছাত্রজীবনে বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন গুণী এ সংবাদিক।

কে এম সবুজ ঝালকাঠি প্রতিনিধি, দৈনিক কালের কণ্ঠ ও এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *