বৃহত্তর বরিশালের লোকসংস্কৃতি

আযাদ আলাউদ্দীন

বৃহত্তর বরিশালের লোকসংস্কৃতি এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর লড়াকু মানসিকতার মতোই ঐতিহ্যময়। লোকজীবনের সব উপাদানই এখানে বিদ্যমান। এ জনপদ বাংলার অন্য জনপদগুলো হতে ভিন্ন। নদী ভাঙ্গন, চর ও জলের জীবন অন্য অঞ্চল থেকে এই অঞ্চলের মানুষ বেশিরকম প্রত্যক্ষ করেছে। ফলে এর সংস্কুতির উপাদানগুলোও প্রক্রিয়াগতভাবে অন্যরকম। যেমন, এই অঞ্চলের ভাষার যে টান- তা যেন অনেকটা জলকল্লোলেরই আরেক ধারা। পাশাপাশি একই সঙ্গে বসবাসরত বাওয়ালী, জেলে, পাটিয়াল, নইদ্দা, গাছি, ময়রা, ধুনারি, কাঁসারু, কুয়াইত্তা- এসব অন্যান্য অঞ্চলে একই সঙ্গে দেখা পাওয়া ভার।

বৃহত্তর বরিশালের লোকনাটক, লোকসঙ্গীত, লোককাহিনী, ছড়া, প্রবাদ, ধাঁধা কিংবা মন্ত্রের দিকে চোখ রাখলেও দেখা যায়, এগুলো নিজ বৈশিষ্ট্যে অনন্য ও স্বতন্ত্র। সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সবকিছুতেই যেন নদী নির্ভরতা। এই অঞ্চলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো অনেক লোকখেলা রয়েছে। তবে তইতই , পানিঝুপ্পা এই খেলাগুলো অন্য অঞ্চলে বিরল । পাশাপাশি লোকযানবাহনের মধ্যে কাঠামি নাও, বাচারি নাও, তালের ডোঙ্গা, সুপারি গাছের নৌকা এই অঞ্চরের ঐতিহ্য তুলে ধরে। লোকশিল্পের দিকে তাকালেও দেখা যায় একই অবস্থা। শোলাশিল্প, কাঁথাশিল্প, পাটিশিল্প, ছোবড়াশিল্প- এগুলো অনেকটা অন্য অঞ্চলে মিলবে না।
এই বইয়ে যুক্ত হয়েছে বৃহত্তর বরিশালে লোকমেলা ও উৎসব, লোকবিশ্বাস-লোকসংস্কার ও লোকাচার-লোকপ্রথা, লোকউপকরণসহ নানাবিধ লোকমাত্রিক অনুষঙ্গ। সবশেষে যুক্ত হওয়া আলোকচিত্র বইটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। এককথায়, বইটি হচ্ছে বরিশালের লোকজীবনের সংস্কৃতিকাহন।
লেখক পরিচিতি
ড. মিজান রহমান- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স (১৯৯৮) , এমএ (১৯৯৯) এবং ‘বৃহত্তর বরিশালের লোকসংস্কৃতি ’ শিরোনামে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন ( ২০১১) ।
তিনি ঢাকা নটরডেম কলেজের বাংলা প্রভাষক। তার গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে- বরিশালের লোকনাটক বিষয় ও পরিবশেনা (২০০৭) , এবং জীবনানন্দ (২০০৯), স্বরূপকাঠির ইতিহাস ও ঐতিহ্য (২০০৩), জাগরণের কবি মুকুন্দদাস (২০০৬), বৃহত্তর বরিশালের লোকসাহিত্য (১ম খন্ড, ২০১২), বৃহত্তর বরিশালের লোকসাহিত্য (২য় খন্ড, ২০১৩), কামিনী রায় (জীবনী ২০১৩), মৃুকুন্দদাস (জীবনী ২০১৩) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তার দুটি কাব্যগন্থ এবং উনিশটি সম্পাদিত গ্রন্থ রয়েছে।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ’কালচারাল সার্ভে অব বাংলাদেশ’ প্রকল্পের সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা ’লোকসংস্কৃতি’ (খন্ড-৭) এবং ’প্রবাদ-প্রবচন’ (খন্ড-১০) এ সহকারী গবেষক এবং বাংলাপিডিয়া (২য় সংস্কৃরণ)-ও একাধিক ভুক্তির লেখক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
মিজান রহমান বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি এবং বাংলা একাডেমির সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *