বেলায়েত বাবলু
৩ মে, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে অথবা বিশ্ব স্বাধীন গণমাধ্যম দিবস। ২০২০ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ভয়ভীতি ও তোষণহীন সাংবাদিকতা’ আমাদের দেশেও দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার প্রভাবে এবার হয়তো কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকছেনা। স্বাধীন কথাটি সাংবাদিকদের কাছে অতি মূল্যবান একটি শব্দ। তবে পেশাগত দিক থেকে তারা নিজেরা কতোটা স্বাধীন তা তাদের চেয়ে আর কেউ ভাল জানেন না।
একসময় সরাসরি সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার কারনে আমারও মিডিয়া পাড়ার অনেক কিছু দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। বরিশালে যখন লেটার টাইপে হ্যান্ড মেশিনে পত্রিকা প্রকাশ হতো তখন থেকে আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। সুযোগ হয়েছে কাছ থেকে অনেক কিছু দেখার। বরিশালে এখন যারা প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক এবং পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন তাদের অনেকের সাথেই আমার সখ্যতা রয়েছে। তাদের অনেকের উত্থান যেমন দেখেছি আবার চোখের সামনে হারিয়ে যেতে দেখেছি।
আজ যাকে অন্যের হয়ে কাজ করতে দেখেছি আবার কিছুদিন বাদে তাকে দেখেছি মালিকদের একজন হয়ে উঠতে। যাক এসকল বিষয়ে পরে একদিন লিখবো। লিখছিলাম স্বাধীনতা নিয়ে। সংবাদকর্মীদের অবাধ স্বাধীনতা না থাকলে তারা সমাজের অসঙ্গতি লিখতে পারবেননা। তারা মুক্ত পাখির মতো ডানা মিলে উড়তে না পারলে, অথবা তাদের হাত, চোখ বাঁধা থাকলে তারা সমাজে বিবেক বলে পরিচিত হলেও সমাজে তারা কোন ভূমিকাই রাখতে পারবেন না।
সংবাদকর্মীরা রাষ্ট্রের দ্বারা যে কম বেশী নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন তাতে কোন দ্বিমত নেই। আবার সাংবাদিকদের অনেকে যে অবাধ তথ্য প্রবাহের এ যুগে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমি একসময় সরাসরি সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার সুবাদে এটা বলতে পারি সংবাদকর্মীরা যতোটা না রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হন তার চেয়ে বেশী মালিকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন। মালিক পক্ষ ঠিক করে দেন কোন সংবাদটি প্রকাশিত হবে আর কোনটি হবেনা।
আজকে অবাধ স্বাধীনতার নামে কতিপয় সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তি সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাকে কলংকিত করছে। তাদের কারণে সাধারণ মানুষ এখন সাংবাদিকদের আগের মতো সম্মানের চোখে দেখেনা। কবি যথার্থই বলেছিলেন, স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়ে রক্ষা করা বেশী কঠিন।
এখন মালিকপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তের ফলে রাতের আধারে অনেক গুরুত্বপূর্ন সংবাদ ধামাচাপা পড়ে যায়। মালিকপক্ষ তাদের ইচ্ছেমতো মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাদের মধ্যে বেশীরভাগই রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে বলে সংবাদগুলো কেমন জানি পক্ষপাতপুষ্ট ও অনেকটা একপেশে হয়ে যায়।
আবার মালিকদের দোষ দিয়েই বা লাভ কি। তারাতো রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়েই তাদের চ্যানেল অথবা পত্রিকার অনুমতি নিয়ে নেন। আজ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে। দিনটির আগের কয়েকদিনের খবর যদি আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি তাহলে দেখা যাবে, দেশের বিভিন্ন চ্যানেল ও পত্রিকায় কর্মরত অনেককে কোন কারণ ছাড়াই চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই এঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কোন প্রতিকার না থাকায় দিন দিন মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বদলে আজ সাংবাদিকরা দ্বিধা বিভক্ত বলে দেশের আনাচে কানাচে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে আজ সাংবাদিকরা একে অন্যকে ঘায়েল করছে। একপক্ষ যখন সাংবাদিক নির্যাতনের বিপক্ষে রাজপথে নামে তখন আরেকপক্ষ নিশ্চুপ থাকে। বিবৃতি দেয়া অথবা কোন কর্মসূচি দেয়ার আগে দেখে নেয়া হয় নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক। যদি দেখা যায় নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক নিজ দলের তাহলে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো একটা বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন।
আবার যারা সরকার বিরোধী সমর্থক তারা কোন একটু ইস্যু পেলেই রাস্তায় নেমে পড়েন। আসলে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিষয়ে লিখতে গিয়ে হয়তো অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছু লিখে ফেলেছি। কিন্তু একটা কথা সত্যি যদি সাংবাদিকরা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারেন, অর্থের লোভে দালালি ছাড়তে না পারেন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাতির বিবেক সাংবাদিকরা তাঁদের সুখ্যাতি হারিয়ে ফেলবে।
বেলায়েত বাবলু: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।