‘মুক্তবুলি’ লেখালেখির উন্মুক্ত প্লাটফর্ম

রুকাইয়া সুলতানা মুন ।।

লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখার বাইরেও কয়েকটি অনলাইন গ্রুপে নিয়মিত লিখি। বর্তমান সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যুগে অনলাইনে লেখার বড় সুবিধা হলো পাঠকের খুব কাছাকাছি চলে আসা যায়। একজন কবি বা লেখকের লেখা পড়ে পাঠক তার ভালোলাগা-মন্দলাগা কিংবা তার অনুভূতি ব্যক্ত করে সাথে সাথেই মন্তব্য করেন। ফলে লেখক তার লেখার ব্যাপারে অধিক সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে পারেন।

একদিন অনলাইন গ্রুপ পাঠশালায় আমার লেখার নিচে আযাদ আলাউদ্দীন নামে এক ভদ্রলোক কমেন্টে লিখলেন, ‘মুক্তবুলি‘র জন্য লেখা পাঠান‘। কিন্তু যিনি কমেন্ট করেছেন সেই ব্যক্তি এবং মুক্তবুলি দুটো বিষয়েই আমার কোনো ধারনা নেই। আমি মুক্তবলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ভদ্রলোকের ইনবক্সে যোগাযোগ করতে মনস্থ করলাম। তার ইনবক্সে প্রবেশ করে দেখলাম তিনি আগে থেকেই আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন এবং আমাকে মুক্তবুলির ওয়েবসাইটের লিংক ও কয়েকটি অ্যাড ডিজাইন পাঠিয়ে রেখেছিলেন, যা ইতঃপূর্বে কখনো আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। সাধারণত আমি অপরিচিত আইডি থেকে আগত ম্যাসেজ এড়িয়ে চলি। তাই হয়তো তার ম্যাসেজগুলো আমার চোখে পড়েনি। ভাবলাম- আযাদ আলাউদ্দীনের সাথে পরে কথা বলব, আগে ‘মুক্তবুলি‘ ঘেটে দেখা যাক’।

লিংকে ক্লিক করে মুক্তবুলির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলাম। কে জানত সেখানে আমার জন্য আরও বড় চমক অপেক্ষা করছে। দেখলাম মুক্তবুলি হলো আমার প্রাণের শহর বরিশাল থেকে প্রকাশিত একটি দ্বি-মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। খুশিতে মন ভরে গেল। বেশ কয়েকটি লেখা পড়লাম। লেখাগুলো দারুণ এবং মানসমৃদ্ধ।
শেষে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর ও ইমেইল এড্রেস দেওয়া আছে। ফোন করে কথা বলে বুঝতে পারলাম স্বয়ং আযাদ আলাউদ্দীন-ই মুক্তবুলির সম্পাদক। তার বিনীত, মার্জিত, আন্তরিক কথাবার্তায় মুগ্ধ হলাম।

তিনি জানালেন- মুক্তবুলির নভেম্বর-ডিসেম্বর সংখ্যার জন্য আমি চাইলে একটি কবিতা পাঠাতে পারি। সংখ্যাটির শেষ মুহূর্তের এডিটিং চলছে। আমি ‘ফেসবুকের গুষ্টি কিলাই’ শিরোনামে একটি রম্যগল্প লিখে পাঠিয়ে দিলাম। গল্পটি তিনি ছাপলেন এবং আমাকে সৌজন্য কপি পাঠানোর জন্য ঠিকানা চাইলেন। ঠিকানা দেয়ার পরদিন আমার হ্যাজবেন্ডের অফিসের ঠিকানায় কুরিয়ারে মুক্তবুলির পাঁচটি কপি পৌঁছে গেল। বর্তমান সংখ্যার তিন কপি এবং পূর্বে প্রকাশিত ভিন্ন ভিন্ন তিনটি কপি। কপিগুলোর মূল্য পরিশোধ করতে জোরাজুরি করতে হয়েছে। আমি সৌজন্য কপির চেয়ে কিনে নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধকরি। কারণ একটি প্রিন্টেড সাহিত্য পত্রিকার পিছনে সম্পাদকের অনেক সময় শ্রম এবং নিজ পকেটের পয়সা খরচ করতে হয়। যার কাছে এক কপি পত্রিকার আর্থিক মূল্য নিতান্তই তুচ্ছ। কপিগুলো হাতে পেয়ে ধন্যবাদ জানাতে সম্পাদক সাহেবকে ফোন করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- আপা পত্রিকা কেমন হয়েছে? আমি একলাইনে প্রতিউত্তর করে ছিলাম যে, ‘আমার ধারনার চেয়ে অনেক বেশি ভালো হয়েছে’। তিনি তৃপ্তির হাসি হাসলেন।

এর আগে ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মুক্তবুলি অনলাইন ভার্সনে ‘চৌর্যশিল্প’ নামে আমার আরেকটি রম্য গল্প ছাপা হয়। মুক্তবুলি ওয়েবসাইটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- আপনি যদি আপনার পছন্দের লেখকের লেখা পড়তে চান- তাহলে এর ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘তথ্য খুঁজুন’ লিংকে লেখকের নাম লিখে সার্চ দিলে ওই লেখকের সকল লেখা এক জায়গায় চলে আসে। এভাবে আপনি আপনার পছন্দের লেখকদের পুরনো সব লেখাও নতুনভাবে পড়তে পারবেন।

সত্যিকার অর্থে মুক্তবুলি চমৎকার একটি সাহিত্য পত্রিকা। এটি শুধু সাহিত্য পত্রিকাই নয় বরং বরিশালের আঞ্চলিক ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে মুক্তবুলির প্রচ্ছদ, কাগজের মান, ঝকঝকে ছাপার প্রশংসা না করলেই নয়। প্রত্যেকটি প্রচ্ছদ রঙিন, দৃষ্টিনন্দন ও সুন্দর রুচির পরিচয় বহন করে। মুক্তবুলির একেকটি সংখ্যার প্রচ্ছদে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী একেকটি স্থান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

পত্রিকাটির প্রতি সংখ্যায় থাকে মানসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, কবিতা, ভ্রমণ, বিশেষ ব্যক্তিসমূহের জীবনী ও কর্ম, স্মৃতিকথা, সাক্ষাৎকারসহ নিয়মিত অন্যান্য বিভাগ। এখানে লিখতে পারেন ধর্মবর্ণ, দলমত নির্বিশেষে যে কেউ। ‘লেখক যারা, পাঠক তারা’ শ্লোগানে দূর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে পত্রিকাটি। তরুণ ও নবীণ লেখকদের জন্য মুক্তবুলি সাহিত্য চর্চার একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম।

এছাড়াও মুক্তবুলির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে থেকে মাসের সেরা লেখা বাছাই করে লেখকদেরকে আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
সার্বিক বিবেচনায় আমার কাছে ‘মুক্তবুলি’কে বরিশালের আঞ্চলিক সাহিত্য পত্রিকাগুলোর মধ্যে সেরা মনে হয়েছে।

মুক্তবুলির জন্য শুভ কামনা রইল। মুক্তবুলি হয়ে উঠুক সকলের জন্য মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও স্বাধীন বাক প্রকাশের হাতিয়ার। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রে একদিন মুক্তবুলি আঞ্চলিকতার গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম সারির জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে স্থান করে নিবে ইনশাআল্লাহ।

তথ্যসূত্র: মুক্তবুলি ম্যাগাজিন ১৫ তম সংখ্যা। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *