মেঘনায় নাসরিন লঞ্চ ট্রাজেডির ১৮ বছর, থামেনি স্বজনহারাদের কান্না

মোঃ জসিম জনি ।।

৮ জুলাই এমভি নাসরিন ট্রাজেডির ১৮ বছর। ২০০৩ সালের এই দিনে ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে ৪০২ জনের সলিল সমাধি হয়। দেশে নৌ-দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। নাসরিন লঞ্চ ডুবির ১৮ বছর হলেও নিহত পরিবারে কান্না আজো থামেনি। দুর্ঘটনায় অর্ধেকেরও বেশি লাশ পাওয়া যায়নি মেঘনার অতল গহ্বর থেকে। এক পরিবারের ২৬ জন নিয়ে বরযাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠে ২৪ জনকেই হারায় লালমোহন ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের মহেষখালী গ্রামের রিনা বেগম। রিনার সাথে বেঁচে আসে তার ফুফাতো ভাই সোহেল।

স্বজনহারাদের দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত ১৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজো। এ রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চায় নিহত/নিখোঁজ পরিবারের স্বজনরা। নিহত পরিবারের স্বজনদের নিয়ে ২০১৭ সালের ৬ জুলাই ভোলায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। ব্লাস্ট ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও পরিবারের পক্ষে যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করে। দুর্ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিম্ম আদালত ওই মামলার রায় ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্থদের ১৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। রায়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা করে নিহতদের পরিবারকে এবং ১ লক্ষ টাকা আহত ১জনকে প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএসহ বিবাদী লঞ্চ মালিকপক্ষ ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করে। ২০১৭ সালের ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম এবং বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ব্লাস্ট কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় নিম্ম আদালতের রায় বহাল রাখেন। এর ফলে মামলার বাদীভুক্ত ১২১ জন নিহতের স্বজনদের ১৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানে আর কোন বাধা থাকে না। কিন্তু রায়ের পর বিআইডব্লিউটিএ এবং লঞ্চ মালিকপক্ষ কিভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা শোধ করবে তা এখনো স্পস্ট হয়নি। মামলার রায় হতে ১৩ বছর লেগেছে, ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে আরো কত বছর লাগে তা নিয়ে উদ্বিঘ্ন নিহতদের স্বজনরা। তবে নিহত-নিখোঁজদের স্বজনরা দ্রুত উক্ত রায়ের বাস্তবায়ন চান।

মো. জসিম জনি, সাধারণ সম্পাদক, লালমোহন প্রেসক্লাব, ভোলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *