যে পাথর বৃদ্ধি পায়- হাঁটাচলা করে, কী আছে এতে?

বিজ্ঞান ডেস্ক ||

আমরা কথায় কথায় একটি প্রবাদবাক্য বলি, ‘দেয়ালেরও কান আছে’। আচ্ছা কান থাকলে তো প্রাণও থাকার কথা। তেমনই আছে এক ‍পাথর। যেকোনো জীবের মতোই আয়তনে বৃদ্ধি পায় সে, করে হাঁটাচলাও। রোমানিয়ায় প্রত্যন্ত গ্রাম কোসটেসতিতে দেখা মেলে বিস্ময়কর এই পাথরের।
অদ্ভুত বৈশিষ্টের জন্য রোমানিয়ার এই বিশেষ পাথরের পরিচিতি জীবন্ত পাথর নামে। অবশ্য বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটির নাম ‘ট্রোভান্ট’। ১৯৯০ সালের কথা জিওলজিস্ট জি. এম. মার্গোকি প্রথম এই পাথরটির কথা বর্ণনা করেন তার ‘দ্য টার্সিয়ারি ইন ওল্টেনিয়া’ গ্রন্থে। ট্রোভান্ট নামটি তারই দেয়া। তবে তিনিই যে এই পাথরের আবিষ্কর্তা, এমনটা নয়। বহুযুগ আগে থেকেই রোমানিয়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা এই পাথরের দৈবিক ক্ষমতার সম্পর্কে বিশ্বাস করে। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাথরের আয়তন বাড়ার এই বৈশিষ্টটিকে কাজে লাগিয়ে তারা এই পাথর দিয়েই তৈরি করেন বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি।

কিন্তু এমন ভৌতিক ঘটনার কারণ কী? না, ভৌতিক নয়। বরং, এই ঘটনার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে ভৌত বিজ্ঞান। রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ট্রোভান্টের আণবিক গঠনে। মূলত, এই পাথরগুলোর একটি শক্ত কোর থাকে। তার বাইরে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট-সমৃদ্ধ বেলেপাথরের মোটা আস্তরণ থাকে। বৃষ্টির জলের সংস্পর্শে এলেই যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে যায়। বৃদ্ধি পায় আয়তনও। কয়েক মিলিমিটার থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত বড়ো হতে পারে এই ধরনের পাথরের আয়তন। আয়তনে ছোট পাথরও এক হাজার বছরে বৃদ্ধি পেতে পারে ৪-৫ সেন্টিমিটার।

তবে শুধু আয়তন বৃদ্ধিই নয়, একা একা হাঁটাচলাও করতে পারে ট্রোভান্ট। আসলে, জলের সংস্পর্শে এলে পুরো পাথরের বৃদ্ধি হয় না। বরং, তার বিভিন্ন খাঁজ থেকে জন্ম নেয় বাড়তি অংশ। দেখলে মনে হবে, ঠিক যেন ডাল-পালা মেলে ধরছে কোনো বৃক্ষ। এই ধরনের ‘অঙ্গ’-এর বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যই স্থান পরিবর্তন করে ট্রোভান্ট।

গবেষকরা এই বিশেষ অঙ্গগুলো কেটে পরীক্ষা করে দেখতে গিয়েও অবাক হয়েছেন বেশ। তার ভেতরে রয়েছে বেশ কিছু চক্রাকার দাগ। ঠিক যেরকম দেখতে পাওয়া যায় গাছের গুঁড়ি কাটলে। ট্রোভান্টের ভেতরে ঠিক তেমনই ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ এবং ঘনত্বের স্তর সাজানো থাকে। যার কারণ কিংবা ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত দিতে পারেননি গবেষকরা।

ভূতাত্ত্বিকদের অনুমান, ট্রোভান্টের জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে বিশেষ ধরনের লাভা থেকে তৈরি হয়েছিল সেগুলো। তারপর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। কখনও আবার খণ্ডিত হয়ে জন্ম দিয়েছে ছোটো প্রস্তরখণ্ডের। কিন্তু গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এই পাথর আসলে ভিনগ্রহী। সেই লোককথাকেও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। কারণ, কেবলমাত্র রোমানিয়ার এই গ্রাম ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও অস্তিত্ব মেলেনা এই পাথরের। তাই অনেকে মনে করেন, মহাজাগতিক কোনো পদার্থ কিংবা উল্কাপাত থেকেও এই পাথরের জন্ম হতে পারে।

আরো পড়ুন

ভ্রমণ: ভোলা হতে ভোলাগঞ্জ

ড. সাইয়েদ মুজতবা আহমাদ খান ।। বাংলাদেশের অন্যতম পূণ্যভূমি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণের একটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *