Mahmud Eusuf
শিশুদের পৃথিবী ক্রমশ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে আসছে। অতীতে এত বাসাবাড়ি, দালানকোঠা, অফিস আদালত ছিলো না। মাঠের পর মাঠ খালি পড়ে থাকত। শিশু কিশোরদের খেলার জায়গার অভাব ছিলো না। আমরা শৈশব-কৈশোরে যখন সহপাঠী-বন্ধুদের নিয়ে খেলায় মত্ত থাকতাম সেই বয়সের আজকের ছোট্ট শিশুরা মোবাইল কিংবা টেলিভিশন নিয়ে ব্যস্ত। ড্রয়িং রুমে বন্দি আগামী বংশধর। ইহা দেশ-জাতির জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয়। মনোবিকাশ ও স্বাস্থ্য উভয়ের ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। বিকশিত জীবনের জন্য ইহা প্রতিবন্ধক। পরিচ্ছন্ন জীবনের লক্ষ্যে চাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস, সুন্দর পরিবেশ, সুসজ্জিত আঙিনা, খেলার মাঠ ও খেলাধুলা। শিশুদের মোবাইল, ইন্টারনেট, মোবাইল গেমস, ফেসবুক, কম্পিউটার, টিভি থেকে যতদূর সম্ভব দূরে রাখা দরকার। কেউ কেউ এটাকে আধুনিক বা ডিজিটাল বিরোধী বলতে পারেন। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। এগুলো যে শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সেটা তুলে ধরছি। ওইসব ইলেকট্রিক উপকরণ বা ডিভাইসগুলোর ব্যবহারে চোখ, হাত, মেরুদ-, গলা, কাঁধ, কোমর, বাহুর ব্যথা বেদনার প্রধান কারণ। চোখের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে দেয়। মনের উপরও কুপ্রভাব পড়ে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধে। আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। বহু ডাক্তার দেখিয়ে, বহু অর্থ খরচ করেও ব্যথা বেদনা নিরসন হচ্ছে না।
শিশুদের এই গৃহবন্দিত্ব বা জেলখানা থেকে রেহাই দিতে চাইলে বাইরে তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। বানাতে হবে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। পাড়ায় পাড়ায়, অলিগলিতে, প্রতি মহল্লায় ছোটো ছেলেমেয়েদের জন্য খেলার মাঠ বরাদ্দ দিতে হবে। অনেকে মন্তব্য করতে পারেন ইহা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা বলব ইহা খুব বেশি কঠিনও নয়। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং ভূমি দস্যুদের কবলে খোলা জায়গা কমে গেছে। এটা সত্য। কিন্তু একেবারে বিলুপ্ত হয়নি। নগর, শহর, বন্দরে এখনও পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত জমাজমি আছে। সরকার বা প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা ইহা একোয়ার বা খরিদ করে খেলার উপযোগী মাঠ করতে পারেন। তবে সর্বাধিক ভূমিকা থাকতে হবে কাউন্সিলরদের। তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সাথে তাঁদের রিশতা। তারা সবাই জ্ঞাত স্ব স্ব এলকার কোথায় অব্যবহৃত জমি আছে। কাউন্সিলররা উদ্যোগ নিলে এই প্রক্রিয়া সহজেই বাস্তবায়ন সম্ভব। কচিকাঁচা ছোট্ট সোনামনিদের স্বার্থে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ¦ল ভবিষ্যত, মনের বিকাশ, মেধাচর্চা, সুস্বাস্থ্য এবং উন্নত জীবনের জন্য বিষয়টি অতীব জরুরি।