সত্তর বছর আগে বরিশালে একজন নারীর জীবন সংগ্রাম ও আত্মস্মৃতি

বেগম শামসুন্নাহার

(বাঙালি নারী সমাজের অধ্যবসায় এবং ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক বেগম শামসুন্নাহার ১৯৩৫ সালের ১ মার্চ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া গ্রামের আবদুর রব মিয়া (এম এ, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট)র ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা অবিভক্ত বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ অফিসের সুপারেনটেণ্ডেন হওয়ার সুবাদে তার শৈশব কাল কলিকাতায় কেটেছে। সেখানে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর বাবার মৃত্যুর কারণে চাচার তত্ত্বাবধানে খুলনা করো্নেশন বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। এরপর ১৯৪৭এ অষ্টম শ্রেণী পাস করার পর পাশের বাড়ির আকসাব এই মিয়ার পুত্র বজলুল হক মিয়া (এম এ বি টি)র সাথে বিয়ে হয়। জ্ঞান তাপস স্বামীর সংসারে এসে যথারীতি দু’বছরের মাথায় ১৯৪৯ সনে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনিয়মিত হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। এর আট বছর পরে ১৯৫৭ সালে বরিশালে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা হলে শিক্ষক স্বামীর আগ্রহ ও অনুপ্রেরণায় তিনি সেই কলেজে প্রথম ব্যাচের ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হন এবং ১৯৬৯ সালে সাতটি সন্তান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ১৯৬৩ সালে বরিশাল সদর গার্লস স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বরিশাল মহিলা কলেজ থেকে বি এ পাস করেন। তখন তিনি দশ সন্তানের জননী। ১৯৬৭ সনে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে নবম স্হান অধিকার করে বি এড পাস করেন। ১৯৬৯ সালে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পদক পান। ১৯৯১-১৯৯২ এ তিনি যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত এবং তিন বার এই এসোসিয়েশনের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি এই এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন এবং গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন থেকে মেডেল অব ম্যারিট পদক লাভ করেন। ১৯৯৭-‘৯৮ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল শাখায় বি এড ক্লাসের বাংলা বিষয়ের টিউটর এবং প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর নারী সমাজের আদর্শ এই কর্মযোগী নারী বার্ধক্যজনীত কারণে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। এই স্মৃতিচারণে তাঁর ব্যক্তি ও শিক্ষাজীবনে বেগম রোকেয়ার নারী শিক্ষাদর্শ ও সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের প্রভাব প্রতিক্রিয়া তুলে ধরার চেষ্টা করছি।)

ডিসেম্বর মাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মহান মাস। আনন্দ-বেদনার স্মৃতি বিজড়িত মাস। এই মাসে আমরা যেমন হারিয়েছি বহু তরতাজা বিদগ্ধ প্রাণ তেমনি বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করেছি বিজয়ের লাল সবুজ পতাকা। এর পাশাপাশি এ মাসটিতে মনে পরে আর এক মহীয়সী রমণীর কথা। যিনি বাংলার মুসলিম নারীকুলের অন্ধকার ঘন দিনগুলোতে একটি জ্ঞানের প্রদীপ হাতে নিয়ে তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে, তাদের ভেতরকার অন্ধকার দূর করার সংগ্রামে ব্রতী হয়েছিলেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আশাকরি, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে এই আত্মত্যাগী মহিলাটি হচ্ছেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত। যিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান, নিজেই একটি সংগ্রাম। এই মহীয়সী মহিলাকে চোখে দেখার সৌভাগ্য না হলেও তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আজ এতদিন পর আমার ছোট মেয়ে বেগম ফয়জুন নাহার শেলীর অনুরোধ ও অনুপ্রেরণায় সেই সুখময় দিনগুলোর স্মৃতি চারণে ব্রতী হলাম।

তখন আমি খুব ছোট। আমার আব্বা মোহাম্মদ আবদুর রব মিয়া (এম এ ফার্সি, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, গোল্ড মেডেলিস্ট)  অবিভক্ত বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ অফিসের অফিস সুপারেনটেনডেন্ট ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই কলিকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ তার অফিস ছিল। তাই মূলত খোদ বরিশালের মেয়ে হলেও আব্বার চাকুরীর সুবাদে ছোটবেলা বলতে গেলে জন্ম থেকেই আমরা কলিকাতায় বেড়ে উঠেছি। ছোটবেলায় যে স্কুলটিতে আমার হাতে খড়ি হয়েছিল সে নামটি আজ আর মনে পড়ছে না। তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কলিকাতায় বম্বিং হয়ে যাওয়া কিছুদিন পর সঠিক কোন তারিখটি মনে নেই তবে আমার বয়স দশ কি এগারো হবে, তখন রাঙা কাকার হাত ধরে যে স্কুলটিতে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম তার নাম সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল।

সে দিনের কথা বেশ মনে পড়ে। বাউন্ডারি ঘেরা বিশাল একটা গেটের সাথেই মাঠ। সেখান দিয়ে বেশ কিছুটা পথে এগিয়ে বসতবাড়ির মতো দেখতে একটি দোতলা বাড়িতে ঢুকলাম। সেখানে একটি ছোট্ট রুমে বসলাম। চারিদিক নীরব নিস্তব্ধ । একটি প্রাণী আছে বলে মনে হলো না । অথচ তখন এই দালানেই ক্লাস চলছিল । রাঙা কাকা আমাকে সেখানে ক্লাস গ এ ভর্তি করিয়ে দিয়ে এলেন। আজ বার্ধক্যের কোটায় সেই স্মৃতির পাতা উল্টাতে গিয়ে মনে পরে কি পেয়েছি ? কতটুকু পেয়েছি ? আমার যেন মনে হয় জীবনে যা কিছু পেয়েছি শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা এমনকি সৌজন্যবোধ, সবকিছুই যেন আমার শৈশবের এই বিদ্যানিকেতনটির দান।

মনে পড়ে, সেই কালো পর্দা ঘেরা বাসটির কথা। যে বাসটিতে করে আমরা স্কুলে যাওয়া আসা করতাম। সেই বাসে দেখাশোনার জন্য আমাদের একজন আয়া থাকতেন। তাকে আমরা ‘মামা’ ডাকতাম। তাকে ভয় পেতাম বাঘের মতো। কালো পর্দা ঘেরা এই বাসটির কথা বর্তমান যুগের মেয়েরা কল্পনাও করতে পারবে না। কি অন্ধকার ঘন পরিবেশ ! তার মাঝে পর্দা ফাঁক করে যে একটু দেখব কোথায় যাচ্ছি ? কলিকাতা শহরটি কেমন? তা দেখা তো দুরের কথা, মনে মনে ইচ্ছা পোষণের সাহসও আমাদের ছিল না।

ছাত্রীসংখ্যা গাড়ির তুলনায় বেশি হওয়ায় এক একটি গাড়ি তিনটি ট্রিপ করে আমাদের আনা-নেওয়া করতো। আর এতে করে কখনও কখনও স্কুল শেষে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। কাজেই দুপুরে খাওয়ার জন্য ছোট্ট একটা টিফিন ক্যারিয়ারে করে আমরা সবাই খাবার নিয়ে যেতাম। তবে এই কেরিয়ারটি টানাটানির ব্যাপারে আমাদের তেমন কোন মাথাব্যথা বা ঝামেলা ছিল না। মামাই ও কাজটি আঞ্জাম দিতেন। কিন্তু একটা ব্যাপারে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হতো। সেটা হল ইউনিফর্ম । যতদূর মনে পড়ে স্কুলের পোশাক কি ছিল সাদা। পিন আপ করা ওড়না । মাথায় রুমান। চুলবাধা। খোলা চুলে স্কুলে ঢোকা যাবে না ।পায়ে কেটস বা বন্ধ জুতো। স্লিপার নিষেধ।

স্কুলের ক্লাস রুমগুলো ডেস্ক দিয়ে সাজানো। প্রতি ছাত্রীর জন্য একটি করে ডেস্ক বরাদ্দ । ক্লাসের ছাত্রী সংখ্যা ৩০ জন। সাধারণত জ্যেষ্ঠ ছাত্রী ক্লাস মনিট্রেস হত। তার দায়িত্ব ছিল অনেক । ক্লাসের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মেয়েদের চুল বাধার, পোশাকের পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া, বাড়ির কাজ সংগ্রহ করে টেবিলে রাখা, খাতা দেখা হলে সেগুলো আবার যার যার কাছে পৌঁছে দেয়া।

আমাদের ক্লাসটি ছিল সিঁড়ির গোড়ায় নিচের তলায়। অন্য ক্লাসগুলো কোথায় কি ছিলো আমার অতটা মনে নেই । ক্লাস শুরুর ঘন্টা পড়ার সাথে সাথেই সবাই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে যেতাম । সেখানে একটা বড় হল রুম ছিল । ওখানে অ্যাসেম্বলি হত । এখানে একটা কথা বলা দরকার। অ্যাসেম্বলি হত দু’বার । ক্লাস শুরুর সময় এবং শেষে। যেদিন বাংলা প্রার্থনা দিয়ে ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হতো সে দিন শেষে প্রার্থনাটি হত উর্দূতে। বাংলায় আমরা যে প্রার্থনাটি করতাম তাহলো, হে খোদা দয়াময় রহমান রহিম, হে মহান, হে অনন্ত অসীম। নিখিল ধরণীর তুমি অধিপতি । তুমি নিত্য ও সত্য পবিত্র অতি। তুমি মুক্ত স্বাধীন, বাধা বন্ধনহীন। তুমি এক, তুমি অদ্বিতীয় চিরদিন ——আমি চাইনা বিচার হাশরের দিন, চাই করুণা তোমার ওগো হাকিম। আর উর্দু প্রার্থনাটি যতদূর মনে পড়ে এমন- (অবশ্য আমি নিশ্চিত যে এতে অনেক ভুল হবে, তবু বলছি) দাস্তে কুদরত মেরে মওলা তু নুমায়া কারিদে। ওয়াতানে পাকি কো জান্নাতকা খায়াবা কারিদে। আমানে মেরে মোহাব্বাত ছে তু ভারি দে দুনিয়া। আম এ মুসলিম পে তু ফির বালিসে এহসান কারি দে।

একটা কথা বলা হয়নি। আমরা বিদ্যালয়ে দু’দল  ছাত্রী ছিলাম। একদল উর্দু আরেক দল বাংলা। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ও অংক ছাড়া বাকি ক্লাসগুলো ভাগ হয়ে করতে হতো। আর অংকটা সবাইকেই ইংরেজিতে করতে হতো। অবশ্য সপ্তম শ্রেণী থেকে পড়ার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। অ্যাসেমব্লির পর আবার আমরা ক্লাসে ফিরে যেতাম । উপর-নিচ করার সময় পায়ের কোন শব্দ হবার উপায় ছিল না । শুধু কি তাই- সিঁড়িতে উঠা নামার সময় বা দিক দিয়ে চলাফেরা করতে হতো। আর এ ব্যাপারে ভুল হলে ছোটদেরও শুধরে দেবার অধিকার ছিল । পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে ওঠানামা করতে হতো। নিরব নিস্তব্ধ সব খালি ক্লাসে এসে ঢুকতাম। যখন যে পিরিয়ড ডেস্কের উপর শুধু সেই প্রিয়ডের বই খাতাটি থাকত। বাকিগুলো ভেতরে। ডেস্ক থেকে বই খাতা তোলার সময় কোন শব্দ করার জো টি নেই। শিক্ষক কোনদিন ক্লাসে দেরিতে ঢুকেছেন বলে আমার মনে পড়েনা । ক্লাসে শিক্ষকের আসা-যাওয়া এতই নীরব ছিল যে, তিনি কখন ক্লাসে ঢুকতেন তা বোঝার উপায় ছিল না। এই নিরবতা এই নিস্তব্ধতা প্রথম প্রথম আমার কাছে কেমন যেন ভয় ভয় লাগত। রাঙা কাকাকে অভিযোগ করতাম, ‘তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে? কেমন যেন ভুতুড়ে, ভয় ভয় করে আমার’। পরে অবশ্য যে সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম তাই নয় ভালোই লাগতো।

আরো একটি কথা বলা হয়নি। তা হলো, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী তিনটে হাউসে ভাগ করা ছিল। জন- অব- আর্ক,  মাদাম কুরি ও হালিদা হানস। হাউসগুলো আবার লাল, সবুজ ও বেগুনি -এই তিন রঙের চিহ্নিত ছিল। তবে কোন হাউজের কোন রং তা আজ আর বলতে পারছিনা। আর শুরুতেই যে ব্যাজের কথা বলছিলাম, তা হলো সেই হাউস ব্যাজ। শ্রেষ্ঠ হাউজের জন্য বছর শেষে পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল।

প্রথম দু’ প্রিয়ড পর দশ মিনিটের একটি বিরোতি ঘন্টা পড়তো। তখন ক্লাস থেকে বাইরে এসে দলে দলে ভাগ হয়ে মাঠে গল্প করতে বসতাম। চিনাবাদাম খেতাম। তবে বাদামের একটা খোসাও মাটিতে ফেলার উপায় ছিল না। সবকিছু কাগজে রেখে মাঠের পাশে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে আসতে হতো । এই অবসরে কেউ কেউ আবার তাদের ভেজা চুল শুকিয়ে নিত। দ্বিতীয় বিরতির সময় একটু বেশি ছিল। এই বিরতির ঘন্টাটি পড়ার সাথে সাথে লাইন করে সারিবদ্ধ ভাবে আমরা কলের কাছে এসে যেতাম এবং অজু করে ফিরে আসতাম দোতালায় নামাজ ঘরে। সেখানে পাশেই নবম শ্রেণী অথবা দশম শ্রেণীর একজন ছাত্রী আমাদের উপস্থিতির হিসাব নিতেন। অনুপস্থিত থাকলে তার জবাবদিহি করতে হতো। নামাজ শেষে চলে যেতাম খাবার ঘরে। খাবারের জন্য আলাদা একটা একতলা ঘর ছিল। সেখানে দু সারি খাবার টেবিল এবং দুপাশে বেঞ্চ বসানোর থাকতো। সেখানে আমাদের টিফিন ক্যারিয়ারগুলো সুন্দর করে একটার পর একটা সাজানো থাকতো। আমরা যার যার টিফিন ক্যারিয়ারের সামনে খেতে বসতাম। তবে এখানেও নিয়ম। খেতে বসার আগে জুতো খুলে, মাথায় কাপড় দিয়ে খেতে বসতে হতো। খাবার শেষে টিফিন ক্যারিয়ারগুলো সেখানেই রেখে আসতাম। বাড়ি ফেরার সময় ‘মামা’ আমাদের যার যার ঘরে ওগুলো পৌঁছে দিতেন। আজ ভাবতে অবাক লাগে এতগুলো টিফিন ক্যারিয়ার উনি কি করে ঠিক ঠিক মত পৌঁছে দিতেন।

আব্বার অকাল মৃত্যুতে দু’বছর বাদে খুলনায় চলে আসি। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের সেই সুখময় স্মৃতি যা আমার চলার পথকে মসৃণ করে দিয়েছে, আমাকে শিখিয়েছে সংসারে আদর্শ কন্যা- জায়া-জননী আর কর্মক্ষেত্রে আদর্শ কর্মী হতে আজ বার্ধক্যের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে দেখি ওইটুকু বয়সে যা শিখেছিলাম আজও তার চেয়ে বেশি কিছু শিখেছি বলে মনে হয় না ।

বেগম শামসুন্নাহার সাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষক, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বরিশাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *