সাব্বির আলম বাবু
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাবলম্বী হতে শিখেছেন। তারা এখন আর অবলা নয়। ঘর সংসারের গন্ডি পেরিয়ে তারা এখন নিজস্ব কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি তথা নিজের অধিকার অর্জন করে নিজের পায়ে দাড়াতে শিখেছে। নারীর পায়ের শিকল আর পরাধীনতার নাগপাশ এখন কেবল অতীত।
নারীদের কর্মক্ষেত্রের অন্যতম অবলম্বন নকসীকাঁথা। তরুনী, অর্ধ শিক্ষিত, স্বামী পরিত্যাক্তা ও প্রতিবন্ধি নারীরা এই পেশার সাথে বেশী জড়িত হচ্ছেন। দারিদ্রতার কারনে বেশীদূর এগোয়নি তাদের শিক্ষার গন্ডি। অনেকটা পরিবারের বোঝা হয়েই দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু সুঁইয়ের ফোঁড়ের কল্যাণে পাল্টে গেছে তাদের জীবনের রং। এখন আর বোঝা নয় বরং নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারকে সহযোগীতা করে কাটছে তাদের বর্তমান সময় ও জীবন। এমন পরির্বতনে ভাগ্য বদলে দিয়েছে সুই আর সুতার যাদুকরী মিলনে তৈরী হওয়া বাহারী নকশীকাঁথা।
কোমল হাতের ছোঁয়ায় আর মননের মিশেলে গ্রামীণ পটভূমির নারীরা নকশিকাঁথায় ফুটিয়ে তোলেন মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত প্রেম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ফুল, পাখিসহ নানা আল্পনার তৈরির মাধ্যমে। ভোলার লালমোহনের শারীরিক প্রতিবন্ধি জেসমিন বেগম এ ধরনের স্বাবলম্বীতার বাস্তব দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, আল্লাহ অসুখ দিয়েছেন, কিন্তু তাই বলে আমি পরিবারের ও সমাজের জন্য বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমি কাজ করে, পরিশ্রম করে বেঁচে থাকতে চাই এই সুন্দর পৃথিবীতে। আর তাই মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন নকশীকাঁথা আর শাড়ীতে আল্পনা সেলাই করছি। মোটামুটি ভালোই অর্ডার পাচ্ছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুব মনযোগ সহকারে বিভিন্ন বয়সের নারীরা সুঁই আর সুতার কাজ করছেন। সুতা আর সুঁইয়ের কারুকার্যময় কাপড় বুননের নানা উপকরণ নিয়ে চলছে তাদের কর্মব্যস্ততা। যেন সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফোঁড়ে এক একজন নারী তার নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন বুনন করে চলছেন। রাবেয়া, রোজিনা, সালমাসহ একাধিক দরিদ্র কিশোরী জানায়, আগে ঘরে বসে অলস সময় কাটাতাম কিন্তু এখন ঘরে বসে টাকা আয় করছি এবং পরিবারের দারিদ্রতা ঘোচানোর চেষ্ট করছি।
কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা অথবা বিসিক যদি এই রকম সেলাইয়ের কাজ, এমব্রোয়ডারির কাজের ব্যাপারে আমাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি বাজারজাত করনের কৌশল শেখাতো তাহলে নারীরা বেকার না থেকে এই কুটির শিল্পের পেশার সাথে জড়িত হয়ে দেশের অর্থনীতি ও নিজের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে গ্রামীণ এই বিশাল নারী গোষ্ঠীকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে পর্যাপ্ত কোন ব্যবস্থা নেই।
সাব্বির আলম বাবু
লালমোহন, ভোলা
০১৭১৬২৯৪৪১০