সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল

দেশের একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই তাঁর রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। এর বাইরেও তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তা।মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টর কমান্ডার তিনি। পরবর্তীতে মেজর এম এ জলিল নামেই সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেন। বরিশাল জেলার উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের জন্ম ।

সংক্ষিপ্ত জীবনী :

নাম: মোহাম্মদ আব্দুল জলিল
পিতার নাম: জোনাব আলী চৌধুরী
মাতার নাম: রাবেয়া খাতুন
জন্মতারিখ: ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি
জন্মস্থান: বরিশালের উজিরপুরে নানার বাড়িতে

পরিবার-পরিজন:
১৯৮২ সালে টাঙ্গাইলের সায়মার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন মেজর জলিল। মেজর জলিলের দুই মেয়ে ব্যারিস্টার সারাহ জলিল ও ফারাহ জলিল। স্ত্রী সায়মা জলিল রাজনীতির সাথে জড়িত।

পড়াশুনা:
উজিরপুর ডব্লিউবি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাশ। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের মারি ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে আই.এ. পাস করেন তিনি। পাশাপাশি গ্রহণ করেন সামরিক শিক্ষা। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। পরে মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ইতিহাসে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।

সামরিক কর্মকান্ড :
১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় তিনি বি.এ. পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং ১২নং ট্যাঙ্ক ক্যাভারলি রেজিমেন্ট অফিসার হিসেবে তত্‍কালীন পাক-ভারত যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং মার্চে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি নবম সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন।


রাজনৈতিক কর্মকান্ড :
১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন এ দলেন যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর নেতৃত্বে জাসদ দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। সরকারবিরোধী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সক্রিয়। মেজর জলিল ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন ঘেরাও অভিযানকালে তিনি গ্রেফতার হন। পরে ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর মুক্তি লাভ করেন। সামরিক সরকার কর্তৃক ২৫ নভেম্বর পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই আদালতের দেয়া রায়ে তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন। ১৯৮০ সালের ২৪ মার্চ তিনি মুক্তি লাভ করেন। মেজর জলিল ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি দল গঠন করেন।

গ্রন্থ:
সীমাহীন সমর (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯), Bangladesh Nationalist Movement for Unity: A Historical Necessity.

মৃত্যু:
১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন। পরে ২২ নভেম্বর তার মৃতদেহ ঢাকায় আনা হয় এবং সামরিক মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৭ বছর।

 

তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া, স্বাধীনতাযুদ্বের দলিলপত্র-১০ম খন্ড, সীমাহীন সমর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *