আমার কোয়ারেন্টাইন

কামরুন নাহার আঁখি

রোজ যখন আমার কবুতরগুলোকে খাবার দেই…কতকগুলো চড়ুই এসে ওদের খাবারে ভাগ বসায়। ভাবলাম এদেরকে একটা বাসা করে দিলে কেমন হয়!
যেই ভাবা সেই কাজ….. একটা বাসা করে উঠোনের পাশে ছোট্ট জাম গাছে বেঁধে দেয়া হলো… কিছু দিন পর দেখা গেলো… চড়ুই এসে ঘরটা ভালো করে পরীক্ষা করলো এবং চলেও গেলো, এভাবে কাটলো বেশ কিছুদিন, আমি রোজ খেয়াল করি আর হতাশ হই, বাসার সবাই বললো মানুষের এতো কাছে কি এরা ঘর নেয়? ওরা আসবে না। একটা সময় আমাকেও মানতে হলো…. কি আর করা। ভাবলাম আম গাছে বেঁধে দেই। এটা নিরিবিলি এবং একটু দূরে… বাসাটি খেয়াল করতে দেখলাম, ওর ভিতরে যে নারিকেলের ছোবড়া গুলো দিয়েছিলাম সেগুলো এলোমেলো আমি যেমনটা রেখেছিলাম তেমনটা নেই, সন্ধ্যায় আমার ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে দেখালো গাছের ডালে তিনটি দোয়েল! ছোট ভাই বলে উঠলো দুদিন ধরে চারটি দোয়েল নাকি ঘোরাঘুরি করে, সবাই মিলে খেয়াল করতে থাকলাম….

মনে প্রশ্ন, আসলেই কি দোয়েল বাসাটি নিবে? মানুষের এতো কাছে বাসা নিতে চড়ুই কে দেখা যায়! দোয়েলকে তো দেখিনি কখনো! আজ সকালে আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে ডিম পেড়েছে দোয়েল। তাই আজ অনেক খুশি, এতোটা একা নিতে পারছি না তাই সবার সাথে ভাগ করতে মন চাইলো! চড়ুই গুলো দোয়েলদের কে হিংসে করে এখন… ওদের জন্যও আরো পাঁচটি ঘর বেধে দেয়া হয়েছে গাছের ডালে, দেখা যাক কি হয়….

দুটো বুলবুলি আর দুটো ফিঙে এসে মাঝে মাঝে ঘুরে ফিরে যায়, দুটো হলুদ পাখি ইস্টিকুটুম ডাকে বাড়ি মাথায় তোলে, কিছুদিন ধরে দুটো ঘুঘু পাখি কে আসতে দেখছি, তবে ওরা গাছের সব থেকে উচু ডালটায় এসে বসে, ঘুঘুর ডাকটা আমার অপরিচিত ছিল এখন এটাও জানা হলো… কোকিলও এসে ডাকাডাকি করে প্রায় রোজই….তবে ঘরবাড়ি নিয়ে ওদের কোন আগ্রহ নেই, নতুন কোন প্রতিবেশী আসলো কি গেলো এ নিয়ে আমার কবুতরদের কিন্তু কোন মাথা ব্যাথা নেই, ওরা সবসময় নিজেদের পারিবারিক কলহ নিয়েই ব্যাস্ত!

দোয়েলরা সুযোগ পেলেই চড়ুইদের তাড়ায়… কিন্তু তাতে কি? ওরা আসা কেন বন্ধ করবে? এ বাড়িতে যে ওদের অধিকার বেশি…. কারণ ওরা তো এখানে আগে এসেছে! তাই ওরাও ভাগ ছাড়তে নারাজ, এগুলো নিয়েই হয়তো ওদের ভিতর গোলটা বাঁধে! এখন সকাল-সন্ধ্যায় দোয়েলের শিসে বাড়ি মুখরিত। ওদের ঝগড়াঝাটি আর তালবাহানা দেখতে দেখতে কাটে আমার কোয়ারেন্টাইন! আর আছে আমার কতোগুলো হাঁস….

কিছু শাক শবজি লাগানো হয়েছে ওগুলো নষ্ট করার ধান্দায় হাঁসগুলো ব্যাস্ত আর আমরা লাঠি নিয়ে ওদের পিছু পিছু… অনেকটা এই সময়ের পুলিশ আর পথচারী চোর পুলিশ খেলার মতো! আর আছে কিছু দুষ্টু, বজ্জাত, পাজি কাঠবিড়ালী। ফাজিলগুলো আমাদের গাছের পেপে, ডালিম, কলা আর পেয়ারা নষ্ট করায় বেশ পটু। কোন খাবার রোদে শুকোতে দিলে ওরা সেটা চুরি করবেই। এইসব কিছু নিয়েই কাটে আমার সারাদিন সারাবেলা। আমার কোয়ারেন্টাইন।

২ comments

  1. বাহ্। ভালবাসার দান, করিতে সম্মান, বাঁচান কত প্রাণ। কোয়ারেন্টাই আশিস্ ঝরে হইতে আসমান।
    আমাদের বাস এক কংক্রিটের জঙ্গলে।
    সম্বল শুধু প্রার্থনা,
    জীবন চলুক কর্মে ধর্মে সবাকার মঙ্গলে।
    🙏

  2. বাহ্। ভালবাসার দান, করিতে সম্মান, বাঁচান কত প্রাণ। কোয়ারেন্টাই আশিস্ ঝরে হইতে আসমান।
    আমাদের বাস এক কংক্রিটের জঙ্গলে।
    সম্বল শুধু প্রার্থনা,
    জীবন চলুক কর্মে ধর্মে সবাকার মঙ্গলে।
    🙏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *