কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পূর্ব বাংলার সকল উন্নয়ন, অগ্রগতির বিরোধী ছিলেন। তার চিরকালীন অবস্থান বাংলাদেশের বিপক্ষে। এখানকার জনগোষ্ঠী তাঁর কাছে ক্রীতদাস হিসেবে বিবেচ্য। তিনি আমৃত্যু চেয়েছেন বাংলাদেশের মানুষেরা তার গোলাম হিসেবে থাক। এখানকার বাঙালিরা যাতে শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য তার প্রচেষ্টার অন্ত ছিলো না। সাম্প্রতিক সময়ে রবিন্দ্রভক্ত ও রবিন্দ্রপুজারীরা বলতে শুরু করেছে রবিন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কায়েমের বিরোধীতা করে নাই। আমরা এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করব।

১.
সরকার শাহাবুদ্দীন আহমেদ: ঐতিহাসিক সরকার শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ‘১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ তিনি ছিলেন জমিদার। তিনি মুসলমান প্রজাদের মনে করতেন লাইভস্টক বা গৃহপালিত পশু।’ [ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র-নজরুল চরিত, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ সোসাইটি ঢাকা, জুলাই ১৯৯৮, পৃ ২৩]

২.
প্রফেসর মোঃ মোসলেম উদ্দীন সিকদার: ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মোঃ মোসলেম উদ্দীন সিকদার লিখেছেন, ‘বৃটিশ সরকার কর্তৃক ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট ও জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে প্রতিবাদ সভা করল বর্ণহিন্দুরা। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এই প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঐ সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখার্জির নেতৃত্বে বাংলার লাট সাহেবকে ১৮ বার স্মারক লিপিসহ বাংলার এলিটগণ সাক্ষাৎকার দিয়েও যখান ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ঠেকানো গেল না তখন হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা উহাকে ‘‘মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়’’ বলে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলো। যদিও দীর্ঘদিন পর্যন্ত উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলার থেকে শুরু করে অধিকাংশ শিক্ষকম-লী ছিলেন হিন্দু।’ [সাম্প্রদায়িক রাজনীতি: প্রেক্ষিত বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫-১৯৪৭) অগ্রপথিক, আগস্ট ২০১৬, পৃ ৬৩]

৩.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় শুধু কঠোরভাবে বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি ব্রিটিশদের সাথে রীতিমতো দেন-দরবার করেছিলেন যাতে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় না করা হয়। সেসময় রবীন্দ্রনাথ এক অনুষ্ঠানে দাম্ভিকতার সাথে বলেছিলেন “মূর্খের দেশে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়, তারাতো ঠিকমতো কথাই বলতে জানেনা!” অন্যত্র এক অনুষ্ঠানে এদেশের মানুষকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করে রবী ঠাকুর বলেছিলেন “সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি”। অথচ সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন, মৃত্যুদিন, সাহিত্য উৎসবসহ আরো অনেক অায়োজন ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। [banglamail71,  January 23, 2018]

৪.
ইবনে সাঈজউদ্দীন: কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী রচিয়তা গবেষক ইবনে সাঈজউদ্দীন লিখেছেন, ‘১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় তার সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’ [রবীন্দ্রনাথ এবং আমরা, প্রফেসরস পাবলিকেশনস ঢাকা, একুশে বইমেলা ২০০৩, পৃ ৭৭]

৫.
আলী নিয়ামত লিখেছেন– ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, ড. রাসবিহারী ঘোষ, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ।[দৈনিক সংবাদ , ১ জুলাই ২০১১]

৬.
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।[২৫ বৈশাখ এনটিভিতে, ২০১১]

৭.
ফাহমিদ-উর-রহমান: বিখ্যাত গবেষক ও গ্রন্থকার ফাহমিদ-উর-রহমান বলেছেন, ‘… এই কারণেই হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় কবির চূড়ান্ত বিরোধীতাও লক্ষণীয়। কবির এই বিরোধীতাও কি তার মজ্জাগত মুসলমান বিদ্বেষ থেকে পাওয়া, যা তিনি ঠাকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতোই উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করেছিলেন?’ [রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতা, বুক মাস্টার, নয়াপল্টন ঢাকা, জুলাই ২০১৫, পৃ ৬১]

৮.
মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন, বীরপ্রতীক, পিএসসি: তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম এ মতিন জানান , ”১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়।” [বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দি ইউনিভার্সেল একাডেমি, বাংলাবাজার ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১৭, পৃ ১৬৪]

৯.
অধ্যাপক আবু জাফর: বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার আবু জাফর বলেন, ‘ … চাষা-ভূষাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা যে-কত অবিজ্ঞোচিত, এ-নিয়ে কলকাতা গড়ের মাঠে আয়োজিত প্রতিবাদ সভার পুরোহিতরূপে সে-প্রমাণ রবীন্দ্রনাথ রেখেছেন। আফসোস, এই রবীন্দ্রনাথও আজ আমাদের অনুসরণযোগ্য আদর্শ মহাপুরুষ! [পালাবদল, আগস্ট ২য় পক্ষ, ২০০০]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছবির ফলাফল

১০.
এরশাদ মজুমদার: প্রখ্যাত কবি ও লেখক এরশাদ মজুমদার লিখেছেন, ‘১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। কারণ তিনি ছিলেন জমিদার। তিনি মুসলমান প্রজাদের মনে করতেন লাইভ স্টক বা গৃহপালিত পশু’( শ্রী নীরদ চৌধুরী, দি অটোবায়োগ্রাফী অব এ্যান আননোন ইন্ডিয়ান)।
১৯১২ সালে ১৬ই ফেব্রুয়ারী বড় লাটের সাথে বর্ধমানের স্যার রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিমন্ডলী সাক্ষাত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্ঠা না করার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন।( রিপোর্ট অব দি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি কমিশন) আরও বহু রেফারেন্স আমার কাছে আছে। যাঁরা বলেন, কবিগুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্ঠার বিরোধিতা করেন নি তাঁরা কবিগুরুর জীবনী সম্পর্কে ভাল করে ওয়াকিবহাল নন।

১১.
প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ এক প্রবন্ধে লিখেছেন: কবি রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাতে প্রতিষ্ঠা না হয় সেজন্য ৪২ বার বৃটিশ সরকারের কাছে টেলিগ্রাম পাঠান।

 

১২.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্ববরেণ্য প্রাণীবিজ্ঞানী ড. কাজী জাকের হোসেন বলেছেন- কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম ১ নম্বরে ছিলো যে ২২ জন পণ্ডিত ঢা. বি. প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় গড়ের মাঠে যে প্রতিবাদ সভা হয় তাতে তিনি সভাপতিত্ব করেন। (প্রফেসর ড. কাজী জাকের হোসেন, দৈনিক ইনকিলাব 10 মার্চ 2002)

১৩.
উইকিপিডিয়া: বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘজীবী লেখক নীরদচন্দ্র চৌধুরী তার বইয়ে উল্লেখ করেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুধিতা করেন। উল্লেখ্য যে নীরদচন্দ্র চৌধুরীর জন্ম ১৮৯৭ সালে এবং মৃত্যু ১৯৯৯ সালে। তাঁর জন্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর আগে।
নীরদচন্দ্র চৌধুরী ছাড়াও আরও অনেকে তাদের বইয়ে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুধিতা করেন।।
১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে একটি সভা ডাকা হয়। যার সভাপতি ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ তিনি ছিলেন জমিদার। [সূত্রঃ দি অটোবায়োগ্রাফি অব আননোন ইন্ডিয়া- নীরদচন্দ্র চৌধুরী]
১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার বিরুদ্ধে একটি সভা হয়। যার সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার দুদিন আগে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়া যাবেনা। [সূত্রঃ কলকাতা ইতিহাসের দিনলিপি – ড. নীরদ বরণ হাজরা, ২য় খন্ড, ৪র্থ পর্ব।]
” তাহলে কি রবীন্দ্রনাথ চায়নি তার জমিদারির অন্তর্ভূক্ত বাঙ্গালি সন্তানেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো পেয়ে ধন্য হোক…
বলতে আরও লজ্জা হয় যে সে সময়কার ভাইসরয় লর্ড হার্ডিন্জ্ঞ কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করার জন্য ১৮ বার স্মারকলিপি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়। তারা এতটা নিচে নেমে ছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে বিদ্রুপ করে বলত মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়।” সূত্রঃ জীবনের স্মৃতিদ্বীপে – ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার [রবীন্দ্রনাথ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মুক্তবিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া, সংগৃহীত: ১২.০৬.২০১৮]

One comment

  1. কিন্তু রবীন্দ্রবাদীরা চ্যালেঞ্জ করে বলছেন যে, নীরদচন্দ্র চৌধুরী দি অটোবায়োগ্রাফি অব আননোন ইন্ডিয়া গ্রন্থে ঐ তথ্য নেই! তারা তন্নতন্ন করে খুঁজেও তা পাননি।!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *