কুকরি-মুকরি ও তাড়ুয়া দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

ফিরোজ মাহমুদ

সাত ফেব্রুয়ারি-২০২০। শুক্রবার সকাল সাতটা তায়েফ তালুকদারের ফোন। আপনি কি রেডি? বলতে না বলতেই রিকশা নিয়ে দরজায় হাজির। এদিকে নুরুজ্জামান ভাইর ফোন। আপনি কতদূর এসেছেন। যেন সবার মধ্যেই কিছুটা আনন্দ আবার ভয় মিশ্রিত হতাশাও। অবশ্য এ উৎকন্ঠার কারণটা কিছুক্ষণ পর থেকেই হাড়ে- হাড়ে টের পেয়েছি। বলছিলাম ঐতিহ্যবাহী বোরহানউদ্দিন প্রেসক্লাবের ১৭তম দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল এবং আনন্দ ভ্রমণের কথা।
এবারের ভ্রমণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণের সমুদ্র সৈকত তাড়ুয়া দ্বীপ এবং কুকরী-মুকরী। ভোলা সদর থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার এবং বোরহানউদ্দিন থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পাকা সড়কের পর পনের কিলোমিটার নৌ পথ পেরিয়ে তাড়ুয়া দ্বীপে পৌঁছতে হয়। মেঘনা নদীর বুক চিরে জেগে উঠা ঢালচরের দক্ষিণ সীমান্তে এটি অবস্থিত। এ দ্বীপের দক্ষিণেই বঙ্গোপসাগর।
সকাল সাড়ে সাতটার পূর্বেই কুনজেরহাট মদিনা হোটেলের সামনে আমাদের বহনকারী মাইক্রো তিনটি হাজির। আমরা যারা এ যাত্রায় নবীণ, তাদের অভ্যর্থণা জানালেন প্রেসক্লাব সভাপতি টবগী ইউনিয়ন পরিষদের নন্দিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কামরুল আহসান চৌধুরী। ঠিক সকাল ৮ টায় আমাদের যাত্রা শুরু। সকালের নাস্তা,পানি, প্রয়োজনীয় সকল কিছু নিয়ে আমাদের গাড়ীতে উঠার তাগিদ দিলেন এবং সঞ্চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন সভাপতি নিজেই। সত্যিই এবার যাত্রা শুরু। চমৎকার, অপূর্ব উচ্ছাস আর আনন্দে মনটা নেচে উঠলো। কী আনন্দ! কী আবেগ আর মিশ্র অনুভূতির শিহরণ অনুভব করছি বর্ণনাতীত। পুরণো বন্ধুদের মধ্যে এম.এ আকরাম, নুরুজ্জামান ভাই, মেজবাহউদ্দিন স¤্রাট, মো. মাইনুদ্দিন, মো. হাসনাইন, প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এ.বি.এম সিরাজুল ইসলামসহ অনেককে তিনদিনের জন্য কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েছি।
৬ ফেব্রুয়ারি রাতে যখন জানতে পারলাম প্রেসক্লাব সদস্য দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো চিফ, জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘মুক্তবুলি’ সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন বরিশালে জরুরী কাজ থাকায় কাউন্সিলে আসছেন না, তখন মনটা কিছুটা হতাশার দোলাচলে ভাসছিল। অবশ্য আমাদের সকলের একান্ত অনুরোধে তার না এসে কোন উপায় ছিলনা। বরিশাল থেকে স্পীডবোটে ভোলা। ভোলা হতে মোটরসাইকেলে সরাসরি চর কচ্ছপিয়া এসে আমাদের সাথে যোগ দেয়ায় আমাদের যাত্রায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়।
সকালের নাস্তা গাড়ীতে সেরে নিলাম। সকাল নয়টায় চরফ্যাশনে পৌঁছলাম। অতঃপর ক্ষণিক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি। এবার প্রেসক্লাব সভাপতি কামরুল আহসান চৌধুরী নিজে এম.এ আকরাম এবং ফয়সাল আহমেদকে সাথে নিয়ে প্রত্যেকের হাতে পৌঁছে দিলেন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন-২০২০ এর নান্দনিক একটি ব্যাগ, সু-দৃশ্য ক্যাপ, কোর্ট পিন, খাতা-কলম, কাউন্সিলের কার্যসূচি সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আবার যাত্রা শুরু। সকাল ১০ টায় দক্ষিণ আইচা বাজারে চা-বিরতি। সাড়ে ১০টায় চর কচ্ছপিয়া ঘাটে পৌঁছে আমরা সবাই পূর্ব থেকে প্রস্তুত লঞ্চে উঠলাম। যাত্রা পথ খালের দুপাশে সবুজের অপরুপ আল্পনায় বিমুগ্ধ নয়নে তাকালাম আর মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টি তত্ত্বের রহস্য উদঘাটনের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম বার বার।

প্রায় পৌনে দু-ঘন্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের বহু কাঙ্খিত গন্তব্য বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতে। সেখানে আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন ঢালচর ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার। আমরা সকলে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং পারস্পরিক পরিচয় শেষে আমাদের জন্য নির্ধারিত রিসোর্টে পৌঁছলাম। সভাপতি সাহেব প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত রুমের চাবি হস্তান্তর করলেন। যোহরের নামায শেষ না হতেই দুপুরের খাবারের জন্য ডাক এলো। সাদা ভাতের সাথে সালাদ, মেঘনার তাঁজা ইলিশ ভুনা, ডাল আর খাঁটি মহিষের দধি দিয়েই ভূড়িভোজ। খাওয়া শেষ। এবার প্রতিযোগিতার পালা। কার আগে কে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে প্রথম হবে। দলে দলে ভাগ হয়ে ছুটে চললাম। কিন্তু আমাদের ঝুলন্ত সদস্য তায়েফ তালুকদারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। কোথায় গেল সে আমরা মহা চিন্তায় পড়ে গেলাম। কী জবাব দেব তার বউ বেচারীকে! অনেক পরে তাকে আবিস্কার করলাম সে হরিণ দেখায় প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতায় সৈকতে আগেই গিয়ে হাজির। হায়রে বেচারা! দিনের বেলা হরিণ দেখা!! তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকতের অপূর্ব সৌন্দর্যের কথা ইতোপূর্বে আমার ছাত্রদের কাছে শুনেছিলাম। কিন্তু এত সুন্দর! এত অপূর্ব!! এত মোহনীয়!!! জানা ছিলনা। মনে মনে ভাবছি সৃষ্টিকর্তা বুঝি নিজের নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের কিছুটা দিয়ে সাজিয়েছেন এ পৃথিবীর আকাশ-বাতাস আর ভূ-মন্ডলকে। এ দ্বীপটি হয়তঃ তারই কুদরতের এক নিদর্শন।

নির্জন দ্বীপ, বালুকাময় বিশাল সমুদ্র প্রান্তর, সূর্যাস্তে সমুদ্রের অপরপ দৃশ্য এক অনাবিল আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল কোন এক অজানায়, চিন্তা আর গবেষণার গীতল বন্দরে। সাগরের কুলুকুলু ঢেউ, সাদা বক, বালিহাঁসের ঝাঁক আর হরেক রকমের পাক-পাখালির কিঁচিরমিচির শব্দ, ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের হৈ-হুল্লোড়, অপরদিকে গভীর কেওড়া বনে হরিণ দেখার ব্যর্থ প্রতিযোগিতা, বুনোশিয়ালদের হাঁক-ডাক পুরো এলাকাটিকে এক বিচিত্র ভূবনে পরিণত করেছে। ঘন, সু-দৃশ্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে এক শ্রেণির অসাধূ ব্যক্তি নির্বিচারে উজাড় করে যেন প্রকৃতির অপার সম্ভাবনাকে ম্লান করে দিচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। সৈকতে দাড়িয়ে সকলে একত্রে ছবি তোলার আকর্ষণ সামলাতে পারছিলাম না। মাগরিবের নামাযের ডাক এসেছে। নামায শেষে রিসোর্টের কাছেই চায়ের দোকানে খাঁটি মহিষের দুধের চা পান করলাম। মনে হয় সে চায়ের লোভনীয় স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। চা প্রেমিকরা অন্তত এ স্বাদের চা পানের জন্য হলেও একবার তাড়ুয়া দ্বীপ বেড়াতে যাবেন। সন্ধ্যায় ১৭ তম দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের মূল অধিবেশন প্রেসক্লাব সভাপতি কামরুল আহসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বাশার ২০১৭-২০১৯ সালের প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর একে একে সকল সদস্যের বক্তব্য শেষে ২০২০-২০২১ সালের নতুন কমিটি নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আলহাজ্ব কামরুল আহসান চৌধুরী সভাপতি এবং মো. হাসনাইন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তৈরিতে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে ডাক এলো রাতের খাবারের। সম্রাট ভাইর নিপুণ ব্যবস্থাপনায় রাতের খাবার শেষ হলো। সব্জি, সালাদ, গরুর মাংস, ইলিশ ভাঁজা, আর ভোলার ঐতিহ্যের ধারক খাঁটি মহিষের দধি ছিল রাতের খাবার ম্যানু। খাবার শেষ। এবার দল বেধেঁ মাঘি পূর্ণিমার ভরা জোছনায় নেমে পড়লাম জোছনাস্নাত রাতের সমুদ্র সৈকতের শুভ্র-স্নিগ্ধ হাওয়ায় মেতে উঠতে। তায়েফ তালুকদার নাছোর বান্দা হরিণ দেখবেই। এবার সাথে যোগ হলো আযাদ আলাউদ্দীন, নুরুজ্জামান ভাই, মাইনুদ্দিনসহ আল্লাহর কয়েক হরিণ পাগল বান্দা। পা টিপে টিপে নিঃশব্দে বনের কূল ঘেঁষে হেঁটে চললাম। যদি হরিণের দেখা পাই! হঠাৎ কানে কানে তায়েফ বলে উঠলো হরিণ, হ-রি-ণ!!! কিন্তু হরিণ তো মানুষের টের পেলেই নিমিষে উধাও। কিন্তু না, এ হরিণ তো দেখি ধীর পদক্ষেপে সম্মুখ পানে এগিয়ে চলছে। মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম এ হলো বিশাল বনভূমিতে ছেড়ে দেয়া গরু আর খানিকটা দূরে মহিষের পাল। এবার সবার হাসির শব্দে মুখরিত তাড়ুয়ার দ্বীপ। রাতের সৈকতের সাথে জোছনা রাতের মিতালী, সমুদ্র তীরে পানির শব্দ আর বিশাল ঝোপঝাড়ের উপর বিলিয়ে দেয়া চাঁদের অকৃপণ আলো যেন এক অপরুপ আবহের মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখলো আমাদের। বাহ! কী অনিন্দ্য সুন্দর! কী অপরুপ!! স্রষ্টার প্রতি বিনয়াবনত মস্তকে মনের অজান্তেই গান গাইতে লাগলাম- কবি মতিউর রহমান মল্লিকের লেখা সেই বিখ্যাত গান-
তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর-
না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর….কত সুন্দর…।

অনেকক্ষণ ঘোরা-ফেরা করলাম। কিন্তু টেরই পাইনি কখন যে রাত্রি একটা পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটায় রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই। ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু বাঁধ সাধলো শিল্পী জসিম রানার মন মাতানো সুরেলা কন্ঠের হরেক রকমের গান। ওরে নীল দরিয়া… সহ বিখ্যাত সব গান। রাত্রি দ্বি প্রহর পর্যন্ত তিনি গানে গানে মাতিয়ে রাখলেন পুরোটা প্রান্তর। রাত্রি প্রায় শেষ। ফজর নামাজ শেষ করে ঘুম ঘুম চোখে বেরিয়ে পড়লাম প্রাতঃভ্রমণে। ভোরে সৈকতের মন হারিনী স্নিগ্ধ বাতাস, সূর্যোদয়, প্রকৃতির সু-শোভিত নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করলাম প্রাণভরে। ক্লান্ত হয়ে ফিরে এলাম রেস্ট হাউজে। সকালের নাস্তা শেষ করে সবাই যখন পরবর্তী গন্তব্যে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই কানে ভেসে এলো সম্রাট ভাইর প্রাণখোলা হাসির শব্দ। রুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম শিল্পী জসিম রানার গানের তালে তালে লুঙ্গি ড্যান্সে পুরোটা মাঠ মাতিয়ে রাখলেন সাংবাদিক এম.এ আকরাম, ফয়সাল আহমেদ সহ আরো অনেকে। একেই বলে আনন্দ আর হাসির খোরাক।
সভাপতি সকলকে বেরিয়ে পরার জন্য নির্দেশ দিলেন। ঘাটে লঞ্চ অপেক্ষা করছে। ১২ টায় আমরা লঞ্চে উঠলাম। এবার আমাদের গন্তব্য চর কুকরী-মুকরী। প্রায় দুই ঘন্টা লঞ্চ চালিয়ে দু’টার কিছু পর আমরা এসে পৌঁছলাম কুকরী-মুকরী রেস্ট হাউজে। কুকরী-মুকরী ভ্রমণে এসে এখানেই রাত্রি যাপন করেছিলেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। রেস্ট হাউজের পশ্চিম পাশ লাগোয়া প্রস্তাবিত শিশু পার্ক, নানা রকম ফুলে ফুলে সাজানো নয়নাভিরাম রেস্ট হাউজ চত্বরটি যেন আসলেই এক স্বপ্নপুরী। নাগরিক সকল সুযোগ-সু্বধিায় সমৃদ্ধ অত্যাধুনিক এই রেস্ট হাউজটি এ অঞ্চলের সম্মান আর মর্যাদাকে কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের জন্য এ রেস্ট হাউজটির গুরুত্ব অপরিসীম। এ অঞ্চলের প্রতিটি পরতেই লেগে আছে ভোলা-০৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের উন্নয়নের ছোঁয়া।
দুপুরের খাবার খেয়ে কুকরী-মুকরীর বিস্তীর্ণ এলাকা দেখার জন্য আযাদ আলাউদ্দীন, নুরুজ্জামান ভাই, মেজবাহ উদ্দিন স¤্রাটসহ আমরা ভাড়া করা মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের বিচিত্র জীবন যাত্রার অভিজ্ঞতায় অভিষিক্ত হলাম। ‘মনুরা’ নামক বাজারে মাগরিব নামায আদায় করে স্থানীয় একটি বাজারে চা পান শেষে নতুন পথ ধরে ফিরে এলাম রেস্ট হাউজে। কিন্তু চলার পথে প্রতিটি পদে পরখ করলাম ইট-পাথরের কোলাহলে পূর্ণ শহরের মানুষের তুলনায়- কতটা সহজ-সরল আর নির্ভেজাল হতে পারে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা সমুদ্র পাড়ের এ মানুষগুলো!
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের কর্মসূচি। আর ধীরে ধীরে যবনিকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সফরসূচি। ৮ ফেব্রুয়ারি-২০২০। রাত ৮ টায় শুরু হয় বহু কাঙ্খিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জরুরী প্রয়োজনে সফরের মাঝ পথেই এ.বি.এম সিরাজুল ইসলাম, তায়েফ তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল ইসলাম হাওলাদার, মো. মাইনুদ্দিন বিদায় নিয়ে চলে আসাতে তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে পারেননি। বরেণ্য শিল্পীদের মন মাতানো গান, কৌতুক, মজার অভিনয় আর শিশু শিল্পীদের নাচ ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় দিক। পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি মজার অভিনয় দিয়ে আকর্ষণীয় করে রাখেন প্রেসক্লাব সভাপতি কামরুল আহসান চৌধুরী, এম.এ আকরাম, ফয়সাল আহমেদ ও উজ্জল হাওলাদার। তবে অনুষ্ঠানের সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল সোলায়মান ভাই এবং নুরুজ্জামান ভাইর লুঙ্গি ড্যান্স। ‘ওরে বাটপার’ নামক কমন ডায়লগ সমগ্র সফরে সকলকে বাড়তি আনন্দ দিয়ে উজ্জীবিত করে রাখে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঝে র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়- মজার মজার ডায়লগ আর নৃত্যের মাধ্যমে। নব-নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের বরণ এবং নতুন সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে দু’দিনব্যাপি সফরের সফল সমাপনীর দিকে ধীরে ধীরে এগুতে থাকি আমরা।
রাতের খাবার শেষে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে গভীর নিদ্রার বুক পকেটে ঢুকে যাই আমরা সবাই। মুয়াজ্জিনের ফজরের আযানের সুরে ঘুম ভাঙ্গে আবার। কাক ডাকা ভোরে নতুন পথের আবিস্কারে নেমে পড়ি নুরুজ্জামান ভাই আর সম্রাট ভাই সহ। প্রাত ভ্রমণ শেষে সকালের নাস্তা। অতঃপর আপন আলয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা। দুপুর ১ টায় চরফ্যাশনের জ্যাকব টাওয়ারে যাত্রা বিরতি। দক্ষিণ এশিয়ার এ সু-উচ্চ টাওয়ারে উঠে অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভোলা জেলার যতদূর দেখা যায় তাতে চোখ বুলিয়ে নিলাম। ঝটপট নেমে আবার মাইক্রোতে উঠে বসলাম বোরহানউদ্দিনের উদ্দেশ্যে। কুঞ্জেরহাট মদিনা হোটেলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল আগেই। এবার তিনদিনব্যাপী ভ্রমণের সবশেষ ভূড়িভোজ সম্পন্ন হলো মদিনা হোটেলের মালিক হাজী ইসমাইল মাতাব্বরের সার্বক্ষণিক সহযোগিতায়। সত্যিই এবার যবনিকা। সবার চোখে-মুখে যেন গানের সে ভাষা- ‘আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়…। তিনদিনের সফরের সফল আয়োজক বোরহানউদ্দিন প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ্জ্ব কামরুল আহসান চৌধুরী একে একে সবাইকে বিদায়ী সম্ভাষণ জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি টানলেন সকল কর্মসূচীর।
বোরহানউদ্দিন প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে তিনদিনের এ আয়োজনটি একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সফল আয়োজন হিসেবে স্মৃতিপটে অক্ষুন্ন থাকবে ততোদিন- আমরা বেঁচে থাকব যতোদিন। মহান রবের বাণী- ‘তোমরা পৃথিবী ভ্রমণ কর…।” এ অমীয় বাণীর বাস্তব এবং যথাযথ প্রতিফলনের ছিটে ফোটা হয়তঃ ফুটে উঠেছে আমাদের এ ভ্রমণে। কিন্তু তাতেও কম কিসে! মহান প্রতিপালকের লক্ষ সৃষ্টির মাঝে লুকিয়ে আছে মানুষের চিন্তা, গবেষণা আর জ্ঞানার্জণের অফুরন্ত উপাদান। অন্তত আমার কাছে এ ভ্রমনটি তারই একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত।
সবচেয়ে বড় কথা ভ্রমণ যে মানুষের বৈষয়িক এবং আত্মিক পরিবর্তণ ঘটায় তাতে কোন সন্দেহ নেই। দার্শনিক সিনেকার প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য দিয়েই শেষ করছি। তিনি বলেছেন কত চমৎকার কথাটি- ‘সমুদ্র যাত্রা, ভ্রমণ এবং স্থান পরিবর্তণ প্রাণশক্তি এনে দেয়। ##

তথ্যসূত্র: ‘মুক্তবুলি’ ম্যাগাজিন ১৩ তম সংখ্যা, প্রকাশক ও সম্পাদক: আযাদ আলাউদ্দীন

ফিরোজ মাহমুদ
সহকারি অধ্যাপক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি)
লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, ভোলা।
সদস্য, বোরহানউদ্দিন প্রেসক্লাব।

৫ comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *