জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত: পর্ব ১৪

 

আফ্রিকায় সাদা চামড়াওয়ালাদের ঔপনিবেশিক শোষণ ও বর্বর বর্ণবাদ

আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাস হলো ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক চরম অমানবিক শোষণ, লুণ্ঠন, ধর্ষণের ইতিহাস। তারা কেবল মহাদেশটি দখলই করেনি, আফ্রিকা থেকে মানুষ শিকারের ব্যবসা চালিয়েছিল কয়েক শতাব্দী ধরে। আমেরিকা মহাদেশে ও কৃষ্ণ আফ্রিকায় ইউরোপীয় বুর্জোয়ারা যা করেছিল তা ছিলো ইতিহাসের বর্বরতম অধ্যায়।
ইউরোপীয় দস্যুর দল পশু শিকারের মতো মানুষ শিকার করত আফ্রিকায়, তারপর তাদের হাতে পায়ে গলায় শিকল পরিয়ে আমেরিকায় ‘দাসের হাটে’ বিক্রি করত। সপ্তদশ শতাব্দীতেই প্রতি বৎসর আমেরিকার দাসের বাজারে গড়ে বিক্রি হতো ৫৫ হাজার আফ্রিকার কালো মানুষ। পরবর্তী শতাব্দীতে এই দাস ব্যবসা আরো বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকায় মানুষ শিকারের সংখ্যাও দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়। বুর্জোয়াদের জন্য এটা ছিলো লাভজনক ব্যবসা। কেবল ব্রিটিশ কলোনিতেই ১৬৮০ থেকে পরবর্তী একশ বছরে ২১ লাখ আফ্রিকানকে দাস বানিয়ে চালান দেয়া হয়েছিল।
পুঁজিবাদ আধুনিক যুগে নতুন করে প্রবর্তন করল দাসশ্রম। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকানদের কোনো নাগরিক অধিকার ছিলো না। এমনকি তাদের হত্যা করাও কোনো অপরাধ বলে গণ্য হতো না। গাছের সঙ্গে বেঁধে গরু-ছাগলের মতো চামড়া ছিলে হত্যা করার ঘটনাও ছিল অসংখ্য, গত শতাব্দীর পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও। এই প্রক্রিয়ায় হত্যাকে বলা হতো লিনচিং। নামজাদা সাহিত্যিক মার্ক টোয়াইন তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম দিয়েছিলেন United Lynching State। [হায়দার আকবর খান রনো: বিশ্ব ইতিহাসের মহানায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা, মাসিক উত্তরাধিকার, ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ৫১ তম সংখ্যা, পৃ ১০-১৯]

বর্ণবাদী ইসরাইলের ফিলিস্তিনি নিধন

2000 থেকে 2017 সনের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইসরাইলিরা হত্যা করে 9,505 জন ফিলিস্তিনি। এ সময়ে ইসরাইলি নিহত 1347 জন। পরাশক্তি আমেরিকা এ দায় এড়াতে পারে না।

Image result for ইসরাইলি সন্ত্রাস ছবি

নয়-এগারোর পর পরিহারযোগ্য মৃত্যু ঘটেছে ২ কোটি ৮০ লাখ আমেরিকানের। বছরে ১৭ লাখ। এর সাথে অলঙ্ঘনীয়ভাবে সংশ্লিষ্টতা ছিলো জায়নবাদের সহায়ক আমেরিকান সরকারগুলোর। আমেরিকা উপযাচিত হয়ে দীর্ঘমেয়াদে ইসরাইলকে ৪০ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে ৭ ট্রিলয়ন দীর্ঘমেয়াদি ব্যয় মিটিয়েছে মুসলিমদের হত্যা করার জন্য তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে।
[গোলাপ মুনীর: বর্ণবাদী ইসরাইলের ৭০ বছর এবং দীর্ঘমেয়াদি ফিলিস্তিনি নিধন, অন্য এক দিগন্ত, জুলাই ২০১৮, পৃ ১৩১-১৪৫]

রাজা হেরোডসের সন্ত্রাস

অ্যান্টিপ্যাটারের দ্বিতীয় পুত্র ছিল হেরোডস। তিনি ইংরেজদের কাছে হেরোড বলে পরিচিত। বাইবেলের বাংলা তরযমায় তাকে হেরোদ বলে উল্লিখিত হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ দশকে তিনি ছিলেন জুডিয়ার বাদশাহ। তাঁর মুলুক ছিলো বর্তমান সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম এলাকায়। তিনি ইহুদিদের মন জয় করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি ইহুদি ধর্ম পালন শুরু করলেন। তিনি জেরুজালেমের মন্দিরের উন্নতিসাধন করেছিলেন। যেহেতু এটা প্রকৃত সোলেমান মন্দির থেকে দূরে তাই ইহুদিদের সুবিধার জন্য তিনি সেটা করেছিলেন। যাই হোক,  তিনি ছিলেন খুব নিষ্ঠুর এবং সন্দেহপ্রবণ মানুষ। তিনি অন্তত ১০ বার বিয়ে করেছিলেন। স্বার্থে আঘাত লাগলে, কথায় কথায় নিজের স্ত্রী আর সন্তানকে পর করে দিতে তার কখনও কোনো সমস্যা হয়নি। শোনা যায় একবার তার ছেলে অগাস্টাসের কাছে এসে বলেছিল, “আমি হেরোডসের ছেলে না হয়ে তার পোষা শূকর হলেও ভালো হতো”।

যিশুর জন্ম হয় তার মুলুকের শেষপ্রান্তে বেথেলহেমে। সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর খবর জানতে পেরে হেরোদ সকল শিশুকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য হলো যিশুকে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় করা। তিনি বেথেলহেম ও তার সমস্ত পরিসীমার মধ্যে ০-২ বছর পর্যন্ত সব বাচ্চাদের খুনের পরিকল্পনা করে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘাতকবাহিনী পাঠায়। সব শিশুকে হত্যা করে হেরোদের প্রতিনিধি গুপ্তবাহিনী। যিশুর পিতামাতা সন্তান নিয়ে ইতোমধ্যে মিসরে পালিয়ে যাওয়ায় রক্ষা পায়।

[আইজ্যাক আসিমভ: রোমান সাম্রাজ্য (তরযমা- আফসানা বেগম), সন্দেশ, রামপুরা ঢাকা ১২১৯, দ্বিতীয় প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, পৃ ৩৭-৩৮ + বাইবেল, নতুন নিয়ম, মথি ১৩-১৫, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ১৯৮৮, পৃ ৩]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *