নন–ফিকশনের বিক্রি কেন বাড়ছে?

আফসানা বেগম ।।

পৃথিবীব্যাপী পাঠকের কাছে বরাবর ফিকশনের (প্রধানত উপন্যাস) কদর বেশি। কিন্তু হাল আমলে একটি নতুন চিত্র উঠে এসেছে। ফিকশনের চেয়ে নন–ফিকশন বইয়ের চাহিদা ও বিক্রি আকস্মিক বেড়েছে। পাঠের বিষয়টি এখানে অনিশ্চিত যদিও; বলা বাহুল্য, বিক্রির পরে বই পঠিত হচ্ছে কি না, তা নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবু বিক্রির সঙ্গে পাঠের প্রত্যাশা করা হয়তো অযৌক্তিক নয়।
.
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান বিবৃত করলেই তা কাহিনি হয়ে ওঠে না, যতক্ষণ একজন লেখক তা চাইবেন। তাই রচয়িতার সিদ্ধান্তে হয় সেটি হবে কল্পকাহিনি বা ফিকশন, নয়তো নন–ফিকশন। ফিকশনে থাকে কাল্পনিক চরিত্র, নিজস্ব সাজানো আবহ, আর সুনির্দিষ্ট শব্দপ্রবাহ। আবার কখনো সে রকম শব্দপ্রবাহে নন–ফিকশনও রচিত হয়; সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির দেশে কবিতার দেশে, পাবলো নেরুদা বা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনীগ্রন্থ ফিকশন ধরে নিলেও উপভোগ্য।
.
এই জীবনের যত মধুর ভুলগুলি বইটি এক দশকের বেশি সময় ধরে উপন্যাস হিসেবেই বিক্রি হয়েছিল। পরে জানা যায়, তা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের নিজেরই জীবনকাহিনি। ফিকশন আর নন–ফিকশনের পার্থক্য কখনো স্থূল, কখনো সূক্ষ্ম হলেও পাঠকের কাছে কোনটার আবেদন কেমন এবং তার পেছনের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলাপ চলতে পারে।
.
মানুষ সাধারণত কিছু দেখা বা জানার পর বুঝতে চায়, আর বোঝাবুঝির মাঝপথে কল্পনা করে। তেমনি ফিকশন এক কল্পনার জানালা। ফিকশন মনিটরবিহীন, আকার-আকৃতিহীন চলমান ছবি, যা পাঠক পড়তে পড়তে নিজের মনে এঁকে নেয়। নিমজ্জিত পাঠকের চোখে প্রতিটি চরিত্রের অবয়ব তৈরি হয়।
গদ্যের বর্ণনায় চোখের সামনে চরিত্রেরা হাঁটাচলা করে, কাঁদে, হাসে; আর এই পুরোটাই হয় পাঠকের কল্পনায়। ফিকশন তাই কল্পনার কারখানা। কল্পনা মানুষকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি সংবেদনশীল হতে শেখায়। তবে এই বিতর্ক চিরন্তন, ফিকশন পড়লে মানুষ প্রখর অনুভূতিসম্পন্ন হয়ে ওঠে, নাকি সংবেদনশীল মানুষই কেবল ফিকশন পড়ে? যাহোক, ফিকশন এবং সংবেদনশীলতা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত, এটুকু নিশ্চিত। পাঠক অবশ্য ফিকশন পড়ে তখনই সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যখন কাহিনির মূল সুর বা নির্যাসটুকু তার অন্তরে প্রবাহিত হয় এবং সে তা গ্রহণ করে।
.
বর্তমানের পাঠকের পাঠ ও বিনোদন আহরণের অভ্যাসবিষয়ক আলোচনা করা যায়। আমাজন কোম্পানির ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা যায়, ৭৯ শতাংশ পাঠক কাহিনি পাঠের পরিবর্তে ভিডিও দেখতে পছন্দ করেন এবং ৮২ শতাংশ পাঠক প্রায় সব সময় ওয়েবের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
.
এ রকম পরিস্থিতিতে দীর্ঘ রচনায় পাঠকের সময় বরাদ্দ পাওয়া কঠিন বটে। তাই প্রচুর ফিকশনপড়ুয়ার দেশ আমেরিকায় সরকারি সংস্থা, ন্যাশনাল এনডোমেন্ট ফর দ্য আর্টসের সমীক্ষায় বেরিয়ে আসে, ২০০৮ সাল থেকে লাগাতার ফিকশনপড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। অন্যদিকে, পেঙ্গুইন র​্যানডম হাউসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল অবধি পাঁচ বছরে তাদের নন–ফিকশন বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে এবং বৃদ্ধির ফলে তা ফিকশনের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি আয় করছে।
.
হাল আমলে বাংলাদেশে এর গতিপ্রকৃতিও একই রকম। বিভিন্ন বই বিক্রির বিভিন্ন সাইটের বিক্রির তালিকা দেখে এবং কয়েকজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন–চার বছর ধরে নন–ফিকশন আগের তুলনায় অন্তত তিন গুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে, যেখানে ফিকশন বিক্রি সেভাবে বাড়েনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে কমে গেছে। তাঁদের বেশির ভাগের মতে, জীবন পরিচালনা, দর্শন, আধ্যাত্মিকতা, ধর্ম, ব্যবসায় উন্নতির পথ ও শিশু-কিশোরের জীবনে আদর্শের দিকনির্দেশনাসংবলিত বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি; মূলত আদিকাল থেকেই তা ছিল।
.
এ দেশে দোকান বা ফুটপাত—সবখানেই একসময় বিপুল পরিমাণে ডেল কার্নেগি বা ডা. লুৎফর রহমানের বই বিক্রি হয়েছে। জীবনে সফল হতে হলে কী করতে হবে, তার প্রতি আগ্রহ মানুষের চিরন্তন। কিন্তু পাঠক পাশাপাশি ফিকশনে বুঁদ হওয়ার মানসিকতাও লালন করত। পরিবর্তন কেবল এটুকু যে এখন পুঁজিবাদী সমাজে সম্পদ সংগ্রহ আর জীবনসংগ্রামের ইঁদুরদৌড়ে সে কেবল অস্থির হয়ে ছুটে বেড়ায় আর পাঠ্য বলতে উন্নতিকল্পে সরাসরি যুক্ত লেখা পত্র বোঝে।
.
ফিকশনের কল্পনার দুনিয়ায় নিমজ্জিত থাকার বিলাসিতা তার থাকে না। সমাজের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টেকার যুদ্ধের তুলনায় মানসিক সংবেদনশীলতা নির্মাণ হয়তো তার কাছে তুচ্ছ। এ ছাড়া জীবন দ্রুতগামী হওয়ায় ফিকশনের দীর্ঘ আবহে পরোক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জীবনাচরণ আহরণের চেয়ে সে সরাসরি জীবনাচরণের তালিকা পেলে স্বস্তি বোধ করে।
.
অনস্বীকার্য যে পাঠের ক্ষেত্রে উপন্যাস কিংবা নাতিদীর্ঘ কল্পকাহিনি বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে। কল্পিত ছবিগুলো দেখতে চাইলে চরিত্রের অজানা জীবনে ঢুঁ মারতে হয়, চরে বেড়াতে হয় অচেনা পটভূমিতে।
অন্যদিকে, চেনা জগৎ নিয়ে লেখা নন–ফিকশনে মানুষ প্রবেশ করতে পারে দ্রুততম সময়ে, জীবনের জটিলতার সমাধানও পেয়ে যায় মুহূর্তে। পাঠকের এখন সময় কম, এ-ও স্বীকার করতে হবে। দিন সেই ২৪ ঘণ্টাই আছে, পাঠকের চোখ-কানের ক্ষমতাও একই আছে কিন্তু বিনোদন বা ব্যস্ততার ক্ষেত্র বেড়েছে অনেক।
ধীরস্থির জীবনে আয়েশ করে উপন্যাসের পাতা ওলটানো, হাঁ করা বই উপুড় করে রেখে কল্পনার রাজ্যে ডুবে থাকা আজকের দিনে অনেক ক্ষেত্রে অভাবনীয় বটে। দিনভর গুনগুনিয়ে চলা অগুনতি টেলিভিশন চ্যানেল, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অতীতে গল্পের বই বা উপন্যাস নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বসে থাকা পাঠককে ব্যস্ত রেখেছে।
.
ওয়েবে পাঠক যা কিছু পড়েন, তার সিংহভাগ নন–ফিকশন। তাই কোনো না কোনোভাবে নন–ফিকশনের সঙ্গে তার সখ্য থেকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে উঠতি পাঠকের ফিকশন সম্পর্কে ধারণা পর্যন্ত গড়ে ওঠে না।
বহু নিয়মিত পাঠক সংগ্রহ করা একটি জনপ্রিয় সাইট দেখা যায়, সেখানে বিবৃত কোনো ফিকশনকে সত্য ঘটনা ধরে নিয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কোন চরিত্রের কী করা উচিত হয়নি, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। অন্যদিকে ফিকশন সম্পর্কে ধারণা থাকলেও তা নিয়ে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিশ্লেষণ চোখে পড়ে না।
.
অন্যদিকে ফিকশনের বাস্তব চিত্রটাও ইদানীং বদলেছে। নিজ উদ্যোগে বই প্রকাশ করার বিষয়টি বরাবরই ছিল, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে তা বহুগুণে বেড়েছে। উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মে কথা বলার স্বাধীনতা ও পাঠকের মনোযোগ পাওয়া মানুষেরা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ চিন্তাকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
আমাজনের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮১ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে প্রত্যেকের ভেতর আস্ত একটি বই আছে, যা পাঠকের পড়া দরকার। এর ভিত্তিতে আমাজন-কিন্ডলে লেখকের নিজ উদ্যোগে বই প্রকাশের কার্যক্রম হাতে নেয়। তাতে বিপুলসংখ্যক নতুন লেখক বই প্রকাশের পথে সব অন্তরায় উতরে সরাসরি প্রকাশিত হতে পারেন।
.
তবে আমাজন পরে আরেকটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে, ৪২ শতাংশ পাঠক অতিরিক্ত বইয়ের ভিড়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে ফিকশন ক্রয় থেকে পিছিয়ে যান। আমাদের দেশের পরিস্থিতিও ভিন্ন কিছু নয়। লেখক-প্রকাশকদের মতে, এখানে সমস্যা আরেকটু গুরুতর; অসংখ্য ভুল বানান ও বিষয়সংবলিত, সম্পাদনাহীন বই বাজার সয়লাব করে ফেলায় পাঠক ফিকশনের ওপরে আস্থা হারাতে বসেছে।
.
ফলে অনেক ক্ষেত্রে লেখক নিজের বইয়ের প্রচারণার কাজে যুক্ত হয়ে তাঁর বইটি স্রোতে ভেসে আসা অন্য বইয়ের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের কাজে নেমে পড়েন। হতে পারে এর আরেক কারণ এই যে একই বিষয়ে বহু বই প্রকাশিত হওয়া। এই পরিস্থিতি পাঠককে বিভ্রান্ত করার জন্য যথেষ্ট। স্রোতের মধ্যে সঠিক মাছ শিকার কঠিন।
.
নির্বিকার পাঠক তাই গণমাধ্যম, বই প্রকাশনা উৎসব, বই আলোচনা, টেলিভিশন সাক্ষাৎকার এবং সর্বোপরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখকের নার্সিসাস উপস্থিতি লক্ষ করেন। এই পরিস্থিতিতে পাঠের উপযুক্ত ফিকশন লেখকও কেবল লিখে বসে থাকতে পারেন না, প্রচারণার দায়দায়িত্ব অবশ্যম্ভাবী হয়ে তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। লেখক প্রমাণের চেষ্টায় রত থাকেন যে ভেসে আসা অসংখ্য কাচের টুকরায় কেবল তাঁরটাই হীরা।
ওদিকে উপর্যুপরি বিজ্ঞাপনের চাপ বা চিনপরিচয়ের দায়ে পাঠক ফিকশন কিনে পড়তে গিয়ে দেখে তাতে বিনোদিত হন না। সাজানো ঘটনার আবহে সেখানে কোনো সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় না, যা তাঁর মননে কোনো পরিবর্তন আনবে। তাই বই বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে কাহিনি মাথা থেকে হারিয়ে যায়। এভাবে অপছন্দের বই বারবার কিনে ধোঁকা খাওয়ার অনুভূতির কারণে অনেকেই ফিকশন থেকে দূরে সরে আসেন। গুডরিডস বা একই রকম পাঠচক্রে পাঠকদের মতামত এমনটা নির্দেশ করে।
.
তথ্যের ব্যাপক প্রবাহও কল্পনার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, যেখানে তথ্য সুলভ এবং গণমাধ্যমে কে কার আগে সেটা পরিবেশন করবে, সেই প্রতিযোগিতা চলে, সেখানে তথ্যস্বল্পতা বা তথ্যের ফাঁক অনুসরণ করে পাঠকের ততটা কল্পনা করার সুযোগ নেই। আজকের দিনে আমাদের চারপাশে, এমনকি দূরদূরান্তেও যা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তার বর্ণনা বা ছবি চোখের সামনে মিলে যাচ্ছে।
.
পাঠককে তাই ২৪ ঘণ্টা মেনে নিতে হচ্ছে, ‘সঙ্গেই থাকুন’। কল্পিত কাহিনির মারপ্যাঁচে সূক্ষ্ম অনুভূতির আঘাতে পাঠকের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়বে, কি নিজের অজান্তে ফিক করে হেসে ফেলবেন—এমন অবসর কোথায়! তথ্যের স্রোতে ক্রমাগত খুন–ধর্ষণ বা যুদ্ধ-বিপর্যয়ের খবর পাঠককে চোখ সরাতে দেয় না। আজকের ঘটনাবহুল পৃথিবী ফিকশনের বর্ণনার চেয়ে অনেক কঠিন, অনেক রূঢ়। তাই এখন বাস্তবকে ছাপিয়ে ফিকশনের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়তো বেশ কঠিন হবে।
.
সমাজে সবকিছু যখন অস্থিতিশীল, তখন মানুষ কেবল চায় কড়া রচনা, সরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করা বা আক্রমণাত্মক শব্দমালা। কেউ কেউ আবার চায় এই সবকিছুর মধ্যে কী করে সুস্থির থাকা যাবে, তার নির্দেশনা। কিংবা সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখে অসহায়ভাবে ইহজাগতিকতার কোলে আশ্রয় চায়। জীবননির্দেশনার বই তাই বেশি বিক্রি হয়, নিরাপত্তার অভাবের কারণে অধিক মাত্রায় ধর্মীয় বোধের চর্চা ও আর্থিক নিশ্চয়তার উপায় খোঁজার অভ্যাস তৈরি হয়।
.
তবে নন–ফিকশন পড়েন বলে পাঠক যে নন–ফিকশনের সুনির্দিষ্ট ধারা, বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ খুব একটা পড়েন, তা-ও কিন্তু নয়। গভীর চিন্তাপ্রসূত রচনা সুনির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা, জীবনবোধ ও মানসিক সচেতনতা দাবি করে বটে, কিন্তু সেসব থাকলেও অস্থিতিশীল সময়ে ততটা মনোযোগ কি পাঠক দেবেন, যতটা ও রকম রচনায় নিয়োজিত হওয়া প্রয়োজন? জ্ঞানী ব্যক্তিদের সমাজ পরিবর্তনমূলক রচনা তাই পাঠকের মননে পৌঁছাতে পারে কি না, এ নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। পাঠকের দ্রুতগামী জীবনসংলগ্ন টুকরা টুকরা নন–ফিকশন তাঁর দৈনন্দিন অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, আবার দিন শেষে হয়তো হারিয়েও যায়।
.
ফিকশন হোক আর নন–ফিকশন, সুনির্দিষ্টকালের সঙ্গে তার যোগাযোগ বাঞ্ছনীয়। অতীতে উপন্যাস বা গল্পের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, ঐতিহাসিক যোগ ছাড়াও প্রচুর বিক্রি বা পাঠের কথা জানা যায়। প্রচুর বিক্রীত উপন্যাসেও মাঝেমধ্যে চরিত্রের অবস্থান বা সময়কাল কিংবা পটভূমির হদিস পাওয়া যায় না। এখন বহু পাঠক সচেতন।
তাঁরা জানতে চান, কাহিনিটি কি সমসাময়িক কালের? এতে কি বর্তমান সময়টা তার খুঁটিনাটিসহ উঠে এসেছে? এই সময়ের রাজনীতি বা সমাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত সমাজের চিত্র কি ফুটেছে? কাহিনিটি কি ঐতিহাসিকভাবে সঠিক? কাহিনিটি কি যথেষ্ট বাস্তব? পাঠকের মনে উঠে আসা প্রশ্নের উত্তর রচনায় না থাকলেও রচনাটি ব্যর্থ হতে পারে।
.
সত্যি বলতে, পাঠককে কম বুদ্ধিসম্পন্ন ভাবার কোনো কারণ নেই। মনে রাখা দরকার, পাঠক নিজেও একটি জীবন যাপন করেন; তাই তাঁরও আছে জীবনবোধ। উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি কেবল অন্যের জীবনে উঁকি দিয়ে দেখে আসতে চান। ধোঁকা না দিয়ে তাঁর অবলোকন সার্থক করাই যেন ফিকশন সৃষ্টির উদ্দেশ্য হয়। অন্যদিকে, কালো অক্ষরে যা লেখা, তা-ই বিশ্বাস করার আগ্রহ যখন পাঠকের থাকে, সেখানে অবান্তর যুক্তিসংবলিত প্রবন্ধে যেন মিথ্যা বা ভুল ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত না হয়। আদতে ফিকশন হোক আর নন–ফিকশন—পাঠকের জীবন গড়াই তাঁদের কাজ।
.
তথ্যসূত্র
অন্য আলো, প্রথম আলো, ৩০ জুলাই, ২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *