বিজ্ঞাপনের নামে নারী প্রদর্শনী !

মাহমুদ ইউসুফ ।।

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযু্িক্তর যুগে পণ্য দ্রব্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিজ্ঞাপন ছাড়া উৎপাদিত পণ্যের প্রচার প্রসার সম্ভব নয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর জন্য ডিলার, এজেন্ট, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী যতটুকু ভূমিকা পালন করে, বিজ্ঞাপন তার চেয়ে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের দরকারিতা তো আরো গুরুত্বের দাবীদার। আর এ বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হলো রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ, পোস্টার, ব্যানার, সাইন বোর্ড, লিফলেট, বিলবোর্ড প্রভৃতি। তবে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে টেলিভিশন ও খবরের কাগজের ভূমিকাই অধিক। শুধু বিজ্ঞাপন দাতার জন্যই নয়, প্রচার মাধ্যমের জন্যও বিজ্ঞাপন দরকার। কেননা ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্টিং মিডিয়ার একমাত্র আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন খাত। বিজ্ঞাপন দাতা, মিডিয়া, জনগণ সবার জন্যই বিজ্ঞাপন দরকার। এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিজ্ঞাপনের নামে নারীদেরকে কেন ‘পণ্য’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে?

বাংলাদেশের সকল প্রকার প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের নামে যা দেখানো হচ্ছে তাকে বিজ্ঞাপন না বলে ‘নারী প্রদর্শনী’ বলাই শ্রেয়। কেননা সেখানে আসল পণ্য দ্রব্যের চেয়ে নারী দেহ, নারী সৌন্দর্য, নারী কন্ঠ, নারীর অঙ্গ সৌষ্টবকেই অধিক প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। অশ্লীল নৃত্য, নগ্ন দেহই যেন বিনিয়োগের পূূজি হয়ে ওঠছে। পর্দা তো দূরের কথা কোনো নারী মডেলের মাথায় কাপড় দিয়ে অদ্যাবধি উপস্থাপন করতে দেখা যায়নি। নারীর শরীর থেকে চাদর বা ওড়না তো অনেক আগেই খসে পড়েছে। ফিনফিনে পাতলা পোশাকেই যেন তাদের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে! ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোতে নারী দেহ ও ও সৗন্দর্যকে পূজি করে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। কমিউনিজম, বুর্জোয়া, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর এ দেশিয় দালাজীবীরা মা জাতিকে নিয়ে ব্যবসায়িক আনন্দে মেতে ওঠেছে।

নারী আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধাংশ। এই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পশ্চাতে রেখে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়া এবং আদর্শ সমাজ জাতি গঠনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাইকেই সমভাবে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা, চাকরি, তেজারতি, সওদাগিরি  সর্বক্ষেত্রেই নারী সমানিধার প্রাপ্য। তাই বলে মহিলাদেরকে রাস্তায় নামিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করবে এটা তো হতে পারেনা। দেশের একটা অশুভ শক্তি নারীবাদী, নারী প্রগতি, নারী উন্নতির নামে তাদেরকে পণ্য দ্রব্য হিসেবে গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যবহার করছে। দ্বাদশ শতকে ক্রুসেড যুদ্ধের ধ্বজাধারী ইহুদি ও খৃস্টানরা গাজি সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ও মুসলিম মুজাহিদের বিরুদ্ধে যেভাবে নারীদের ব্যবহার কররেছিল আজকের সাম্রাজ্যবাদীদের এদেশিয় এজন্টরাও একই ভূমিকায় অবর্তীর্ণ। আমেরিকা, ইসরাইল, ভারতের এসব সেবাদাসরা সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম জাতির ধ্বংসসাধনেই বেশি তৎপর। আর এ কাজে তারা বেছে নিয়েছে অবলা নারী জাতিকে। কিশোরী, তরুণী, যুবতীরাও তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে অন্ধকার জগতে পাড়ি জমাচ্ছে। সঙ্কীর্ণ স্বার্থ ও অর্থের মোহে তারা বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমায় নগ্নভাবে পোজ দিচ্ছে। ভাববতেও লজ্জা হচ্ছে যে, একজন মুসলিম তরুণী মডেল হয়ে বিজ্ঞাপন চিত্রে নগ্নভাবে উপস্থাপন হচ্ছে, যেখানে বিক্রিত পণ্যের চেয়ে নিজের শরীরই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের বুঝে আসে না যে, এতে কি নারীদের মান সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছে! আমাদের তো ধারণা এতে নারীদের অধিকার, ইজ্জত আবরু আরো খর্ব হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *