“””বিবেকহীন মানবতা”””

শিরোনাম- “প্রাণ প্রিয় মা”
মু’আয
বলতে পার মা আমি কে?
আমি সেই হতভাগা সন্তান যে তোমার গর্ভে রাতের আঁধারে লুকিয়ে জন্ম নিয়েছিলাম। আমাকে জ্যান্ত ফেলে দিয়ে এসেছিলে একটি বাক্সে বন্দী করে ডাস্টবিনে, সে সময় তোমার ভয় ছিল লোক লজ্জার…..!!!
মা আমাকে দ্রুত ফেলা দেয়াই তোমার জন্য ছিল মুক্তি!
মা তুমি জানো না, তুমি যখন আমাকে ফেলে দিয়ে চলে এসেছিলে তারপর আমার উপর দিয়ে ঘটে গেল ইতিহাসের নির্মম বর্বরতা।
মা বন্দী করা বাক্সে আমাকে ফেলে আসার পর আমি চোখ খুলে দেখি তুমি আমার কাছে নেই!
চারিদিকে শুধু অন্ধকার…..!
তোমায় কতটা খুঁজলাম তুমি জান না মা।
হাত-পা নাড়িয়ে খোঁজা-খুঁজির পর আমি বুঝলাম তুমি আমার কাছে নেই।
মা বলে যে ডাকতে হবে তা তো শিখাবার আগেই অভিমান করে ছুঁড়ে ফেলে দিলে আমাকে মা..!!
কিন্তু এ কথা জানতাম যে, আমি যদি চিৎকার করে কাঁদি তাহলে তুমি আর দূরে থাকতে পারবেনা মা, দৌড়ে  আসতেই হবে আমার কাছে।
“মা” বলে ডাক না শিখালেও কাঁদতে তো শিখেছি মা।
জানো না মা, আমার গগণবিদারী কান্না হয়ত তোমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি কিন্তু ডাস্টবিনের পাশে ঘোরাঘুড়ি করা কুকুরগুলো আমার অসহায়ত্বের, আমার একাকিত্বের কান্না বুঝে নিয়ে ওদের হিংস্রাত্বক থাবা প্রকাশ করল…!!!
ভেবেছিলাম মা ওরা মনে হয় আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে, কিন্তু ঘটে গেল তার উল্টোটা। ওরা আমার কাছে এসেছিল আমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য তোমার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়।
ওদের কি হিংস্র গর্জন! দাঁতগুলো কতটা তীক্ষ্ণ মনে হচ্ছিল যেন আমাকে ছেঁড়ার জন্যই ধারালো করা হয়েছে!
মা ওরা ২/১ ছিলনা, ওরা ছিল বেশ কয়েকটি।
ওদের মুখের লালা এমনভাবে পড়ছিল মনে হচ্ছিল যেন ওরা কতদিনের ক্ষধার্ত!!!!
মনে হচ্ছিল ওরা যেন বলছে “ওরে কপাল পোঁড়া,  তোর জন্যই আমাদের এই অপেক্ষার প্রহর গোনা!
তোকে খেয়েই আমাদের উদর পূর্ণ করব!”
সবে জন্ম নেয়া আমি ছিলাম অনেক নরম,যখন কুকুরের একটি কামড় এসে আমার পঁজোরে সজোরে আঘাত করল তখন কিযে কষ্ট হচ্ছিল মা……!!!
বাকি কুকুরগুলো আমার নরম মাথা নিয়ে কিযে টানাটনি করছিল….!!!
সে ব্যাথা সহ্য করার মত ছিল না..!
তোমার প্রসব বেদনা যতটা না হয়েছিল তার চেয়ে বেশি যন্ত্রনা করছিল!
কি অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছিল মা তুমি বুঝবে না।
যদি বুঝতে তাহলে আর ফেলে দিয়ে আসতে না ..!
মা আমাকে নিয়ে টানাটানির একপর্যায়ে আমার যন্ত্রনা কমে গিয়েছিল কারণ ওদের হিংস্র থাবায় আমার প্রাণ যে আর থাকতে পারছিল না দুনিয়ার বুকে।
কে তোমাকে ভালোবাসার প্রতারণাচ্ছলে আমাকে জন্ম দিয়ে গেল,  জানিনা মা।
অমানুষ ও ছিল কিন্তু তুমি তো আমার মা ছিলে, তুমি কিভাবে আমাকে  ফেলে দিলে মা?
নিজেকে নিয়ে যেহেতু এতটা ভাবতেই হবে তবে কেন আমায় জন্ম দিলো মা?
তবে কেনইবা এইসব অমানুষের কাছে নিজের সব বিলিয়ে দিলে মা?
মিলন মানেই ভালোবাসা নয়, বিরহতেই জীবন মধুতর হয়।
এই নোংরা ভালোবাসার অর্থই কি লোক লজ্জার ভয়ে সকলের অগোচরে সন্তান জন্ম দিয়ে কুকুরকে দিয়ে খাওয়ানো…????
এই নোংরামির অর্থই কি পাঁচতলা থেকে নিজের সদ্য জন্ম দেয়া সন্তান কে নিচে ফেলে দেয়া….???
যদি তাই-ই হয় তবে শোন মা এই নোংড়া ভালোবাসা পাওয়ার পূর্বেই দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছি তাই-ই ভালো হয়েছে মা।
মা,
কেয়ামতের দিন রব্বুলআলামিনের কাছে সুপারিশ করে বলব
“রব্বুলআলামিন আমার প্রিয় মাকে তুমি ক্ষমা করে দাও, আমার মা আমাকে দুনিয়াতে কুকুরে খাইয়ে দিয়েছিল,  তুমি আমার মাকে জান্নাত দান করে তার অনুভূতির দুয়ারে নাড়া দিয়ে দাও”।
মা তোমার কাছে অনুরোধ রইল,  যদি আমার মত অবৈধ সন্তানদেরকে লোক লজ্জার ভয়ে কুকুরে খাইয়ে দিতে হয় তাহলে আর কখনও অবৈধ সন্তান জন্ম দিওনা!
আমার হৃদয় প্রসশ্ত বলে তোমার জন্য রব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম, সব সন্তান কিন্তু তা করে না মা।
তোমার প্রতি আশির্বাদ রইল  ” তোমার পথ চলা যেন সুন্দর হয়, আমার স্বার্থপর মা”।
ইতি,
তোমার সেই সন্তান যাকে তুমি নর্দমায় ফেলে দিলে কুকুরেরা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিল।
কতবড় জালিম ওরা??
কতবড় জাহিল ওরা??
এ সন্তান হত্যার দায় কে বহন করবে???
আর কত দেখতে হবে কুকুর ছিঁড়ে খাচ্ছে সদ্য জন্ম নেয়া সন্তান কে…??
আর কত শুণতে হবে ডাস্টবিনে কুঁড়িয়ে পাওয়া কঁচি সন্তানের গগনবিদারী আর্তনাদ…???
এই সভ্যতার যুগেও কি বন্ধ হবে না এই জাহেলিয়াত…??
কোথায় মানবতা কোথায় তার বিবেক….???
সমাজের কাছে বিনীত আবেদন থাকবে আজ থেকেই যদি এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা না হয় তাহলে আমাদের সামনের পথচলা হবে অবৈধ,
আমাদের সামনের দিনগুলো হবে কঠিন।
যে মায়ের কাছে সন্তান আদর্শ শিখবে সেই মা ই সন্তানকে নিজ হাতে সন্তান ফেলে দেয় ডাস্টবিনে, পাঁচ তলা থেকে নিচে।
এ যেন জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে
জাহেলি যুগে বাবা যে কাজ করতেন তা এই সভ্যযুগে মা করছেন।
আসুন সবাই সচেতন হই।
বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি।
সমাজবদ্ধ হয়ে সমাজকে আলোকিত করি।
লেখক……
মু’আয
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়,
ইংরেজি বিভাগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *