যে দেশে কামানের গোলা ছুড়ে ইফতারের সংকেত দেওয়া হত

ফিচার ডেস্ক ||

কামানের গোলা ছুড়ে ইফতারের সংকেত প্রদানের কথা শুনেছেন কখনো ? শুনতে অবাক লাগলেও আজ থেকে এক হাজার বছর আগে এভাবেই ইফতারের সংকেত প্রদান করা হতো মধ্যপ্রাচ্যের কিছু কিছু দেশে।
এই মাসে আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে মুসলিমরা সিয়াম পালন করে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে ইফতার করে। ইফতার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের ( সূরা বাকারার ১২৭ নং আয়াতে ) বলেন-

‘আর তোমরা পানাহার যতক্ষন রাতের কালোরেখা থেকে ঊষার সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রকাশ না হয়, তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’

পবিত্র কোরআনের এই নির্দেশনা অনুসারে সারাদিন রোজা রাখার পর মাগরিবের আজানের কয়েক মিনিট আগে করতে হয় তার ইফতার। ইফতার গ্রহণের জন্য এখনকার দিনে সাধারণত টেলিভিশন অথবা মসজিদ থেকে মাইকে দেয়ার নির্দেশনার উপর নির্ভর করতে হয়, অথবা রমজান মাসের ক্যালেন্ডার দেখে অনেকেই ইফতার ও সেহরি সম্পন্ন করে থাকেন।

তবে আজ থেকে এক হাজার বছর আগে ছিল না কোনো টেলিভিশন অথবা মাইক। এমনকি সে সময় ঘড়ির প্রচলনও হয়নি। সেই সময় দূর দুরন্তে রোজাদার ব্যক্তিদের নিকট এই ইফতারের সংকেত পাঠানোর জন্য ফাঁকা স্থানে ছোড়া হত কামানের গোলা। এই কাজে ব্যবহৃত কামান কে আরবি ভাষায় বলা হতো মিদফা আল ইফতার। যার অর্থ ইফতারের কামান।

কামানের গোলা ছুড়ে ইফতারের সংকেত পাঠানোর প্রথা চালু হওয়ার ব্যাপারে দুই রকম তথ্য প্রচলিত রয়েছে। প্রথম তথ্য মতে জানা যায় যে, প্রথাটি দশম শতাব্দীতে মিশরে চালু হয়, যখন ফাতিমি খলিফাদের একজন কায়রোর মুকাতাম পার্বত্য অঞ্চলে একটি কামান স্থাপনের নির্দেশ দেন। যেটার শব্দে নগরীর সব মুসলমান তাদের রোজা ভাঙার সংকেত শুনতে পান।

স্থানীয় অনেকেই মনে করেন, মিশরে কামান চালানোর প্রথা শুরু হয়েছিল ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে, মোহাম্মদ আলী পাশার শাসনামলে। তিনি একটি কামান পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সেটি আবার রমজানের প্রথম দিনের সূর্যাস্তের সঙ্গে মিলে যায়। তারপর থেকেই প্রতি রমজানের ইফতার শুরু করার জন্য কামানটি থেকে গুলি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন মোহাম্মদ আলী পাশা।

সূত্রমতে, ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে মামলুক সুলতান খোশকাদ্দামকে একজন জার্মান কামানটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। তিনি সেটি পরীক্ষা করার জন্য তার সৈন্যদের গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। কাকতালীয়ভাবে তখন ছিল রমজান মাস। সময়টা ছিল সূর্যাস্তের মুহূর্ত। এই কামানের গুলির শব্দকে কায়রোর জনগণ ইফতারের সংকেত মনে করেছিল। এই পদ্ধতি মিশরের জনগণের কাছে এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে তারা সুলতানকে অভিবাদন জানাতে প্রাসাদে জমা হয়েছিল।

রাজকন্যা হাজ্জা ফাতিমার পিতার প্রতি জনগণের এমন ভালোবাসা দেখে সুলতানকে প্রতিদিন ইফতারির জন্য কামান চালানোর অনুরোধ জানান। সুলতান এতে সম্মত হন, এভাবেই মিদফা আল ইফতারের প্রচলন শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে এটি হাজ্জা ফাতিমার নামেও পরিচিত। পরবর্তিতে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে রেডিও ও ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকে মিশরের স্থানীয় টেলিভিশনে রমজান মাসে ইফতার শুরু করার জন্য কামানটি থেকে গুলি নিক্ষেপ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *