বখতিয়ারের বাংলাদেশ বিজয়ের পূর্বে এখানকার মুসলিম ও বৌদ্ধরা নানাভাবে নির্যাতিত হতো। এরূপ একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস সদস্য এফ বি ব্রাডলী বাট এ প্রসঙ্গে তাঁর Romance of an Easter Capital শীর্ষক কিতাবে। রামপালের অদূরে আবদুল্লাহপুর গ্রাম। সেখানে এক মুসলিম পরিবার বাস করত। বাংলায় মুসলিম অভ্যুদয়ের প্রাথমিক যুগে যারা এ অঞ্চলে আগমন করেছিল, এই পরিবারটি ছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম। পরিবারটি ছিলো নিঃসন্তান। হঠাৎ একদিন এক অপিরিচিত দরবেশ তাদের সুখবর দেন যে, তারা আল্লহর কাছে কান্নাকাটি করে দুআ প্রার্থনা করলে তাদের মকসুদ পূরণ হবে এবং সন্তান লাভ করলে একটি গরু কুরবানি (আকিকা) দেয়ার অনুরোধ জানায়। গৃহকর্ত্রী যথাসময়ে পুত্রসন্তান প্রসব করেন। সাথে সাথে তারা গরু কুরবানির আয়োজন শুরু করে। কিন্তু চারধারে হিন্দু বসতি। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল এবং তাকে গরু যবাই করতে দিল না। কিন্তু মুসলিমটি ওয়াদা পূরণে স্থিরপ্রতিজ্ঞ। দূরে এক জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে সে কুরবানির কাজ সমাধা করল। দরকারি গোশত নিয়ে বাকি অংশ গর্তের মধ্যে পুঁতে রেখে বাড়ি ফিরল। কিন্তু পথিমধ্যে অকস্মাৎ এক চিল ছোঁ মেরে তার হাত থেকে এক টুকরো গোশত নিয়ে উড়ে গেল বিক্রমপুরের দিকে। রাজা বল্লাল সেনের প্রাসাদের সম্মুখে চিলটি গোশতখণ্ড ফেলে দিলো। বল্লাল সেন টুকরোটি দেখে বুঝতে পারলেন, ওটি গরুর গোশত; যে গরুকে তাঁর জাতি দেবতাজ্ঞানে পূজা করে থাকে। তিনি সাথে সাথেই চারদিকে লোকলস্কর পাঠালেন কোন মহাপাপিষ্ঠ এই কাজ করেছে তার সন্ধান নিতে। বহু খোঁজাখুজির পর জঙ্গলে দেখা গেল যে, শিয়াল গোশত ছিড়ে খাচ্ছে। সবাই সন্দেহ করলো এটি উল্লিখিত মুসলিম পরিবারটির কাজ। সব কথা শুনে রাজা হুকুম দিলেন যে সন্তানের জন্য গোবধ হয়েছে, পরবর্তী ভোরেই যেন তার সামনে হাজির করে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। যার জন্ম এই মহাপাপের কারণ, পৃথিবীতে তাকে কিছুতেই বেঁচে থাকতে দেয়া উচিত নয়।
ঘোষণাটি আর গোপন রইল না। মুসলমান পরিবারটি গোপনে রাজার কথা জানতে পেরে ওই রাতেই স্ত্রী ও নবজাতক শিশুকে নিয়ে বল্লাল সেনের রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গেল। শুধু তাই নয়, সে ভারতবর্ষ অতিক্রম করে জন্মভূমি আরবদেশে চলে গেলেন। মুসলিম জাতির কেন্দ্রস্থল বা রাজধানী মাক্কা শারিফে বাস করতেন একজন বিপ্লবী নেতা আদম শাহ। তাঁর প্রকৃত নাম শেখ মহিউদ্দিন আবু সালেহ আরাবি। শিষ্যরা তাঁকে বাবা আদম শাহ নামে ডাকত। তাঁর কাছে পলায়নের কারণ ও আনুষঙ্গিক বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন বিক্রমপুর ফেরত মুসলিম নাগরিক।
মুসলিমরা স্বাধীনভাবে তাদের দিনি অনুষ্ঠান পালন করতে পারে না এমন দেশও আছে জানতে পেরে সাড়ে ৭ হাজার মুজাহিদ ও সঙ্গী সাগরেদ নিয়ে বিক্রমপুরের পথে যাত্রা করলেন। নেতার প্রতিজ্ঞা, তিনি সেখানে দিয়ে সহধর্মীদের দিন প্রচারের পথ বাধামুক্ত করে ছাড়বেন। পথে বহু দুঃখ কষ্ট ও বালা মুছিবত অতিক্রম করে বিক্রমপুরের উপকণ্ঠে হাজির হলেন। সেখানে মাসজিদ স্থাপন করে প্রকাশ্যে দিনি অনুষ্ঠানাদি পালন করতে শুরু করলেন। আযানের উদাত্ত ধ্বনি প্রান্তর অতিক্রম করে, রাজপ্রাসাদকে সচকিত করে তুলল। অনেক গরু কুরবানি দেয়া হলো। রাজা রাগে রোষে ফেটে পড়েন। তিনি সাথে সাথে নবাগতদের কাছে দূত পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, তার এবং তার রাজ্যের ধর্মের পক্ষে অবমাননাকর ধর্মীয় অনুষ্ঠান তাদের বন্ধ করতে হবে নতুবা তার রাজ্য ত্যাগ করতে হবে। আদম শাহ রাজা ও তার অনুচরদের শক্তি সম্পর্কে স্থির নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু তাতে ভীত না হয়ে রাজার কাছে জবাব পাঠালেন, ‘ লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এক আল্লহ ছাড়া মানিনা কারও গোলামি।’ আল্লহর সৈনিকরা জানিয়ে দিলো, তারা দীনি অনুশাসন পালন করে যাবেন তাতে রাজা যা খুশি করতে পারেন।
বল্লাল সেন এ খবর পেয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে আদম শাহ ও তাঁর ক্ষুদ্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। মুসলিম রণকুশলতার কথা বিক্রমপুরে অজানা ছিলো না। কাজেই বল্লাল সেন এমন ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন, যাতে করে পরাজয় ঘটলে তার পরিবারের লোকজন বিজয়ীদের হাতে না পড়ে। রাজ প্রাসাদের অভ্যন্তরে বিরাট একটি অগ্নিকুণ্ড বানালেন। হুকুম রইল যে, যুদ্ধ থেকে যদি তিনি আর না ফিরেন, তাহলে যেন রাজ পরিবারের সবাই চিতায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন এবং বিজয়ীদের হাতে পড়ে অপমানিত হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করে। বিজয়ী শত্রুদের অতর্কিত আক্রমণে যাতে করে তারা অপ্রস্তুত হয়ে না পড়ে এবং তার পরাজয়ের কথা আগেই জানতে পারে। তজ্জন্য রাজা এক সঙ্কেতের ব্যবস্থা করেছিলেন। সৈন্যসহ রাজা বাড়ি থেকে যাত্রাকালে তিনি তার বুকের কাছে পোশাকের ভাঁজের মধ্যে এক বার্তাবাহী পায়রা পুরে নিলেন। যুদ্ধে বিপর্যয় হলে তিনি কবুতরটি ছেড়ে দিবেন। ওটি প্রাসাদে ফিরে আসবে আর সেই হবে অগ্নিকু- জ¦ালানের নিশান আর রাজার প্রিয় পরিজনের আত্মাহুতি দানের সঙ্কেত।
আদম শাহর মসজিদ এখন যেখানে রয়েছে, সেখানেই উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়। এদেশে মুসলিম অভিযানের প্রথম দিকের অগ্রপথিকদের সাথে বিক্রমপুরের হিন্দু রাজা বল্লাল সেনের সেনাবাহিনী সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হলো। বেশ কিছুদিন ধরে তুমুল যুদ্ধ হলো। পক্ষ-বিপক্ষের জয় পরাজয় অনিশ্চিত রইল। কিন্তু শেষের দিকে রাজার জয় হতে লাগল। অবশেষ মুসলিম বাহিনীর সাড়ে ৭ হাজার মুজাহিদ সবাই শহিদ হলেন। বল্লাল সেন আদমের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। সূর্য অস্ত গেছে। তাঁর ভাগ্যের আসন্ন পরিনামের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিনি কিবলামুখী হয়ে সালাতে দাঁড়ালেন। সালাত আদায়রত আদম শাহর কাছে এসে রাজা শানিত তলোয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করলেন। কিন্তু সে আঘাতে কোনো ফল হলো না। নামাযান্তে আদম শাহ বল্লাল সেনের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালেন। একজন ইসলামের প্রতিনিধি আর অপরজন হিন্দুধর্মের নায়ক। আদম বললেন, কেন তুমি আমার ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে এসে? রাজা বললেন, আমি এবং আমার জাতি যাদের পবিত্র জ্ঞানে পূজা করি, তাদের যে হত্যা এবং অসম্মান করেছে আমি তাকে বধ করতে এসেছি। এ কথা বলেই রাজা আদম শাহর দেহে আবার তলোয়ার চালাতে লাগলেন। কিন্তু কোনোই ফল হলো না। আল্লহর পথের মর্দে মুজাহিদের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগল না। আদম তাঁর নিহত শিষ্যদের মৃত্যুদেহের দিকে তাকিয়ে ব্যথিত হয়ে উঠলেন। তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললেন, ‘তোমার হাতেই আমার মৃত্যু হবে এটি আল্লহর ইচ্ছা। তবে কাফেরের তলোয়ারের আঘাতে আমি মরব না। এই নাও আমার তলোয়ার। আমাকে খুন করো। আমার তলোয়ার ছাড়া অন্য কারুর অস্ত্র আমাকে আহত করতে পারবে না। তোমার উপরও শিগগির আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসছে। ফকিরের হাত থেকে তলোয়ার নিয়ে বল্লাল সেন আঘাত করলেন। এক কোপেই আদমের দেহ দ্বিখণ্ডিত হলো।
জয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাজা রক্ত ধুয়ে ফেলার জন্য নদীতে গেলেন। নদীর পানিতে যেই তিনি ঝুঁকেছেন, অমনি অমনি তার অজ্ঞাতে লেবাসের ভাঁজ থেকে পায়রাটি পালিয়ে গেল। রাজার পরিবার পরিজন প্রাসাদ-প্রাচীরে দাঁড়িয়ে ব্যাকুল আগ্রহে যুদ্ধের খবরের জন্য অপেক্ষা করছিল। অবশেষে তারা দেখতে পেল সন্ধ্যা আকাশে সেই পায়রার সাদা দুটো পাখা। সোজা উড়ে এল রাজপ্রসাদে। পাখিতো জানত না কত বড় ভয়াবহ পরিনামবাহী মিথ্যা খবর সে নিয়ে এসেছিল। রাজার বাড়ির প্রাসাদের উচ্চতম শীর্ষে বসে পরম তৃপ্তির সাথে সে বাঁকতে শুরু করে। আর সাথে সাথেই ওঠে অন্তঃপুরের মর্মভেদী রোদন আর বিলাপ। কিন্তু বিলাপ আর শোকেরও যে সময় ছিলো না। বিজয়ী সেনারা শিগগির এসে পড়বে এবং বর্ণগর্বী জাত্যাভিমানী এই রাজপরিবারের মান-ইজ্জত নষ্ট করে ফেলবে। তাই তখুনি কুণ্ডে অগ্নিসংযোগ করা হলো। পরিবারের সদস্যবৃন্দ জ¦লন্ত অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে শেষ হয়ে গেল।
ওদিকে রাজা নদী থেকে রক্ত ধুয়ে উপরে উঠতেই দেখতে পেলেন রাজপুরীর মাথায় ধুম্রকুণ্ডলী। ত্বরিৎগতিতে তিনি সেদিকে ধাবিত হলেন। উন্মাদের মতো ছুটে এলেন রাজপুরীতে। কিন্তু আদশ শাহর অভিশাপ বড় তাড়াতাড়ি লেগে গিয়েছিল। সেন যখন এসে পৌঁছলেন তখন সবই শেষ। রাজপুরীতে অবস্থানরত তার বংশের আর কেউ বাকি রইল না। দুঃখে-শোকে রাজা ঝাঁপ দিলেন সেই জ¦লন্ত কুণ্ডে। রাজা বল্লাল সেন আজও লোকমুখে ‘পোড়া রাজান’ নামে খ্যাত।
পূর্ব বাংলার মুসলিম রাজশক্তি চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠার পর বিজয়ী মুসলিমগণ আদম শাহ’র ট্রাজেডির স্থলে একটি মাসজিদ স্থাপন করেন। বাংলার স্বাধীন সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ এই মাসজিদ নির্মাণে অর্থায়ন করেন। মাসজিদগাত্রে উৎকীর্ণ লিপিতে বলা হয়েছে, ‘‘জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহর রাজত্বকাল (১৪৮৩ ইসায়ি) ৮৮৮ হিজরি সালের রজব মাসের মাঝামাঝি। এই মাসজিদ নির্মিত হয়। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, ইসলামের এই মহান মুজাহিদকে মুন্সীগঞ্জ জেলা ওয়েবসাইটে ধর্মান্ধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিন্ন আর একটি মত এরূপ:
আদম শাহ ১০৯৯ সনে পবিত্র মাক্কা নগরীর অদূরে তায়েফে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর জন্মের পক্ষকাল আগে জেরুজালেম ক্রসডযুদ্ধে তাঁর বাবা শহিদ হন ।খোরসান প্রদেশে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর বাবা আদম (রহ.) উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদের নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষালাভের পর বাবা আদম ইসলাম প্রচারের জন্যে বাংলাদেশে আগমন করেন।তিনি প্রথমে মহাস্থানগড়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তার সফরসঙ্গী ১২ জন আউলিয়ার অধীনে ১২টি মিশন গঠন করে এলাকায় পানির অভাব দূর করতে পুকুর খনন, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১২ জন ওলি বাবা আদমের নেতৃত্বে ইসলাম প্রচারে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন। বিক্রমপুর, মহাস্থানগড়, চট্টগ্রাম, নাঙ্গলকোট, বাঙ্গাল, দেবকোট, ইন্দ্রপস্ত, প্রয়াগ, পাটুলীপুত্র, নাগপুর, দাক্ষিণাত্য বর্তমানে পুণ্ড্রবর্ধন এলাকায় ইসলাম প্রচার করেন। ১২ জন ওলির মধ্যে ৫ জনের মাজার মুন্সীগঞ্জে অবস্থিত। তাঁরা হলেন : ১. শেখ মখদুম আলমুয়াসসিস (রহ.) মাজার দরগাহ বাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, ২. আযৃযায়িরা বিন সাঈদ (রহ.), ধীপুর, মুন্সীগঞ্জ, ৩. খুবরাত ইবনে মুদাককিক (রহ.) মাজার মুন্সীগঞ্জ, ৪. ইমামুদ্দীন বাগদাদী (রহ.) মাজার মুন্সীগঞ্জ, ৫. মুষাব্রীয়ান আলবসরী (রহ.) মুন্সীগঞ্জ। এছাড়াও বাবা আদম (রহ.)-এর কয়েকজন বিখ্যাত খলিফা বিক্রমপুরে (মুন্সীগঞ্জ) কয়েকটি মিশন পরিচালনা করতেন। এদের মধ্য কেওয়ার ও রাম গোপালপুর ১১৫২-তে ইসলাম প্রচার করেন। তাদের নামের মাজার শনাক্ত করা যায়নি।
ইসলাম প্রচারের সময় রাজা বল্লাল সেনের রাজকর্মচারীদের সঙ্গে সুফি শেখ মখদুম আল মুয়াসসিসের বিরোধ বাধে। রাজা বল্লালসেন তাকে টঙ্গীবাড়ী ধীপুর থেকে কারারুদ্ধ করেন। এ খবর শুনে রাজা আদম (রহ.) মহাস্থানগড় থেকে বিক্রমপুর আসেন। কারাগারে শেখ মুখদুমকে দেখে বল্লাল সেনের ভাগ্নে অজয় সেনের একমাত্র কন্যা মাধরী সেন ইসলাম গ্রহণ করেন শুনে রাজা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১১৭৪ সালে বিক্রমপুরের কালাইচং ময়দানে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সে ধর্মযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন বাবা আদম শহিদ (রহ.)। এভাবে কয়েকবার সম্মুখ ও নৌ-য্দ্ধুও হয়েছিল বাবা আদমের (রহ.) সঙ্গে বল্লাল সেনের। কথিত আছে, ১০ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ১১৭৮ সালে মুন্সীগঞ্জে কানাইচং ময়দানে ১০ দিনব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধে বহু সংখ্যক সৈন্য ও মুজাহিদ নিহত হন। এ যুদ্ধে বল্লাল সেনের সৈন্য ছিল ২০ হাজার, অপরদিকে মুজাহিদ ও সেচ্ছাসেবক বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার।
যুদ্ধে পরাজয়ের আশংকায় বল্লাল সেন ২০ সেপ্টেম্বর ১১৭৮ সালে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব করলে বাবা আদম সরল বিশ্বাসে মেনে নেন। সেদিন রাতে ঘটে বিশ্বাসঘাতকতা।বিক্রমপুরের দরগাহ বাড়িতে এশার নামাজের পর বাবা আদম (রহ.) মোরাকাবা থাকা অবস্থায় বল্লাল সেন তার তলোয়ার দিয়ে তাকে হত্যা করে। বাবা আদম (রহ.) শহিদ হওয়ার পর রিকাবী বাজার দীঘিরপাড় সড়কের পাশে দাফন করা হয়। ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে বিক্রমপুরের শাসক মহান মালিক কাফুরশাহ বাবা আদমের খানকার ওপর একটি চমৎকার মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটির ৬ গম্বুজ পুরাকালের আত্মত্যাগী বাবা আদমের কথা মনে করিয়ে দেয়।
হদিস
১. মুন্শী রহমান আলী তায়েশ: তাওয়ারিখে ঢাকা, (তরযমা ও সম্পাদনা: ড. এ. এম. এম. শরফুদ্দীন) দিব্য প্রকাশ, ৩৮/২ ক বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, ফেব্রুয়ারি ২০০৭
২. এফ বি ব্রাডলী বার্ট: প্রাচ্যের রহস্য নগরী (Romance of an Easter Capital, তরযমা: রহীম উদ্দীন সিদ্দিকী), নবরাগ প্রকাশনী, দ্বিতীয় মুদ্রণ মে ২০১০, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
৩. মুক্তবিশ্বকোষ, উইকিপিডিয়া, বাবা আদম মসজিদ, সংগৃহীত: ১৬.০৪.২০১৭
৪. তানভীর হাসান: পুরাকীর্তি, বাবা আদম মসজিদ, দৈনিক প্রথম আলো, কারওয়ান বাজার ঢাকা, ১০ অক্টোবর ২০১৪
৫. ছবি: ইন্টারনেট