আযাদ আলাউদ্দীনের গদ্যগ্রন্থ সাংবাদিকতার বাঁকে বাঁকে

আল হাফিজ : 
বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ পেশা হচ্ছে সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতাকে যেমন এক মহান পেশা হিসেবে আমাদের সমাজে বিবেচনা করা হয় আবার কারো কারো অপকর্মের কারণে এ পেশাকে ঘৃণ্য চোখেও দেখা হয়। তবু কিছু কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পেশায় নিজেদেরকে জড়িয়ে আত্মতৃপ্তি লাভের পাশাপাশি অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যান আনন্দচিত্তে। তেমনই একজন পেশাদার সফল সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন। ‘সাংবাদিকতার বাঁকে বাঁকে’ তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভাষাচিত্র। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩-এ দেশজ প্রকাশন,ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী হাশেম আলী এবং অঙ্গসজ্জা করেছেন শফিক আহমেদ। সুন্দর ছাপা ও বাঁধাই করা ৮০ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ২৬০ টাকা। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে কবি মতিউর রহমান মল্লিক, সাংবাদিক সালাহউদ্দিন বাবর, প্রফেসর মাহমুদ হোসেন দুলাল এবং ড. মিজান রহমানকে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩-এ প্রকাশিত ‘সাংবাদিকতার বাঁকে বাঁকে’ আযাদ আলাউদ্দীনের প্রথম বই। পেশাগত জীবনে নানামাত্রিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মানুষ তার অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করে। জীবন-যাপনে বৈচিত্র্যময় বাস্তবতার অভিমুখে যাত্রার মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা। যাপিত জীবনের হরেক রকম ঘটনা-দুর্ঘটনা, ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-দুর্দশা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পারার মধ্যেই থাকে সাফল্যের সূত্র। দুই যুগের পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত এ গ্রন্থটি সাংবাদিকতায় আগ্রহী নতুনদের পেশাগত জীবনে উপকারে আসবে বলে আমরা বিশ^াস করি। কেননা গ্রন্থকার আযাদ আলাউদ্দীনের পথচলা যে সব সময় মসৃণ ছিলো তা বলা যায় না বরং অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ধাপে ধাপে তাকে সফলতার ছোঁয়া পেতে হয়েছে। ঘটনাবহুল জীবনের নানা বাঁকে নানা ভাবে তাকে নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। যে অভিজ্ঞতা একজন নতুন সাংবাদিককে পথনির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি।

সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন ১৯৯৫ সালে দৈনিক ইনকিলাবের চিঠিপত্র কলামে লেখালেখির মধ্য দিয়ে সৃজনশীল লেখালেখি চর্চার জগতে প্রবেশ করেন। তারপর সংবাদ সংগ্রহের নেশায় ছুটে যান এখানে সেখানে। শখের এই নেশা ধীরে ধীরে এক সময় পেশায় পরিণত হয়। ইতোমধ্যে তিনি দুই যুগ অতিবাহিত করেছেন গণমাধ্যমের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ জগতে। তার এই পথ পরিক্রমায় যুক্ত হয়েছে অভিজ্ঞতার ভালো-মন্দ উভয় দিক। যা তিনি সাংবাদিকতার বাঁকে বাঁকে গ্রন্থে তুলে ধরেছেন সযত্নে। একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার ডায়েরির পাতায় জমে থাকা খবরের অন্তরালের খবর গুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে। যা পাঠককে আনন্দ বেদনায় মুগ্ধ করবে।

কালের সাক্ষী এবং ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সাংবাদিকরা তাদের ডায়েরির পাতায় হাসি-আনন্দ যেমন ধরে রাখেন তেমনি থাকতে পারে দুঃখ-কষ্টের ছাপও। নানা মাত্রিক অভিজ্ঞতার আলোকে আযাদ আলাউদ্দীন গ্রন্থটি সাজিয়েছন। ফলে পাঠক পাবেন নানান রসের ব্যঞ্জনা। পাঠক সমাজ এ গ্রন্থের সূচিপত্রের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন গ্রন্থটির যথার্থতা। ২২টি আলাদা আলাদা বিষয় এখানে সূচিবদ্ধ হয়েছে যেমন: ১. সাংবাদিকতায় যুক্ত হলাম যেভাবে, ২. পেশাদার সাংবাদিকতায় যুক্ত হওয়া, ৩. বরিশাল প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার বিড়ম্বনা, ৪. টেলিভিশন সাংবাদিকতা, ৫. বরিশাল বেতারের প্রথম স্থানীয় সংবাদ, ৬. সিডর সাংবাদিকতা, ৭. চোখের জলে ভেজা ঈদ, ৮. সাংবাদিক জাকির ভাইয়ের স্মৃতি, ৯. গরিবের উপকার করে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছিলাম, ১০. বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিতার স্মৃতি, ১১. মিডিয়া কর্মীদের দেশ প্রেম, ১২. সাংবাদিকতায় প্রথম পেশাগত সম্মাননা, ১৩. মুক্তবুলি আমার কাছে সন্তানের মতো, ১৪. সাংবাদিক তৈরির আইকন দৈনিক সংগ্রাম, ১৫. সাংবাদিকতা পেশায় কেন আসতে হবে, ১৬. দৈনিক সংবাদপত্রের কাঠামো, ১৭. লেখালেখির তৃতীয় চোখ, ১৮. হতে পারেন কন্টেন্ট রাইটার, ১৯. সাংবাদিক না হয়েও পত্রিকায় লেখা যায় কিন্তু কিভাবে?, ২০. ফিচার লেখার কলাকৌশল, ২১. সাংস্কৃতিক প্রতিবেদন লেখার কৌশল এবং ২২. মফস্বল সাংবাদিকতা।

ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য সংস্কৃতি এবং সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত রয়েছেন আযাদ আলাউদ্দীন। এই সংযুক্তির আলোকেই রচিত হয়েছে সাংবাদিকতার বাঁকে বাঁকে শীর্ষক গ্রন্থটি। সাংবাদিক পেশায় যারা কাজ করতে আগ্রহী গ্রন্থটি তাদের ভালো লাগবে বলে আমরা মনে করি। আমরা গ্রন্থটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করি।

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *