জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত : পর্ব – ৯

 

নগর সভ্যতার ধ্বংসকারী আর্য

অশ্ববাহিত জঙ্গি রথে চেপে আর্যরা ভারতবর্ষে আসে।১ আর্যরা ছিলো যোদ্ধার জাত, আর সিন্ধু সভ্যতার বাহকরা ছিলো বণিকের জাত। এই বণিকের ঐশ্বর্য ও ধনদৌলত আর্যদের মনে ঈর্ষার সঞ্চার করেছিল। সেজন্যই আর্য গ্রামবাসীরা সিন্ধু সভ্যতার নগরসমূহকে ধ্বংস করতে প্রবৃত্ত হয়েছিল। নগরসমূহকে ধ্বংস করে বিজয়গৌরবের উন্মত্ততায় তারা তাদের প্রধান দেবতা ইন্দ্রের নাম রেখেছিল পুরন্দর।২

আমি ইন্দ্র সোমপান মত্ত হয়ে শম্বরের নবনবতি সংখ্যক পুরী এককালে ধ্বংস করেছি। আমি যখন অতিথিগ¦ দিবোদাসকে যজ্ঞে পালন করেছিলাম তখন তাকে শততম পুরী বাসের জন্য দিয়েছিলাম।(ঋগবেদ- ৪/২৬/৩) ৩ অর্থাৎ ইন্দ্র শম্বরের ৯৯টি পুরী ধ্বংস করেছিলেন এবং দিবোদাসকে শততম পুরী বসবাসের জন্য দিয়েছিলেন।৪

ইন্দ্র শম্বরের নগরসমূহ ধ্বংস করেন এবং ৫০ হাজার কৃষ্ণবর্ণ শত্রুকে (ভারতের আদিবাসী দ্রাবিড়দের) বিনাশ করে (ঋগে¦দ ৪/১৬/১৩)। তিনি দাসবর্ণকে (আদিবাসী) নিকৃষ্ট স্থানে অবস্থাপিত করেন (ঋগে¦দ ২/১২/৪)। দুস্যদের (ভারতের প্রাচীন নাগরিক) বধ করে আর্যবর্ণকে রক্ষা করছেন (ঋগে¦দ ৩/৩৪/৯)।৫ নিজেদের রক্ষা এবং অন্যান্যদের কতল করাই ব্রাহ্মণ্যবাদীদের সহজাত বৈশিষ্ট্য।

সিন্ধু সভ্যতা : আর্যহিন্দুরা আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর পূর্বে এই নাগরিক সভ্যতা হালাক করে।

 আর্যরা নারী অপহরণের উদ্যোক্তা

ভারতীয় নারীদের ওপর আর্যদের অত্যন্ত লোভ ছিলো এবং তাদের পাবার জন্যই তারা ইন্দ্রের কাছে পুন: পুন: প্রার্থনা করত। পত্নী অর্থে ‘বধু’ শব্দের প্রয়োগ। সামগায়নের উনাদিসূত্র (১/৮৫) অনুযায়ী ‘বধু’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে যাকে বহন করে আনা হয়েছে। তার মানে যাকে কেড়ে আনা হয়েছে। নৃতত্ত্বের ভাষায় যাকে ‘ম্যারেজ বাই ক্যাপচার’ বলা হয়।৬ আর্য হিন্দু পুরুষ কর্তৃক অনার্য বা ভারতীয় নারী অপহরণই সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম গুম অপহরণের ঘটনা। বর্তমান দুনিয়ায় গুম, অপহরণ, নিখোঁজ, কিডন্যাপ, পাচারের সূত্র এখানেই। আর্যহিন্দুরাই পৃথিবীতে এই গুম সন্ত্রাসের কুকর্মের জন্মদাতা!

প্রাগার্যজাতিসমূহের তুলনায় আর্যরাই ছিলো বর্বর জাতি। বৈদিক আর্যরা ভারতীয় আদিবাসীদের দুস্যু, দাস, অনার্য, অসুর, পণি, কিরাত, নিষাদ প্রভৃতি অবজ্ঞাসূচক শব্দের দ্বারা অভিহিত করত। এদেশে আগমনের সময় থেকেই বৈদিক আর্যরা উপমহাদেশের প্রাচীন অধিবাসীদের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম চালায়। বঙ্গজনপদকেও আর্য ভাষাভাষীগণ তষ্কর, বর্বর, পক্ষী, অচ্ছ্যুত, ম্লেচ্ছ ইত্যাদি অধ্যূষিত দেশ বলে গণ্য করত। ২৭

খোঁজ :
১. ড. অতুল সুর: হিন্দু সভ্যতার বনিয়াদ, কলিকাতা ৯, জুন ১৯৯১, পৃ ২৫
২. ওই, পৃ ১৪
৩. ঋগে¦দ-সংহিতা [ প্রথম খণ্ড], হরফ প্রকাশনী, এ-১২৬ কলেজ স্ট্রিট মার্কেট, কলকাতা ৭, পরিমার্জিত সংস্করণ ২০০৪, পৃ ৩৮২
৪. ওই, পৃ ৪৭
৫. ওই, পৃ ৪৭
৬. ড. অতুল সুর: হিন্দু সভ্যতার বনিয়াদ, কলিকাতা ৯, প্রথম প্রকাশ জুন ১৯৯১, পৃ ১৪, ৩৮
৭. ওই, পৃ ৫, ১৩; কাবেদুল ইসলাম: প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী, উত্তরণ, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০. প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৪, পৃ ২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *