প্রুফ রিডার হিসেবে চাকরির সুযোগ

আব্দুর রাজ্জাক সরকার

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘিরে জমে উঠেছে প্রকাশনা পাড়া। বইমেলাকে কেন্দ্র করে এ সময় দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। সুযোগ সৃষ্টি হয় নানান পেশার। এমনই একটি পেশা প্রুফ রিডিং। প্রুফ রিডিংয়ের চাকরিতে নিজের সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ আছে। নিজের সৃজনশীলতা দেখিয়ে কম সময়ে যাঁরা ভালো আয় করতে চান, তাঁরা প্রুফ রিডিংকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। তবে শুধু বইমেলার সময় নয়, সারা বছরই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা, সংবাদপত্র ও প্রকাশনায় প্রুফ রিডার নিয়োগ দেওয়া হয়।

কাজের ক্ষেত্র

সম্পাদনার সর্বশেষ ধাপ প্রুফ এডিটিং। যেহেতু সবশেষ ধাপ, তাই কাজটা অনেক স্পর্শকাতর। কারণ, তাঁদের হাত থেকে ভুল চলে গেলে আর সংশোধনের সুযোগ থাকে না। বিশ্বের অনেক ভাষায় প্রুফ রিডিংয়ের কাজ বর্তমানে কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে মিডিয়া হাউসগুলো নিজস্ব বানানরীতি অনুসরণ করে, লেখকেরাও ভিন্ন ভিন্ন বানান রীতি অনুসরণ করেন। ফলে আমাদের দেশে প্রুফ রিডিংয়ের কাজের চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে। এ বিষয়ে এডিটিং হাউস সম্পাদনার প্রধান সম্পাদক রাখাল রাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘লেখকেরা আলাদা আলাদা বানানরীতি অনুসরণ করেন। তাঁদের লেখার ধারাবাহিকতা ও স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থায় প্রুফ রিডারদের চাহিদা রয়েছে।’

রাখাল রাহা বলেন, ‘প্রুফ রিডারকে বুঝতে হবে কোন লেখক এবং কোন হাউস কোন বানানরীতি অনুসরণ করে, সেটা মেনে কাজ করতে হবে। বাংলাবাজারকেন্দ্রিক প্রকাশনা সংস্থাগুলোয় প্রুফ রিডারদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কারণ, সেখানে কারিগরি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। লেখা কম্পিউটার বা ওয়ার্ড ফাইলে নেওয়ার সময় ভেঙে যায়, সেগুলো সঠিকভাবে সম্পাদনার জন্য প্রুফ রিডার দরকার।’

বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ছাড়া প্রুফ রিডার হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে। এ ছাড়া প্রোডাকশন হাউসগুলোয় নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন ধরনের পাণ্ডুলিপি সংশোধনের জন্য প্রুফ রিডার নিয়োগ দেওয়া হয়।

যোগ্যতা

প্রুফ রিডিংয়ে ভালো করতে চাইলে সাহিত্যবিষয়ক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ পেশায় শিক্ষাসনদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। নিয়মিত অভিধান পড়তে হবে, যেন প্রয়োজনের সময় দ্রুত সঠিক বানানটি বের করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের পিএইচডি গবেষক কবীর আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রুফ রিডিংয়ের চাকরিতে নিজের সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ আছে। মনোযোগ দিয়ে স্বল্প পরিশ্রমে সম্মানজনক উপার্জন করা সম্ভব। বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও কনটেন্ট রাইটিং হাউসে এই পেশায় দক্ষ জনবল দরকার হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রুফ রিডার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে নিজের জানাশোনার আগ্রহ থাকা দরকার। শুদ্ধ করে বানান লেখার খুঁটিনাটি বিষয় আয়ত্তে রাখতে হবে। বানানের ক্ল্যাসিক ও আধুনিক ফরম্যাট সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।’

চাকরির খোঁজখবর

প্রুফ রিডার নিয়োগের জন্য গণমাধ্যম কিংবা চাকরির ওয়েবসাইটে খুব বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। পরিচিতজনদের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁরা এই পেশায় আসতে চান, তাঁদের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। হাওলাদার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মো. মাকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে যাঁরা প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ করেছেন বা বর্তমানে করছেন, সাধারণত তাঁদের মাধ্যমে নতুন কর্মী নেওয়া হয়। অন্যান্য চাকরির মতো পত্রিকায় তেমন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। শুধু বইমেলার সময় নয়, সারা বছরই প্রুফ রিডারদের দরকার হয়। কারণ, বইমেলায় বই আসে আগে তৈরি হয়ে। সেগুলো নিখুঁতভাবে প্রস্তুত করার জন্য আগে থেকেই কাজ শুরু করতে হয়। তাই প্রতি মাসেই প্রুফ রিডার নিয়োগ দেওয়া হয়।’

বেতন কাঠামো

বাংলাবাজারভিত্তিক কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসিক ও চুক্তি ভিত্তিতে প্রুফ রিডার নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ফর্মাভিত্তিক হিসেবেও কাজ দেওয়া হয়। মাসিক বেতন সাধারণত ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। যাঁর কাজ যত ভালো, তাঁর আয় তত বেশি। ভালো কাজ করে কেউ কেউ মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকাও আয় করেন। আর ফর্মাভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন প্রতি ফর্মা ২০০ টাকা দেওয়া হয়। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রতি ফর্মা এক হাজার টাকাও দেওয়া হয়। গবেষণাধর্মী বইগুলোর ক্ষেত্রে প্রুফ রিডারদের আয় অনেক বেশি হয়। কারণ, সেগুলোর পৃষ্ঠা বেশি এবং অনেক তথ্য থাকে। এসব সংশোধনের জন্য অভিজ্ঞ প্রুফ রিডার দরকার পড়ে।

 

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *