ফারাক্কা সৃষ্ট বন্যায় ভাসছে দেশ

মাহমুদ ইউসুফ

বন্যায় ভাসছে উত্তরবঙ্গ। মধ্যাঞ্চল তক হানা দিয়েছে। পূর্বাঞ্চলও বাদ যায়নি। বিপর্যস্ত কৃষি, বিপর্যস্ত মানব জীবন। একই চালার নিচে মানুষ ও গৃহপালিত পশু-পাখির বসবাস। খাদ্যের জন্য ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। পানির মাঝেই অবস্থান, অথচ খাবার পানির ভীষণ সঙ্কট। অতিকষ্টে কালাতিপাত করছে বন্যাদুর্গত বনি আদম। শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে পরিবার-বন্যার্তদের কষ্ট সীমাহীন। বন্যার কাছে নিদারুণ অসহায় মানুষ। পানিই জীবন পানিই মরণ। মরুকরণের পথের এলাকায় পানি প্লাবন। ফারাক্কা বাঁধের অশুভ প্রতিক্রিয়ায় দেশের উত্তরবঙ্গে মরুকরণ শুরু হয়েছে অনেক আগে। অথচ সেখানেই বন্যার মরণ কামড়। এটা নতুন কোনো ইস্যু নয়। যুগ যুগ যাবত চলে আসছে এই জীবন মরণ সমস্যা। ফারাক্কা-তিস্তা বাঁধ দিয়ে শুকনো মওসুমে পানিশূণ্য আর বর্ষা মওসুমে পানিতে ডুবিয়ে মারতে হবে বাংলাদেশিদের।

ফারাক্কা-গজলডোবা বাঁধের কারণে বাংলাদেশে শত শত নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। অনেক নদী বিলুপ্ত প্রায়। অনেক নদী সরু খাল-নালা হয়ে অস্তিত্ব জাহির করছে। নামেই নদী। ফলে ভারত ফেরত বর্ষার ঢল সামাল দেওয়ার সক্ষমতা নদীগুলোর নেই। ফল যা হবার তাই। বন্যায় মরছে মানুষ, মরছে পশু-প্রাণী। ডুবছে ফসল, ডুবছে ঘরবাড়ি। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে ভারতের নদীবাঁধের ফলে সৃষ্ট বন্যায়। ‘পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিপুর নামক স্থানে একটি ব্যারাজ নির্মাণের ফলে তাদের পানি অতিবৃষ্টির সময় গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।’ (ড. আইনুন নিশাত) একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় মন্তব্য, এখন বর্ষাকাল বটে, বলকে বৃষ্টিপাতের আধিক্য নেই। অথচ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপকভাবে বন্যা দেখা দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভারতের ঠেলে দেয়া পানির ‘সুফল’। এই অস্বাভাবিক বন্যা ও তার ব্যাপক ক্ষতির জন্য ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিই দায়ী। ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভারত ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়েছে। এতে একযোগে বিপুল পানিরাশি বাংলাদেশে আছড়ে পড়ায় এই দুর্ঘট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’ পানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক ভিসি ড. মোহাম্মদ শাহজাহান লিখেছেন, ‘উজানে যে বৃষ্টিপাত হয় তা মওসুমের প্রথম থেকেই স্বাভাবিক প্রবাহে ছেড়ে দিলে বাংলাদেশে বন্যার প্রকোপ থাকে না। কিন্তু ভারতে সে পানি আটকে রাখা হয়। পরে পানি বেশি বেড়ে তা একসাথে ছেড়ে দেয়ার ফলে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্ট হয়- যা বর্তমানে দেখা দিয়েছে। এ পানির সাথে যে তলানী আসে তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি- যা নদীতে জমা হয়ে নদী ভরাট করে দিচ্ছে। নদী খনন করে বন্যার প্রকোপ স্থায়ীভাবে কমানো সম্ভব নয়।’

ফারাক্কা বাঁধ বর্ষাকালে সৃষ্টি করছে নুহের প্লাবন, আর হেমন্ত, শীত, বসন্ত, গ্রীষ্মকালে করছে ইয়াজিদের কারবালা। ফারাক্কা বাঁধ প্রসঙ্গে কারা নাকি বলেছিল, ভারতকে সন্তুষ্ট করে এতবেশি পানি আনব যে, মরুপথের উত্তর বঙ্গে বঙ্গোপসাগর বয়ে যাবে।’ সত্যিই বর্তমানে সাগরে ভাসছে বন্যাদুর্গত জেলাসমূহ। ভারত থেকে আগত কোটি কোটি টন পলি ও ঢলের পানির বন্যায় করুণ রোনাজারি আকাশে বাতাসে। বিভিন্œ তথ্যে দেখা যায়, বন্যার পানির ৯৩% ভারত থেকে আগত। বাকি ৭ শতাংশ বৃষ্টির। বাংলাদেশের বন্যা-জলোচ্ছাস প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, মানবসৃষ্ট, ভারতসৃষ্ট। বন্যাকে রুখতে হবে। উৎসে আঘাত হানতে হবে। শেকড়ে হাত না দিয়ে শাখা নিয়ে চিল্লাচিল্লি করলে লাভ হবে না। বন্যা প্রতিরোধ-প্রতিকারের একমাত্র উপায় ৫৭টি নদীর উজানে দেওয়া বাঁধগুলো গুড়িয়ে দেওয়া। এসব বাঁধের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান কোনো অঙ্ক সংখ্যা দ্বারা নির্ণয় করা অতীব কঠিন। শুধু বন্যাই নয়, ফারাক্কার ক্ষয়ক্ষতি বিশাল, বিরাট।

ফারাক্কা বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি:
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে নদী, দিয়েছে বন্যা
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে সুখ-শান্তি, দিয়েছে দুঃখ-বেদনা
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে মিঠা পানি, দিয়েছে নোনা পানি
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে সুস্থতা, দিয়েছে রোগ-ব্যাধি
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে নদীর স্রোত, দিয়েছে নদীর মরণ
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে মৎস্য সম্পদ, দিয়েছে তলানি
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, দিয়েছে আর্সেনিক
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে বন্ধুত্ব, দিয়েছে শত্রুতা
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে হৃদ্যতা, দিয়েছে তিক্ততা
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে আশা, দিয়েছে হতাশা
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে ঘুম, দিয়েছে টেনশন
ফারাক্কা বাঁধ
কেড়ে নিয়েছে আরাম, দিয়েছে হারাম

Next Barisal banner ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *