বরিশাল বেতারের প্রথম স্থানীয় সংবাদ…

আযাদ আলাউদ্দীন

সাংবাদিকতা পেশার সুবাদে বরিশাল বেতারে প্রথম ‘কথিকা’ লেখার আমন্ত্রণ পাই ২০০৪ সালে। তখন আমি দৈনিক দক্ষিণাঞ্চলের বার্তাসম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। বেতারের বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানগুলো গুরুত্ব সহকারে কভারেজ করতাম দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকায়। বেতারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তাদের বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানের প্রেসবিজ্ঞপ্তি ও ছবি অফিসে দিয়ে যেতেন। সেগুলো সম্পাদনা করে পত্রিকায় ছাপাতাম আমরা। একদিন বেতারের তৎকালিন আঞ্চলিক পরিচালক মীর শাহ্ আলম বললেন- আপনি বেতারে কথিকা লিখুন। আমি লিখতে রাজি হওয়ার পর অনুষ্ঠান বিভাগ থেকে কথিকার বিষয়বস্তু জানিয়ে চিঠি দেয়া হলো। প্রথম কথিকার বিষয় ছিলো ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের ভূমিকা’। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একটি করে প্রতিমাসে প্রায় চারটি কথিকার স্ক্রিপ্ট লিখে জমা দিতাম। অনেক সময় বেতারে গিয়ে ভয়েস রেকর্ডিং করে আসতাম। এভাবে চলার দীর্ঘদিন পর ২০০৭ সালে বরিশাল বেতারে স্থানীয় সংবাদ চালুর বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। তখন শুধু ঢাকা বেতারের সংবাদ রিলে করে শোনানো হতো। সে বছরের শুরু থেকেই বরিশাল বেতারের স্থানীয় সংবাদ বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বার্তা বিভাগে যোগ দেন উপ-বার্তা নিয়ন্ত্রক সুব্রত কুমার রায়। তিনি এসে পুরো সেটআপ সাজানোর কাজ শুরু করেন।

বরিশাল বেতারে স্থানীয় সংবাদ প্রচার শুরু হওয়ার আগেই অর্থাৎ জুন মাসের দিকে আমরা চারজন সাংবাদিক অস্থায়ী নিয়োগের ভিত্তিতে যোগদান করে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করছিলাম। এই চারজন হলেন- সিনিয়র সাংবাদিক কাজী মকবুল হোসেন, আমি আযাদ আলাউদ্দীন, প্রাচুর্য রানা ও এম মিরাজ হোসাইন। আমরা প্রতিদিন জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো নিউজগুলো সম্পাদনা করে ৫মিনিটের স্থানীয় সংবাদ স্ক্রিপ্ট তৈরি করতাম। যাকে সংবাদপত্রের ভাষায় বলা হয় ‘ডামি’র কাজ। অর্থাৎ পূর্ব প্রস্তুতি। সরকারিভাবে এই পদটির নাম ‘সংবাদ অনুবাদক’ হলেও মূলত আমরা কাজ করেছি সংবাদ সম্পাদনার। প্রতিদিন আমাদের দুজনের ডিউটি পড়তো। আমি এবং প্রাচুর্য রানা একদিন ডিউটি করতাম, পরদিন ডিউটি করতেন কাজী মকবুল হোসেন ও এম মিরাজ হোসাইন। এভাবে চলতে থাকে আমাদের বেতার নিউজের কাজ। জুন থেকে কাজ করে সম্মানী ভাতা পেলেও পুলিশ ভেরিপিকেশন শেষ করে আমাদের নিয়োগে চুড়ান্ত সাইন হয় জুলাইর মাঝামাঝি সময়ে।

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৬ জুলাই ২০০৭ ! সেদিন ডিউটিতে ছিলাম আমি এবং প্রাচুর্য রানা। আমরা নিউজ লিখে সংবাদ বিভাগের উপ-বার্তা নিয়ন্ত্রক সুব্রত কুমার রায়ের হাতে জমা দিলাম। তিনি দেখে চুড়ান্ত স্ক্রীপ্ট তুলে দিলেন একজন প্রেজেন্টারের হাতে। কাকতালীয়ভাবে দেখলাম সেই নিউজ প্রেজেন্টার হচ্ছেন আমার-ই বাংলা বিভাগের সহপাঠি নেজারুল ইসলাম বাবু ! পরে বাবুকে বললাম- বরিশাল বেতারের প্রথম স্থানীয় সংবাদ লেখক হলাম আমরা (আযাদ আলাউদ্দীন ও প্রাচুর্য রানা) আর সংবাদ পাঠক হলে তুমি নেজারুল ইসলাম বাবু। এভাবেই বরিশাল বেতারের প্রথম স্থানীয় সংবাদ প্রচারের ইতিহাসের সাথে যুক্ত হয়ে রইলাম আমরা। পরে আবশ্য খুব বেশিদিন কাজ করা হয়নি বেতারে। তখন ডিউটি বাবদ সম্মানী ছিলো খুবই কম। এরপর ৬ মাস কাজ করে পর্যায়ক্রমে আমরা ছেড়ে দেই বরিশাল বেতার। অবশ্য এখন এই কাজের সম্মানী বেড়েছে প্রায় ১০গুণ। আমাদের সময় যুক্ত হওয়া সিনিয়র সাংবাদিক কাজী মকবুল হোসেন এখনো যুক্ত আছেন বরিশাল বেতারে। তিনি নগর সংবাদদাতা হিসেবে প্রমোশন পেয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বরিশাল বেতারে অস্থায়ী নিয়োগের কপি নিচে সংযুক্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *