১২ জুলাই
বাংলাদেশের পরাধীনতা দিবস
সোনারগাঁওকেন্দ্রিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ ১৩৩৮ সালে। ১৩৩৮ সালই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উদয়লগ্ন। এর ১২ বছর পর ১৩৫২ সালে হাজি শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ নবদ্বীপ, গৌড়, সোনারগাঁও নিয়ে বৃহৎ বাংলাদেশ গঠন করেন। তিনি এর নাম দেন বাঙ্গালাহ। বাঙালি জাতিসত্তার জন্ম এ সময় থেকেই। তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক হিসেবে সুলতান শামসুদ্দিনের নাম চিরভাস্মর। শুধু তাই নয়; বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলা শিল্প সাহিত্যের পয়দাও ইলিয়াস শাহর হাত ধরে। তিনি নিজে শাহ-ই-বাঙ্গাল উপাধি ধারণ করে বাঙালি জাতির শুভযাত্রা উদ্বোধন করেন। শুরু হয় বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র পথচলা।
জাতি ও রাষ্ট্রের এই অগ্রযাত্রা চলে ১৫৩৮ সাল পর্যন্ত ২০০ বছর। এ সময় সুলতানি আমলের পরিসমাপ্তি ঘটে। বাংলায় শুরু হয় আফগান শাসন। আফগানরাও স্বাধীনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। আফগানদের ৩৮ বছর ও সুলতানি আমলের দুশ বছর মোট ২৩৮ বছর বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণালী অধ্যায়। সোনারগাঁও ছিলো তখন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ও সমৃদ্ধশালী শহর। ঐতিহাসিকরা একে বলেছেন প্রাচ্যের রহস্য নগরী। কিন্তু এই উন্নতি অগ্রগতির ছেদ ঘটায় দিল্লির মুঘল শাসকরা। দিল্লির আক্রমণে দেশ ও জাতির ওপর দুর্যোগ নেমে আসে ১৫৭৬ সালে। সাম্রাজ্যবাদী সম্রাট আকবর ও দিল্লির বেদিমূলে বাংলার আযাদি নির্বাসিত হয় ১২ জুলাই ১৫৭৬। তাই বাংলাদেশের পরাধীনতা দিবস ১২ জুলাই। এ বছর বাংলার পরাধীনতার ৪৪২তম বার্ষিকী।
১৫৭৬ সালে রাজমহলে বাংলার আযাদি বাহিনী ও দিল্লির আগ্রাসি বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয় লড়াই। এ লড়াই দিল্লি বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন খান জাহান ও রাজা টোডরমল। আর বাঙালি বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খান কররানি ও তার যোগ্য সেনাপতি মহাবীর কালাপাহাড়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলা বাহিনী পরাজিত হয় এবং দাউদ খান ও কালাপাহাড় নিহত হয় দিল্লির দুষ্ট বাহিনীর হাতে। তবে বাঙালি জাতির এ পরাজয়ের পিছনে মূখ্য নিয়ামক ছিলো যশোরের জমিদার প্রতাপাদিত্যের পিতা শ্রীহরি বা শ্রীধর ও চাচা বসন্ত রায়ের বিশ্বাসঘাতকতা। এর মাধ্যমেই অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতা।
দাউদ খান কররানির পরাজয়ের পর ঈশা খান, মুসা খান প্রমুখ বারভূঁইয়াদের নেতৃত্বে বাংলার আজাদি সংগ্রাম চলতে থাকে প্রায় তিন যুগ। স্বাধীন বাংলার শেষ সূর্য খাজা উসমান দিল্লি বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন ইসায়ি ১৬১২ সালের ১২ মার্চ রবিবার। এর মধ্য দিয়েই খতম হয় দিল্লির আগ্রাসন বিরোধী সংগ্রাম। সারা বাংলায় কায়েম হয় দিল্লির একচ্ছত্র আধিপত্য। আর ১৭৫৭ সালের ২৩ জুনের পলাশি ট্রাজেডি ও ১৮৫৭ সালের জোয়ান-জনতার মহাবিদ্রোহের পর উপমহাদেশ জুড়ে কায়েম হয় বিলাতি শাসন।