বাঙালির প্রেরণার উৎস বঙ্গবন্ধু

নুরুল আমিন
.
নির্যাতিত ও বঞ্চিত বাঙালির জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু বাঙালি জাতির নয়, তিনি গোটা বিশ্বের নির্যাতিত, বঞ্চিত এবং মুক্তকামি মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে অমর হয়ে আছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী বিপথগামী দুষ্কৃতকারীরা চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর এক শোক বার্তায় কিউবার কিংবদন্তি বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব থাকলে বাঙালি জাতি নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি হতো। তখন যেহেতু পশ্চিম বঙ্গ, পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) ও আসাম রাজ্যসহ বিশাল ভূখণ্ডে বাঙালি জাতির বসবাস এবং বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য ছিল। যা এখনও আছে। ওই সময় নেতৃত্ব ছিল বলে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। তখন নেতৃত্ব থাকলে বাঙালি জাতি রাষ্ট্র পেত এবং কাশ্মীরিরাও একটি রাষ্ট্র পেত। যা হতো মুসলিম রাষ্ট্র।
ঔপনিবেশিক আমলে শোষিত বাঙালি পাকিস্তান শাসনে নিপীড়িত হতে থাকে। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণের শিকার হয়ে পরাধীন বাঙালি দিশেহারা হয়ে পড়ে। দুঃসহ বেদনায় কাতর নির্যাতিত জনতার বুকে আশার আলো সঞ্চার করে মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাগরের মতো উদার আর পর্বতের মতো সাহসী শেখ মুজিবকে পেয়ে বাঙালির প্রাণে নতুন জাগরণ আসে। নতুন চেতনায় জেগে ওঠে বাঙালি। মুক্তির নেশায় মেতে ওঠে বাঙালি। বাঙালির মাঝে ছড়িয়ে পড়ে পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার গান। সব বাঙালি মিলে শেখ মুজিবের অদম্য প্রেরণায় হয়ে যায় এক প্রাণ।
অধিকার বঞ্চিত ও নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অধিকার ও স্বাধীনতা আদায়ের পথে ধাবিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। হতাশা নিমজ্জিত বাঙালিকে তিনি শুধু মুক্তির প্রেরণা দিয়ে এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে থেমে থাকেননি। স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি যুদ্ধ শুরু করেন। স্বাধীন দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে নানামুখী উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন ও সেইসব বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর সততা, দক্ষতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় অল্প সময়ের ব্যবধানে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী পদক্ষেপে অর্থনৈতিক মুক্তিসহ উন্নয়ন অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। ঠিক এমনি মূহুর্তে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে, গদি দখল এবং কালো আইন জারি করে বিচার কার্য বন্ধ করে দেয়। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির বিপ্লব ও উন্নয়ন পদক্ষেপগুলো এসময় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র সফল হতে পারেনি। কারণ জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে শহীদ বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রাণে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠেছেন। বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় গণমুখী নেতৃত্ব বারবার বাঙালির হৃদয়ে সাড়া জাগায়। শহীদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাঙালির প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন। দীর্ঘ সময় পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে। বাঙালির হৃদয়ে অনন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে অমর হয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
.
লেখক : নুরুল আমিন,  প্রাবন্ধিক। লালমোহন, ভোলা। [email protected], 01759648626.

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *