বিশ্বের প্রথম পাবলিক মিউজিয়াম: ব্রিটিশ মিউজিয়াম

কামাল উদ্দিন তুহিন

মিউজিয়াম বা জাদুঘর একটি কালের ইতিহাসকে বহন করে নিয়ে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। আর এই ইতিহাসের সংগ্রহশালা মিউজিয়াম তাই অন্যতম এক আকর্ষণের নাম মানবজাতির কাছে। অতীতের ইতিহাসকে বহন করে মিউজিয়ামের নানান সব নিদর্শন তাক লাগায় দর্শনার্থীদের। মানবজাতির বিভিন্ন জয়যাত্রা, ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের নিদর্শন বহনকারী মিউজিয়ামগুলো তাই পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য। বিশ্বে এমন সব বিখ্যাত জাদুঘর রয়েছে যা সভ্যতার ইতিহাস জানানোর পাশাপাশি এদের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীতেও মুগ্ধ করে আগতদের।

যদি জাদুঘর সম্পর্কে বলতে হয় তখন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কথা অবশ্যই বলতে হয়। আর ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বিস্তৃতি এত বেশি যে, তা দুই-এক কথায় বলে শেষ করা সম্ভব না। বলা হয় বিট্রিশ মিউজিয়ামে প্রবেশ করলে পুরো বিশ্ব ঘন্টা খানেকের মধ্যে দেখা হয়ে যায়।  ব্রিটিশ মিউজিয়াম যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গ্রেট রাসেলে অবস্থিত মানুষের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একটি জাদুঘর, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জাদুঘর। বিশ্বের সব অঞ্চলের মানুষের সাংস্কৃতির শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত, ৭৫ হাজার বর্গমাইলের এই মিউজিয়ামে প্রায় ১৩ মিলিয়ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। ব্রিটিশ মিউজিয়াম স্থাপিত হয় ১৭৫৩ সালে এবং এটিই বিশ্বের প্রথম পাবলিক মিউজিয়াম। পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হ্যান্স স্লোয়েনের সংগৃহীত জিনিসপত্রের উপর ভিত্তি করেই এই জাদুঘরটি শুরুতে গড়ে উঠে। ব্লুমসবারি, মন্টাগু হাউজে স্থাপিত জাদুঘরটি জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ১৭৫৯ সালের ১৫ জানুয়ারি।
স্যার হ্যান্স ৭১ হাজারের বেশি বস্তু সামগ্রী সংগ্রহ করে জাদুঘরটিতে প্রদান করেছিলেন। এদের মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি ছিল পুস্তক, ৭ হাজার পান্ডুলিপি, ৩৩৭ প্রজাতির উদ্ভিদ দেহাবশেষসহ মিশর, গ্রীস, রোম, ভারত ও আমেরিকা থেকে সংগৃহীত বস্তু ও প্রত্ন সামগ্রী। স্যার রবার্ট স্মার্কের গ্রীক পুনর্জাগরণ শৈলীতে নকশাকৃত যাদুঘরের বর্তমান ভবনটি। মন্টাগু হাউসের  পাশে ১৮২৩-৫৫ সময়কালে  নির্মিত হয়েছিল এবং এটি পরবর্তী সময়ে কয়েকবার সংযোজন এবং পরিবর্তনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিখ্যাত রাউন্ড রিডিং রুমটি ১৮৫০ এর দশকে নির্মিত হয়েছিল; তার তাম্র গম্বুজের নীচে কার্ল মার্কস, ভার্জিনিয়া উলফ, পিটার ক্রোপটকিন এবং টমাস কার্লাইলের মতো বিদ্বানদের শ্রম দেওয়া হয়েছিল। ১৮৮১ সালে মূল প্রাকৃতিক ইতিহাস সংগ্রহগুলি প্রাকৃতিক ইতিহাস যাদুঘর গঠনের জন্য দক্ষিণ কেনসিংটনের একটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং ১৯৭৩ সালে ব্রিটিশ সংগ্রহশালার তৈরির জন্য ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রন্থাগারটি পার্লামেন্টের একটি আইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রন্থাগারের সাথে যুক্ত রাখা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সেন্ট প্যানক্রাসে নতুন গ্রন্থাগার বিল্ডিং না হওয়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জাতীয় গ্রন্থাগারের জাদুঘরটিতে রাখা ছিল।
উনিশ শতকে এই মিউজিয়ামের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে এবং যুক্ত হয় রোজেটা স্টোন, একুশটি ক্লাসিক্যাল ভাস্কর্য ও আড়াই হাজার বছর পুরানো দেবী এ্যাথেনার প্রতি উৎসর্গিত পার্থে নন ভাস্কর্য। চতুর্থ জর্জের মাধ্যমে এখানে যুক্ত হয় কিংস লাইব্রেরি।  এই জাদুঘরের ইতিহাস অত্যন্ত ব্যাপক। যুগে যুগে নানান সহযোজন ও সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে বিশ্বের এই প্রাচীন জাদুঘরটি।বিট্রিশ মিউজিয়ামমানব সভ্যতা ও ইতিহাসের অনন্য এক ধারক। হাজার বছরের ইতিহাসের নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এই মিউজিয়ামে। সংগ্রহের তালিকাটি দেখলে মনে হয় পৃথিবীর পুরো ইতিহাসটাই যেন লুকিয়ে আছে এ জাদুঘরে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬০ লাখ দর্শনার্থী এই জাদুঘরটি দেখতে আসেন, যা জাতীয় ভাবে প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয়।
এ মিউজিয়ামে আলাদা-আলাদা সেকশন আছে। মিসরীয় সভ্যতারও বিশাল অংশ রয়েছে এখানে। একপাশে যেমন পাবেন মিসরীয় সভ্যতা, তেমনি অন্যপাশে পাবেন গ্রিক সভ্যতার নিদর্শন। এ মিউজিয়ামটি পুরো বিশ্বেরই সভ্যতার নিদর্শন বহন করে। এখানকার মোমের তৈরি মূর্তিগুলো দেখলে মনে হবে জীবন্ত মানুষ।  যদি পাশাপাশি একটি মূর্তি ও একজন মানুষ দাড়ানো থাকে তবে শুধু দেখ কোনটি জীবিত আর কোনটি মৃত তা বের করা দুষ্কর হবে।
এখানে সব ধর্মের নিদর্শন রয়েছে।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের দেয়ালে লেখা আছে:-
‘As a learner, as a leader, as a teacher, as a father, as a Prophet, as a law maker Mohammad (sm) is the superhuman in the world’!
অর্থ্যাৎ,  ‘একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, একজন নেতা হিসেবে, একজন শিক্ষক হিসেবে, পিতা হিসেবে, নবী হিসেবে, একজন আইন প্রণেতা হিসেবে মুহাম্মাদ (সঃ) পৃথিবীর এক অতিমানব’! যা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের।

এখানে ঘুরতে গেলে কেউ যদি চায় নির্দিষ্ট নিদর্শনগুলো দেখতে তাও পারবে। বিট্রিশ মিউজিয়ামে প্রবেশের কোনো ফি নেই। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এটি সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। মিউজিয়ামের ভেতরে বেশ বড় একটি শপ আছে, আরো আছে খাবারের দোকান, আর বইয়ের স্টল।

কামাল উদ্দিন তুহিন
শিক্ষার্থী
অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *