শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে ফেল করার কারণ ও সাফল্যের উপায়

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ।।

ইংরেজি সবচেয়ে সহজ ভাষা। বর্তমান বিশ্বে প্রায় তিন হাজার পাঁচশত ভাষা প্রচলিত আছে। কোনো ভাষা সহজ না কঠিন এটা নির্ভর করে শিক্ষার্থীর শেখার ইচ্ছার উপর। জাপানি ভাষায় প্রায় ১ লক্ষের চেয়েও বেশি বর্ণ আছে। সম্ভবত: ১৯৮৩ সালে এই জাপানী ভাষায় বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী প্রথম হয়েছে। প্রবাদ আছে, ৎইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। প্রবল ইচ্ছা শক্তির নিকট সকল শক্তিই পরাজিত হয়। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১৫৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো’। ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট (সূরা তালাক- ০৩) ।
‘তোমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা মুমিন হও (সূরা মায়িদা- ২৩)।

মানবতার বন্ধু, বিশ্ব নন্দিত নেতা, বিশ্বের একমাত্র মহানুভব ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (স.) প্রথম জীবনে যখন দ্বীনের দাওয়াত দিতেন তখন কাফের বেইমানরা নবীজির চাচাকে বলে দিলেন যে হে আবু তালিব আপনার ভাতিজাকে বলেদিন তিনি যেনো দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া বন্ধ করে দেন নতুবা আমরা তাকে দেখে নেবো। চাচা যখন ভাতিজাকে কাফেরদের কথা শুনালেন তখন নবীজি বললেন- ‘হে চাচা আপনি কাফেরদেরকে বলেদিন, তারা যদি আমার এক হাতে চাঁদ এবং অন্য হাতে সূর্যকেও এনে দেয় (যা কোনো দিন সম্ভব নয়) তবুও আমি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারবো না। এমন দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ করলে যতো কঠিন কাজই হোক না কেনো সফলতা সুনিশ্চিত। জীবনে সফলতা লাভ করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যাবশ্যকীয়। যেমন ১. দৃঢ় সংকল্প ২. কঠোর পরিশ্রম ৩. সামর্থ্য।
পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি। বিজ্ঞানি এডিশন একবার নয়, দশ বার নয়, একশত বার নয়, এক হাজার বার নয়, নয় হাজার বার নয়, নয় হাজার নয়শত নিরানব্বই বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে দশ হাজার বার-এর বেলায় বিদ্যুতের বাল্বে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কবির ভাষায়- একবারে না পারিলে দেখো শতবার। আমি বলবো-
আমি পারবো এ কথাটি বলো বার বার
একবারে পারলেও দেখো কয়েকবার।
দশজনে পারে যাহা তুমিও পারিবে তাহা।

ইংরেজিতে ফেল করার কারণসমূহ
ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা। এটা হলো প্রধান কারণ। ইংরেজির প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা নেই। কঠিন ভাষা মনে করে অনেক শিক্ষার্থী মোটেই ইংরেজি পড়ে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী ইংরেজি শিখতে আগ্রহী। শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশ করার জন্যেই বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজি পড়ে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর নিকটই জ্ঞান অর্জন আনন্দহীন এবং পরীক্ষা ভীতিকর। শিক্ষার্থী যদি শেখার প্রতি মানসিকভাবে আগ্রহী না হয়, তাহলে বিদেশি ভাষা শিক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষকের পক্ষে কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠে। এই পরিস্থিতিতে একজন ইংরেজি শিক্ষকের পক্ষে পড়াকে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলা খুবই কঠিন। আনন্দের সাথে শিক্ষা দিতে আমরা বেশির ভাগ শিক্ষকই ব্যর্থ হচ্ছি। এটাও ইংরেজিতে ফেল করার আরেকটি কারণ।

যোগ্য, মেধাবী, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীবৃন্দ ইংরেজিতে ফেল করে। অভিভাবকের অসচতেনতা শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে ফেল করার আরেকটি কারণ। গণিতের মতো ইংরেজিকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিবছর ইংরেজিতে ফেল করে। বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকসমূহ শিক্ষার্থীদের মান এবং অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটাও শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে ফেল করার আরেকটি কারণ। কলেজ স্তরের বিষয়গুলো বিশ্বমানের উপযোগী নয়। এটাও শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে ফেল করার আরেকটি কারণ। প্রশ্ন এবং উত্তর না বুঝে মুখস্ত করা এটা ইংরেজিতে ফেল করার একটা বড় কারণ। বর্তমানে প্রশ্নপত্রের ধরণ শিক্ষার্থীদের ফেল করার আরেকটি কারণ। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষার খাতায় সঠিকভাবে ইংরেজি লিখতে পারে না। এটাও ইংরেজিতে ফেল করার কারণ। অনেক শিক্ষার্থী মনে করে যতো বেশি লিখতে পারবে ততো বেশি নম্বর পাবে। এটাও ইংরেজিতে ফেল করার আরেকটা কারণ। শিক্ষকদের ইংরেজি পরীক্ষার খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে না পাড়াটাও শিক্ষর্থীদের ইংরেজিতে ফেল করার একটা বড় কারণ।

ব্যর্থতার গ্লানি থেকে উদ্ধারের উপায়

আন্তরিকতা কাজের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রভাবক। যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা একটি উজ্জীবক কারণ আন্তরিকতা কাজকে সঠিকভাবে সমাপ্ত করতে সহায়তা করে। মহান ব্যক্তিগণ আন্তরিক। কারণ তাঁরা জানেন যে, আন্তরিকতা হচ্ছে সফলতার চাবি কাঠি । আন্তরিকতার সাথে যে কোনো কাজ করলে কাজে সুফল পাওয়া যায়। আমরা জানি, আগ্রহ থাকলে কাজ শেখা সহজ। ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেছেন- ‘কোনো কাজ ধরে যদি উত্তম সে জন, হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।’

ইংরেজি শেখার প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। বুঝে বুঝে ইংরেজি পড়তে হবে। না বুঝলেও পড়তে হবে। মনোযোগ দিয়ে ইংরেজি পড়তে হবে। বার বার পড়তে হবে। ইমাম গাজ্জালির এহয়াউল উলূমে তাওরাতে বর্ণিত আল্লাহর একটি বাণীর উল্লেখ আছে, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের কী লজ্জা হয় না? কোনো বন্ধুর পত্র যদি তোমাদের হস্তগত হয়, তবে স্তব্ধগতিতে গভীর দৃষ্টিতে তা পাঠ করো এবং প্রতিটি অক্ষরের মর্ম উদ্ধারে সচেষ্ট হও। তেমনি আমার কিতাব তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছে… কিন্তু এর প্রতি তোমরা সীমাহীন অবজ্ঞা প্রদর্শণ করছো। কেন, আমি কি তোমাদের বন্ধুবান্ধবদের চেয়েও নিকৃষ্ট?

আমি বলবো ইংরেজি বুঝার জন্য যত ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার নিতে হবে। মোবাইলের মেসেজ যদি আমরা না বুঝি, বুঝার জন্য একজন শিক্ষিত লোকের নিকট যাই। ভালো কথা, কুরআন বুঝার জন্য বা ইংরেজি বুঝার জন্য, বা অন্য কোনো বিদেশি ভাষা বুঝার জন্য আমরা কয়জনেই বা চেষ্টা করি?  দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্রিকা এবং বার্ষিক ম্যাগাজিন পড়ে, টিভি দেখে, কারো মুখের কথা, বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য শুনে, বিজ্ঞাপন পড়ে আমরা ইংরেজি শিখতে পারি।

জানতে হবে। না জানা হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাপ। পাপে ছাড়ে না বাপেরে। জানার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এবং জানার পর মানার হলে মানতে হবে। ছাড়ার হলে ছাড়তে হবে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে নামাজের কথা বলা হয়েছে ৮২ বার। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের কথা বলা হয়েছে ৯২ বার। বাংলাদেশের একজন শিক্ষকের বেতনের প্রায় ৭ গুণ বেতন পান ভারতের একজন শিক্ষক। চীন বা থাইল্যান্ডের একজন শিক্ষকের বেতন প্রায় ৯ গুণ। আল্লাহকে চেনার জন্য, কুরআন বুঝার জন্য, ইসলাম বুঝার জন্য সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য আমি যদি ইংরেজি পড়ি/ শিখি/ জানি এই জ্ঞান অর্জনটা এক হাজার বার জায়েজ হবে।

শুদ্ধ করে ইংরেজি পড়তে/ লিখতে/ শিখতে/ শিখাতে হবে। যথাযথ উত্তর সংক্ষিপ্ত হলেও ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। ‘শিশুরা শিক্ষা লাভ করবে আনন্দের সাথে।’ শিক্ষকগণ আন্তরিকতা এবং আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মান এবং অবস্থা অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে। প্রশ্ন পত্রের ধরণ পাল্টাতে হবে। বইয়ের আলোচনার সাথে হুবহু উত্তর মিলে যায় এমন প্রশ্ন করা যাবে না। তাহলে শিক্ষার্থীগণ পাঠ্যবই বুঝে পড়তে বাধ্য হবে। ইংরেজিতে ভালো হতে হলে সহজ সরল ভাষায় দৈনিক, মাসিক পত্রিকা বা গল্পের বই কিনে পড়তে হবে। মেধাবী, সাহসী, যোগ্য, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক শিক্ষক শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দিতে হবে।
চেষ্টায় সবই হয়। এর জ্বলন্ত প্রমাণ পাকিস্তানের এগারো বছরের তারকা মোটিভেশনাল স্পিকার হাম্মাদ। সে মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। সে পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যায়লগুলোতে অনর্গল ইংরেজিতে লেকচার দিচ্ছে। কেউ যদি মনে করে আমি পারবো। অবশ্যই সে পারবে। যে নিজে চেষ্টা করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। ইংরেজি কঠিন ভাষা নয়। ইংরেজি সহজ ভাষা। এটাকে মেনে নিতেই হবে। নতুবা এই বিদেশি ভাষা শেখা সম্ভব নয়। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক প্রতিযোগিতার বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে ইংরেজি শিখতেই/পড়তেই/ বুঝতেই/ জানতেই/ লিখতেই হবে। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের ভাষায়- Fittest will survive অর্থাৎ যোগ্যরাই টিকে থাকবে।

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম

সহকারি প্রধান শিক্ষক (বি.এস.এস, বি.এড)
মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।
মোবাইল: ০১৭৭৫-৩৯৭৮৯০

২ comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *