হেমন্তের আশীর্বাদ

এ কে সরকার শাওন

বঙ্গোপসাগরের পলিমাটি বিধৌত
বিশ্বের বিস্ময়কর স্বপ্নময় এই ব-দ্বীপের
অপরূপা রূপসী বাংলাদেশে অনায়াসে
ঋতু বদলের সাথে দৃশ্যপট বদলায়।
বদলে যায় বাংলার প্রকৃতি ও জীবন;
উদ্যাম আনন্দে, উল্লাসে হৃদয় উথলায়!

সবুজ পাড়ের সোনালী হলুদ শাড়ী পরে
ভালোবেসে শত সহস্র বর নিয়ে
হেসে হেসে আসে ঋতুর মহারানী হেমন্ত।
এ যে বাংলা-বাঙ্গালীর মহা পয়মন্ত;
শত বন্দনাবাক্যেও তা অফুরন্ত!

আলো ঝলমলে সকালের সোনা রোদে
শিশিরভেজা ঘাসের ঝিলিক,
মৃদুমন্দ বাতাসে আকাশে সুনীল খাম আনে
শীতের আগমনি লিমেরিক;
সাত সকালে কুয়াশা ডিঙিয়ে রসী গাছিদের
সারি বেঁধে সবেগে এগিয়ে চলা,
ঝিকিমিকি নদীর পাড়ে কাশফুলের দোলা,
রূপালী হাসির ঝিলিকে নদীর বয়ে চলা;
বিস্তীর্ণ মাঠে পাকা ধানের সোনালী শীষে
বাতাসের আনন্দায়িত দোলা;
পাকা হলুদ সরিষার নীরব কথা বলা,
কী বিচিত্র প্রকৃতির হৈমন্তীর লীলা খেলা!

মায়ের চৌমুখী চুলা ঘিরে পরিবারের সবাই,
নায়রী ঝি, ঝি জামাই আত্মীয় স্বজন,
হাসি তামাশায় ভাপ উড়া ভাপা পিঠা
খেজুড়ের গুড়ে মিশিয়ে আনন্দ ভোজন;
অন্দরে ঢেঁকির ছন্দতালে বৌ, ঝিয়ানীদের
নন্দিত হাসিরসাত্বক কথপোকথন;
বহিরে ধানের মাড়াইয়ের উল্লাসে
জোয়ান কৃষকদের নর্দন-কুর্দন;
দাওয়ায় বৃদ্ধ দাদা-দাদীর ঝাপসা চোখে
রোমাঞ্চকর সোনালী স্মৃতি রোমন্থন;
প্রকৃতিতে মিশে একাকার হওয়ার
সে কী এক অনন্য হৈমন্তী আয়োজন!

দুপুরে খালে-বিলে, জলতলে
শত শত জনে শত পলতলে
মাছ ধরার বাউত উৎসব চলে;
চকের সর্বত্র কেউ কেউ কাটে ধান,
কেউ গান গায় খুশীতে গলা খুলে,
একতারা হাতে বাউল নেচে চলে আলে,
কেউ কেউ সবুজ জমিনে আলু তোলে,
বাগানে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনীর
পাগলকরা ঘ্রাণ ছড়ায় হেলে দুলে
হেমন্তের বিচিত্র প্রকৃতি কতো যে কথা বলে!

গোধুলী বেলায় গোপাটে ধানের আটি নিয়ে চলে
সারি সারি কৃষক ও পরিপূর্ণ মেঠো শকট,
কৃষকের ধান ঘরে তোলার অনবদ্য দৃশ্যপট;
কাঁচা হলুদ শর্ষে ক্ষেতে কি রূপচ্ছট;
সারা দেশের একই চিরায়ত প্রচ্ছদ পট!
শীত-গরমের হৈমন্তী নাতিশীতোষ্ণ সংকট।

রাতে দিকে দিকে ছড়ানো ছিটানো আলো
স্বচ্ছ চাদের আলোয় তাড়িত রাতের জমকালো!
বাঁশীর সুরে মন উড়ে যায় উদাসী হাওয়ায়,
মনের সাথে মন মিশিয়ে চলে নিশ্চুপ কথামালা!
মিলাদ শরীফ, জলসা, গান, যাত্রাপালা,
আরো কতো কি হৈমন্তী আনন্দ আয়োজন;
এর চেয়ে বেশী কী আছে আর প্রয়োজন?

সুখ-সমৃদ্ধি, হাসি-খুশীর ঋতু হেমন্ত,
হেমন্তে পাল্টায় প্রকৃতি
শ্যামল-কোমল-অমল গ্রামে গ্রামে
বয়ে চলে অনাবিল আনন্দধারা!
বিকেলে ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েসের উৎসব;
স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মিলন মেলার কলরব
এক কথায় তা নবান্নের মহা উৎসব;
শহরের মেকি বাবুদের অনুধাবনে
কভু আসে কি সেই সহজ সরল অনুভব?

কবিতাঃ হেমন্তের আশীর্বাদ
কাব্যগ্রন্থঃ আপন আভাস
কবিঃ এ কে সরকার শাওন
শাওনাজ ভবন, উত্তরখান, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *