অর্থের কাছে হেরে যায় সাহিত্য !

ফারহানা করিম তুলি
অর্থের কারাগারে শুধু মনুষ্যজাতি বন্দী সেটা নয়, সাহিত্যও আজ বন্দী অর্থের নিগড়ে। আজকাল শুধু প্রতিভা দিয়ে নয়, অর্থ দিয়েও কিছুক্ষেত্রে সাহিত্যের মানদন্ড বিচার করা হয়। যার কাছে টাকা আছে সে তার লেখনি সবার কাছে সহজে প্রকাশ করতে পারে। আর যার সামর্থ্য নেই তাঁর হাজারো প্রতিভা একসময় কাঠ পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পল্লীর প্রত্যেক বাঁকে লুকিয়ে আছে স্বপ্নে বোনা সাহিত্য। কেউ নতুন করে সাহিত্য চর্চা করে- কারো সাহিত্য আবার ভাঙ্গা স্বপ্নে বিলীন হয়, কিন্তু অনেক সময় অর্থ ছাড়া এসব সাহিত্যের ঠাঁই হয় না পত্রপত্রিকা তেও। অথচ আমরা আধুনিক সমাজ রোজ সাহিত্য নিয়ে কত মেতে থাকি।‌ সাহিত্য যে আসলে অর্থের কাছে হেরে যায় সে খবর অনেকে রাখি না। ‘পল্লী সাহিত্য’ প্রবন্ধে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক পল্লী থেকে অজানা-অচেনা কবিদের গাঁথা সংগ্রহ করে যদি প্রকাশ করা হতো তাহলে দেখা যেত বাংলার মুসলমান সাহিত্য সম্পদে কত ধনী’। কিন্তু সাহিত্য সংগ্রহ করার জন্য আমাদের দেশে কোন স্বেচ্ছাসেবক দল নেই।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থের ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে বলেন, ‘অর্থ চিন্তার নিগরে সকলে বন্দি’। যেই যুবসমাজ অর্থ চিন্তায় চিন্তিত হয়ে সারাক্ষণ মগ্ন থাকে, তারা কিভাবে বুঝবে সাহিত্যের মর্ম? তারা সাহিত্যের বিশাল রহস্যের কিনারা কিভাবে উন্মোচন করবে?ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন আর দক্ষিণারঞ্জন মিত্র রা একবার জন্মগ্রহণ করেই বিলীন হয়ে গেছেন।তারাও যদি অর্থের বিনিময় সাহিত্য সংগ্রহ করতেন- তবে সাহিত্যের পরিমাণ আরও কমে যেত।নিশীথের গহীন তমসা সরিয়েই একরাশ কিরন নিয়ে সূর্য স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু এইসব মানুষের স্বপ্ন শুধু তালা বদ্ধ হয়ে থেকে যায়- যারা একটি বই প্রকাশ করতে জীবনের অর্ধেক পারিশ্রমিক দেওয়া লাগে।
বর্তমান যুবসমাজ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হতো না- যদি তারা সাহিত্যকে ভালোবেসে দেশকে একটি সাহিত্যপূর্ণ দেশ উপহার দিতে পারতো। অর্থের অভাবে আজ হাজারো প্রতিভা হারিয়ে যাচ্ছে। বদ্ধ ডাইরিতে বন্দী বাংলা সাহিত্য।বাংলা সাহিত্যকে যারা অর্থের দাড়িপাল্লায় মেপে পিছনে ফেলে দেয়, ধিক্কার সেই মনুষ্যজাতি কে, ধিক্কার সেই বাঙালিকে।

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *