মুক্তবুলি ডেস্ক
স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম নেতা অশ্বিনী কুমার দত্তকে আধুনিক বরিশালের নির্মাতাও বলা হয়। বঙ্গভঙ্গ হতে স্বদেশী আন্দোলন এরপর স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন যে কজন তাদের মধ্যে অশ্বিনী কুমার অন্যতম।
এই কৃতিপুরুষ ১৮৫৬ সালে ২৫ জানুয়ারি পটুয়াখালী মহকুমার লাউকাঠিতে জন্ম নেন। তার পৈত্রিক নিবাস গৌরনদীর বাটাজোড় গ্রামে। বাবার নাম ব্রজমোহন দত্ত ও মা প্রসন্নময়ী দেবী।
জানা যায়, দত্ত পরিবারের আদি পুরুষ পুরুষোত্তম দত্ত মহারাজা আদিশুরের সময় বাংলাদেশে আগমন করেন। তার অধীনস্ত ভৈরব দত্ত বলালী কৌলিন্য লাভ করে প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের বাটাজোড়ে বসতি স্থাপন করেন। ভৈরব দত্তের বংশধর গতিনারায়ণ দত্ত অশ্বিনী কুমারের প্রপিতামহ।
অশ্বিনী কুমার দত্ত যখন জন্ম নেন তখন ব্রজমোহন দত্ত পটুয়াখালীর মুন্সেফ। মা বাবার সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ শিশু অশ্বিনী কুমারের ওপর বাল্যকাল থেকেই প্রভাব বিস্তার করে।
অশ্বিনী কুমার দত্ত বাড়িতেই গোমস্তা নীল কমল সরকারের কাছে তালপাতায় বর্ণমালা শেখা শুরু করেন।
এছাড়াও বাবার চেষ্টায় বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করেন। ১৮৬৯ সনে তিনি ঢাকা থেকে প্রবেশিকায় পাস করে মাসিক ১০ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৭১ সনে কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পাস করেন।
১৮৭২ সনে বিএ পড়ার সময় তিনি বরিশাল মহাকুমার নলছিটির নথুলাবাদের মীরবহর পারিবারের কায়স্থ কন্যা সরলা বালাকে বিয়ে করেন।
বাবার কাছে ধর্ম চর্চা, সংস্কৃত ও ফার্সি শিক্ষালাভ করেন তিনি আর এলাহাবাদে কিছুদিন ওকালতি করেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৮০ সনে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং ১৮৮২ সনে বিএল পাস করেন অশ্বিনী কুমার।
সমাজের কুসংস্কার ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি। সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তারের কর্মসূচিও পরিচালনা করেন।
১৮৮৪ সনের ২৭ জুন বাবার নামে ব্রজমোহন স্কুল এবং ১৮৮৯ সনের ১৪ জুন দক্ষিণাঞ্চলের অক্সফোর্ড খ্যাত ব্রজমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বিনা বেতনে সেখানে ১৭ বছর শিক্ষকতা করেন তিনি। তার সব সম্পদ দান করে গেছেন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির খাতিরে। শিক্ষা প্রসারে তার অবদান অনন্য।
আশ্বিনী কুমার দত্ত ১৮৮৬ সনে অবিভক্ত বাংলায় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ১৮৮৭ সনে লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং তিন বছর তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
১৯০৫ সনে তার নেতৃত্বে বরিশালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে রেঙ্গুন ও পরে আগ্রায় বন্দি করে রাখা হয়।
মুক্তিলাভের পর তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। বহুমূত্র ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন তিনি। এরপর ১৯২৩ সনের ৭ নভেম্বর, ৬৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
তথ্যসূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ