প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ

মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিবিদ চিন্তাবিদ আবুল মনসুর আহমদের ১২৫তম জন্মদিন ০৩ সেপ্টেম্বর। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলা গ্রামে ১৮৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ময়মনসিংহ শহরের মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালয় থেকে ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক, ১৯১৯ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯২১ সালে বিএ, কলকাতা রিপন ল কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে বিএল পাস করেন।

সাংবাদিকতায় যোগ দিয়ে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সাপ্তাহিক ছোলতান ও মওলানা আকরম খাঁর সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত মৌলভী মুজিবর রহমানের দি মুসলমান পত্রিকায় সাংবাদিকতার পর ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জজকোর্টে আইন ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। সাংবাদিকতায় ফিরে এসে ১৯৩৮ সালে দৈনিক কৃষক পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন।

১৯৪১ সালের অক্টোবর মাসে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৈনিক নবযুগ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে যোগ দেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত জননেতা সোহরাওয়ার্দীর দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ পরিচালিত স্বরাজ দলের কর্মী ছিলেন। পরে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু পরিচালিত কংগ্রেসের আন্দোলনে যোগ দেন। তবে ১৯৪৪ থেকে পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি কৃষক-প্রজা পার্টির অন্যতম নেতা ছিলেন। পরে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক ও আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা।

১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ১৯৫৪ সালে তিনি ছিলেন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মসূচি ২১ দফার অন্যতম প্রণেতা। এ জোটের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রে শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক কারণে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত সামরিক শাসনামলে কারাবরণ করেন। পরবর্তীপর্যায়ে দীর্ঘ দিন ইত্তেফাক, অবজারভার ও দি পিপলস পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা।

আবুল মনসুর আহমদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- উপন্যাস : সত্যমিথ্যা, জীবনক্ষুধা, আবে হায়াত। গল্পগ্রন্থ : আয়না, ফুড কনফারেন্স, আসমানী পর্দা। রাজনীতিবিষয়ক গ্রন্থ : আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, শেরে বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু। স্মৃতিকথা : আত্মকথা। শিশুসাহিত্য : ছোটদের কাসাসুল আম্বিয়া, গালিভারের সফরনামা । তিনি ১৯৬০ সালে ছোটগল্পে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *