এ. এম. আবদুল জাহের
মিসরের ইতিহাসে গণতন্ত্রের মুক্তির আলোকবার্তা নিয়ে যে মহান ব্যক্তি গণতন্ত্রকামী মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে মিসরের জনগনকে দিতে চেয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বাদ, দিতে চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি, দিতে চেয়েছিলেন নিজস্ব চেতনাবোধ, স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ফেরাউনের রাজ্যে মুসা নবীর জয়, সেখানেতো ইসলামের বিজয় নিশান উড়বে-ই। কিন্তু বিনিময়েতো দিতে হবে অনেক মূল্যবান কিছু আর সেই মূল্যবান সম্পদতো নষ্ট হবে মিসরের অধিবাসীর দ্বারাই। তারই এক মূল্যবান সম্পদ মিসরবাসীর মুক্তির অগ্রদুত, যাকে মিসরবাসী হারিয়ে ফেলল, তিনি আর কেউ নন ! তিনি হলেন প্রয়াত শহীদ প্রেসিডেন্ট হাফেজ ড. মুহাম্মদ মুরসি, তিনি শুধু রাষ্ট্রপতি-ই ছিলেননা, একদিকে তিনি ছিলেন কুরআনে হাফেজ, ইমাম অন্য দিকে তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত প্রকৌশলীবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডক্টরেট এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত যার পিছনে পৃথিবীর কোন ডিগ্রী-ই যথেষ্ট নয়, কেননা মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করে হয়তো মিসরবাসীর জন্য পরবর্তী করনীয় নির্দেশনার পথ তৈরী করে দিয়েছেন।
ইতিহাসের অবিস্মরনীয় এই মহান ব্যক্তি যিনি মুসলিম বিশ্বের জন্য শিক্ষনীয় অনেক কিছুই রেখে গেছেন, বিশেষ করে যে সকল মুসলিম রাষ্ট্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মিসরের এই দুঃখজনক মর্মান্তিক বাস্তবতা থেকেই জাগ্রত হতে হবে মুসলিম বিশ্বকে, করনীয় পন্থা অবলম্বন করতে হবে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে। মিসরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন মহান ব্যক্তি যিনি নিজের আত্মত্যাগের বিনিময়ে মিসরের অধিবাসীদের জন্য অনেক শিক্ষনীয় বিষয় রেখে গেছেন। এই মহান ব্যক্তিত্ব যিনি ১৯৫১ সালে মিসরের শারকিয়া প্রদেশের আল-আদওয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ এর দশকে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিষয় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখান থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নথরিজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে দেশে ফিরে তিনি ১৯৮৫ সালে মিসরের জাগজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হন। পরবর্তীতে তিনি মিসরের ব্রাদারহুড দলের হয়ে (২০০০-২০০৫) পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি একজন ভালো বক্তা ছিলেন, যা মিসরের জনগনকে জাগ্রত করতে, চেতনাবোধ ও জাতীয়তাবোধ ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলো। ২০১২ সালে এপ্রিলে তিনি মিসরের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের জুনে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। মহান এই নেতা মাত্র এক বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ২০১৩ সালে ৩রা জুন মিসরের সেনাপ্রধান ফাত্তাহ-আল সিসি এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে মুরসি সরকারকে উৎখাত করে এবং ব্রাদারহুড দলের হাজার-হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করে ও কারাগারে বন্দী করে এবং কারাগারে আটকে রাখে প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ মুরসিকে। যেই নেতা কারাগারে থাকাকালীন কারা কর্তৃপক্ষের নিকট পবিত্র কুরআনের একটি কপি চেয়েও পাননি। তিনিতো কুরআনে হাফেজ ছিলেন, তিনি শুধু আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআনকে একটু ছুঁতে চেয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তাঁর এই ইচ্ছাটাও পুরন করেনি মিসরের সামরিক সরকার। কারাজীবনে এই মহান নেতা মাত্র দু’বারের জন্য তার পরিবারের সাক্ষাত পেয়েছিলেন। ইতিহাসকে স্বাক্ষী রেখে বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দকে সতর্ক করে মিসরের জনগনকে কাঁদিয়ে এই নেতা ৬৭ বছর বয়সে ২০১৯ সালের ১৭ জুন মিসরের আদালত প্রাঙ্গনে প্রহসনের বিচারাধীন অবস্থায় মিসরের সামরিক সরকার ফাত্তাহ- আল সিসিকে অজানা অনেক প্রশ্ন রেখে মহান আল্লাহ্ পাকের দরবারে শহীদী কাফেলায় চলে গেলেন। তাই অকপটে বলতে হয়…
মিসরের নীলাকাশ থেকে
ঝড়ে গেল উজ্জ্বল একটি নক্ষত্র
ছড়িয়ে আলোর বিকিরন,
উড়বে-ই ইসলামের বিজয় নিশান
শহীদের আত্ম-ত্যাগ আর রক্ত
বৃথা যায়না কোনদিন।
শিক্ষক ও কলাম লেখক
এ. এম. আবদুল জাহের (এম.এ, এম.এড)
চমৎকার লিখেছেন স্যার।
Excellent