দায় কার?

কামরুল ইসলাম :
মোর মায় বাফে কিছু দিন যাবৎ টাউনে থাহে। অ্যার আগে হ্যারা কোনো সোমায় টাউনে আহে নায়। গ্রামের বাড়ি বইয়া মায় খালি আশেপাশের বাড়ি যাইত। কেডা কেমন আছে হেইয়া ঘুইররা ফিররা দেখতো। সবাইর খোঁজ-খবর লইতো। এহন শহরে আইয়া তো আর হ্যা করতে পারে না। যাওয়ার মতো কোনো জাগা নাই। হারাডাদিন ঘরের মধ্যেই থাহে। একদিন মোর মায়রে বিচরাইয়া পাইতে আছিলাম না। এহেনে খুঁজি ওহেনে খুঁজি কিন্তু কোনো হানেই পাই না। মোর মাতায় তো ঠ্যাকলাম আকাশ ভাইঙ্গা পড়ছে। চোহে আন্ধার কোন্ধার দেকতে আছালাম। মায়রে যদি বিচরাইয়া না পাইতাম তাহালে মাইনষে মোরে কী কইত! কইত মুই মনে হয় মায়ের খাতিল করি না।

-অ কী, তোর কী হইছে? কান্দো ক্যা?

চাইয়া দেহি মায়। মায়রে হেদিন অনেক মন্দ কইছিলাম। মোর কতায় মায় কষ্ট পাইছে মনে হয়।এইয়ার মধ্যে আর ইট্টু কতা কওয়া লাগে। মোরা যে বিল্ডিং থাহি হেহেনে অনেকগুলা ফ্লাট আছে। মুই হেইয়ার এউককা ফ্লাটে থাহি। মোগো বিল্ডিংএর লগেই পিছে ছোড এউক্কা উদলা মাড আছে। মাঝে মধ্যে গুড়াগাড়ায় খেলাধুলা করে ওহানে।

– মা, তুমি কোম্মে গ্যাছালা?

-উডানে গ্যাছালাম।

– উডান! উডান কোম্মে পাইছো তুমি!

ঢাকা টাউন। মোগো বাসায় মোর বউ, হালি, হাউড় আর অইন্যান্যো য্যারা য্যারা আলহে হগুলডি হো হো কইরা হাইস্যা উডলো। মুইও মায়রে ইট্টু মন্দ কইছিলাম। সত্য বলতে, মায়ের কতায় মোরও ইটটু হাস আইছেলে। চাইপ্পা চুইপ্পা রাকছি কোনো মতে। মোর মায় হেদিন অনেক লজ্জাও পাইছেলে। পরে বুইজ্জি মায় পাশের মাডে গ্যাছেলে। খোলা বাতাস খাইতে।

মোর মায় ‘ফ্লোর’ কয় না কয় ‘খাডাল’। আবার ‘বারেন্দা’ বা ’ব্যালকনি’ কয়না কয় ‘আইতনা’ আর ‘বাথরুম’ রে কয় ‘টাট্টি’! এইয়া হুইন্না হগুলডি খালি হাসে। মায়ের ফানে মুইও শরম পাই। মায় বেসিন ‘সিঙ্ক, ট্যাপ এগুলাও বোজতো না। এহন ইট্টু বোজে।

মোর মায় গাও গেরামে থাকছে হারা জীবন আধুনিক অনেক কিছুই মায় বোজবে না এইডাই সাভাবিক। কি কন আমনেরা-বিষয়ডা সাভাবিক না? কিন্তু না মোডেও সাভাবিক না। ক্যা হেডা ইটটু পর কমু হানে। মোর মায় যে এককালে অশিক্ষিত হ্যা কিন্তু না। মোর বাপেরও মোটামুটি শিক্ষা দীক্ষা আছে। মোরে হাইস্কুলের পরই হ্যারা পড়তে ল্যাকতে শহরে পাডাইছিলে। এতদিন শহরে থাইকাও এহন পর্যন্ত ভাল কোনো হোডোল বা রেস্টুরেন্টে গ্যালে চামুচ কোনডা থুইয়া কোনডা লমু হেইয়াই দিশা পাই না। আর মোর মায় তো বুড়া মানুষ। আর এউক্কা কতা হইলো মোর মায় হেদিন যে হারাইয়া গ্যালে হ্যাতে মুই চিন্তা করছালাম- মাইনসে মোরে কী কইবে। এই কতাডার মধ্যে কোনো ভালোবাসা আছে? মোর চিন্তাডা কি ঠিক আছে! মোর তো মায়রে বিচরাইয়া যহন পাইছি তহন জাবরাইয়া ধইরা চুমা দেওয়া উচিত আলহে। কাইন্দা কাইট্টা একাকার কইরা হালান উচিত আলহে। মুই কিন্তু হ্যায়া করি নায়! আর যে কতাডা মুই জরুলিভাবে কইতেই চাই হ্যা হইলো- মোর বাপ-মায় মোরে শহরে পাডাইছে, মুই শিকখিত হইছি, আধুনিক হইছি চারহি করি এহন। মোর কি উচিৎ আলহে না মোর বাপ মায়রে ইট্টু আধুনিক বানাইননা? মোর বাপ মায়রে মাঝে মধ্যে কয়দিন টাউনে আইননা রাকলেই কোনডারে কি কয় বা শহরের বিষয় আসয়গুলা কেমন হ্যারা এমনেই শিকখা নেতে। কিন্তু হ্যা না কইরা মুই হ্যাগো কতায় লজ্জা পাই! মুই মায়রে মোন্দ কই! মোর হাসি আহে! আসলে মুইইতো বেশরমা! মোরই তো লজ্জা নাই!
মুই কি দায় এড়াইয়া যাইতে পারি!

কামরুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *