এক ‘মহানায়কের’ মৃত্যুদিন আজ

মুক্তবুলি ডেস্ক ||

দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ। সেদিন সকালের দিকে পাকিস্তানি হানাদাররা আগুনে জ্বালিয়ে দেয় দৈনিক সংবাদ অফিস। সেই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান সংবাদের এক সংবাদকর্মী। তার দেহের সৎকার তো দূরের কথা, শনাক্ত পর্যন্ত করা যায়নি। পুরো সংবাদ অফিসের সাথে ছাই ভস্ম হয় শহিদ সাবের। সেই মহানায়কের মৃত্যুদিন আজ।
শহিদ সাবেরের পুরো নাম এ.কে.এম. শহীদুল্লাহ, ডাক নাম সাবের। একজন লেখক-সাংবাদিক। সাবের নামেই ছিল তার লেখক পরিচিতি। ১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁস্থ সোনাপুর গ্রামে শহিদ সাবেরের জন্ম। মা শফিকা খাতুন এবং বাবা সালামত উল্লাহর প্রথম সন্তান তিনি। পিতা-মাতা উভয়ের দিক দিয়ে তিনি অভিজাত বংশীয়।

শহিদ সাবের কেবল একজন ব্যক্তি নন। তিনি যেন এক প্রতিশ্রুতির ও অঙ্গীকারের প্রতীকও। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন সেই কিশোর বয়সে। ১৯৫০ সালে শহিদ সাবের জেলে যান। যখন তিনি সদ্য ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছেন, চট্টগ্রামে। সেকালের অসংখ্য রাজবন্দির মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম। তারপর বিনাবিচারে চার বছর আটক ছিলেন কারাগারে। বন্দি অবস্থায় থেকে আইএ পাস করেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রাইভেট প্রার্থী হিসেবে বিএ পরীক্ষা দেওয়ার। জেলে বসেই বন্দি জীবনের কাহিনী নিয়ে লিখেছে অসংখ্য লেখা। শহিদ সাবের ১৯৫৪ তে কারাগার থেকে মুক্ত হন। কিন্তু আক্রান্ত হয়েছেন অর্থনৈতিক সংকটে, যে সংকট রাষ্ট্র তৈরি করেছে সাধারণ মানুষের জন্য।

অথচ মেরুদণ্ড শক্ত ছিল, আশাবাদ ছিল প্রচণ্ড। ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। বিএ পাস করে সহকারি সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। সংবাদের সম্পাদকীয় তিনিই লিখতেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (মরণোত্তর, ১৯৭২, ছোটগল্প), চট্টগ্রামস্থ কক্সবাজার সমিতির কক্সবাজার পদক (১৯৮৯), কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (মরণোত্তর-২০০৩), কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কক্সবাজার পদক (মরণোত্তর-২০০৪) এবং সবুজ বাংলা সংসদ পুরস্কার (মরণোত্তর-২০১১) পান শহিদ সাবের। এছাড়া স্বাধীনতার পর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে ২ টাকার দামের ডাকটিকেট প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব এবং পিআইবিতে যে তের জন শহিদ সাংবাদিকের স্মৃতিফলক লাগানো আছে সেখানে শহিদ সাবেরের নামও রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় শহিদ সাবেরের বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে।

শহিদ সাবেরের সর্বাধিক পরিচিত, ছোট কিন্তু চাঞ্চল্যকর ‘আরেক দুনিয়া থেকে’ নামের রচনাটি। এটি তিনি চট্টগ্রাম জেলে বন্দি অবস্থায়ই লিখেছেন এবং কারামুক্ত হওয়ার আগেই তা তখনকার দিনে কলকাতার সবচেয়ে প্রগতিশীল বলে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাসিক পত্রিকা নতুন সাহিত্যের চৈত্র ১৩৫৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। কারারক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে এটি বাইরে পাঠানো হয়েছিল, বাংলা ১৩৫৭ অর্থাৎ ইংরেজি ১৯৫১ সালে। লেখক হিসেবে নাম ছাপা হয়েছিল জামিল হোসেন ছদ্মনামে। রচনাটি রাজবন্দির রোজনামচা জাতীয় লেখা। উভয় বাংলার পাঠক লেখকের পরিচয় জানতে কৌতূহলী হয়েছিলেন। সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখাটির প্রশংসা করে এবং ওই নতুন লেখককে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকার সম্পাদককে চিঠি লিখেছিলেন।

সাংবাদিক-লেখক শহিদ সাবেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *