আহমেদ বায়েজীদ
.
পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মাসটি যখন চলছে, তখনো বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী বিরাজ করছে। তাই রোজা রাখলে করোনার ঝুঁকি বাড়বে কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
করোনা সচেতনতা হিসেবে চিকিৎসকরা বলেন, বার বার পানি পান করতে- যার ফলে গলা শুষ্ক থাকবে না এবং বেশি বেশি তরল খাবার খেতে, যাতে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা না দেয়। যেহেতু রোজা রাখলে শরীর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, আবার বারবার খাবার গ্রহণেরও সুযোগ নেই। এই গরমে রোজা রাখার ফলে পানি শূন্যতাও দেখা দিতে পারে। তাই রোজা রাখলে কি করোনার ঝুঁকি বাড়বে? করোনায় আক্রান্ত হলে রোজা কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে? শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি করবে? যেটি হলে করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমন প্রশ্ন জাগছে অনেকের মনে।
.
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও চিকিৎসকরা এই সময়ে প্রচুর তরল খাবার খেতে ও গরম পানি দিয়ে গার্গল করতে বলেন। যাতে গলা, শ্বাসনালী ভেজা থাকে ও পানিশূন্যতা দূর হয়; কিন্তু সেটি যে করোনভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে পারবে তেমনটি কেউ বলছেন না।
বরং চিকিৎসকরা বারবরাই সতর্ক করছেন যে, নিজের ইচ্ছেমত উপায় বের করা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব বিষয় ছড়ায় সেগুলোকে ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় হিসেবে গ্রহণ না করতে। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির সংক্রামক ব্যধি বিশেষজ্ঞ ড. উইলিয়াম শাফনারের মতে, অসুস্থতার সময় চিকিৎসকরা বেশি করে তরল খাদ্য গ্রহণ করতে বললেও সেটি কিন্তু ভাইরাস সংক্রামন রোধে কোন কাজে আসে না।
প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করলে শরীর সবল থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে; কিন্তু এর সাথে করোনা আক্রমণের কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই।
.
রোজা ও বিজ্ঞান
সাম্প্রতিক অনেক গবেষণায় দেখা গেছে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য রোজা একটি দরকারি জিনিস। ব্রিটেন ভিত্তিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছে যে, মাঝে মধ্যে উপবাস থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ‘ইট, ফাস্ট এন্ড লিভ লংগার’ নামে বিখ্যাত একটি ডকুমেন্টারিও আছে উপবাস থাকার গুরুত্বের ওপর।
.
আলেমরা কী বলেন
দুবাই ডিপার্টমেন্ট অব ইসলামিক অ্যাফেয়ার্সের গ্রান্ড মুফতি ডক্টর আলী আহমদ মাশায়েল বলেন, রোজা ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া রোজা না রাখার আর কোন অজুহাত থাকতে পারে না। কোরআনে বর্ণিত আছে- যেমন অসুস্থতা, ভ্রমণ- এসব যথাযথ কারণ ছাড়া রোজা ছাড়ার হুকুম নেই।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, (সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তির জন্য) দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এই ভয়ে রোজা ছাড়া যাবে না। তেমন অনুমতি ইসলাম দেয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শে, কোন অসুস্থ ব্যক্তি যদি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে এমন শঙ্কা থাকে তবে তার ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রোজা দেহ ও আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য। আধুনিক বিজ্ঞানেও সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তাই করোনা সংক্রমণের ভয়ে বা করোনা হলে মোকাবেলা করতে কষ্ট হবে এমন ভয়ে রোজা ছাড়া যাবে না। তবে কেউ যদি আগেই করোনায় সংক্রমিত হন তবে তার ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরামর্শ দিলে রোজা ছাড়া যেতে পারে।
.
আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিমত
মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ফতোয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, মুসলিমদের যথারীতি রোজা পালন করতে হবে এবং এর ফলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বৃদ্ধির কোন আশংকা নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সাথে মিল রেখেই এই ফতোয়া জারি করেছে আল আজহার কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, পানি পান ও গার্গল করার করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না। আল আজহারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা ডব্লিউএইচও’কে প্রশ্ন করেছিলাম এ বিষয়ে। তারা বলেছে, যদিও মানব শরীরের জন্য পানি জরুরি; কিন্তু এর ফলে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যাবে এমন কোন প্রমাণ নেই।
.
সূত্র: গালফ নিউজ
.
আহমেদ বায়েজীদ
স্ক্রীপ্ট রাইটার, বিডি ভিউজ