মাহমুদ ইউসুফ
ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষ
ইউরোপে সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ নতুন কিছু নয়। যুগে যুগে তাদের হাতে মানবতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বারবার। রোমান বাহিনী ইসায়ি ৭০ সালে ইহুদিদের দ্বিতীয় মন্দির [Second Temple] হালাক করে ফেলে। পুরো সাম্র জ্য জুড়ে ইহুদিরা জাতিগতভাবে রাজধর্মের নিপীড়নের শিকার হয়। রোমান সাম্র জ্য চূড়ান্তভাবে ধর্মান্ধতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। খ্রিস্টান উৎপীড়ক রোমক রাজশক্তি এবার নতুন ধর্মমতে দীক্ষিত হয়ে ইহুদি উৎপীড়ক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ইহুদিরা সম্পত্তির অধিকারসহ সমস্ত প্রকার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। খ্রিস্টানদের সাথে ইহুদিদের বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। রোমান রাজসিংহাসনের উপর চার্চের প্রভাব যতবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকে সম্রা টের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ততই নিষ্ঠুর রূপ গ্রহণ করতে থাকে। পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যগগনে রোমান সালতানাতে ইহুদি শব্দটি একটি ঘৃণাব্যঞ্জক লফজে পরিণত হয়। নতুন কোনো ব্যক্তি ইহুদি ধর্মে দীক্ষিত হলে তার সাধারণ শাস্তি ছিলো মৃত্যুদন্ড।
[মঈন বিন নাসির, প্যালেষ্টাইন থেকে বসনিয়া, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি, ঢাকা, অক্টোবর ২০০০, পৃ ৫]
প্রথম বলকান যুদ্ধে বলকান লিগের উন্মত্ততা
১৯১২ সালের অক্টোবর থেকে ১৯১৩ সালের মে পর্যন্ত সংঘটিত হয় বলকান যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বলকান লিগ রাষ্ট্রসমূহ যথা: বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, গ্রিস ও মন্টেনিগ্রো উসমানিয়া সালতানাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ইউরোপীয় বাহিনীর চাপানো এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাবে ১ লাখ ২৫ হাজার উসমানীয় সৈন্য নিহত হয়। আহত হয় ১ লাখ আর যুদ্ধবন্দি হয় ১ লাখ ১৫ হাজার সৈন্য। সর্বমোট ৩ লাখ ৪০ হাজার অটোমান মুজাহিদ মৃত, আহত বা যুদ্ধবন্দি হয়। অন্যদিকে ইউরোপীয় বলকান লিগের ১ লাখ ৮ হাজার সৈন্য হতাহত হয়।
এই যুদ্ধের ফলে বলকান লিগ সদস্যরা অটোমান সাম্রাজ্যের ইউরোপীয় অংশে অবস্থিত প্রায় সকল অঞ্চল দখল ও ভাগাভাগি করে নেয়। এই ঘটনাবলির পরোক্ষ ফলাফল হিসেবে বলকানে স্বাধীন আলবেনিয়া রাষ্ট্রেরও সৃষ্টি হয়। তবে যুদ্ধে সাফল্য সত্ত্বেও বুলগেরিয়া মেসিডোনিয়ায় লব্ধ অংশ নিয়ে ক্ষুদ্ধ হয় এবং এর ফলে দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ শুরু হয়।
[উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে, ১৪ জুন ২০২১ তারিখে সংগৃহীত]
ভারতে মসজিদ ধ্বংস
হিন্দুস্তানের কাবেরি নদীর তীরে অবস্থিত ছিলো ৪০০ বছরের পুরাতন বাদিয়া মসজিদ ও দরগা। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় ভারতীয় প্রধান জঙ্গিগোষ্ঠী আরএসএস। ভারতীয় গবেষক গৌতম রায়ের ভাষায়, ‘হিন্দু গুন্ডারা দরগায় প্রার্থনা সঙ্গীত বন্ধ করে দিতে বলে। প্রার্থনা সঙ্গীতের তাঁবুতে সশস্ত্র আক্রমণ করে। প্রায় ৩০০ জন উন্মত্ত দস্যু এই কাজ করে। এই দস্যুদের আক্রমণে অচিরেই মাটির সঙ্গে মিশে যায় প্রাচীন ভালান্দারি স্থাপত্যে নির্মিত এই ছাদবিহীন মসজিদটা। সেই স্থানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় স্থাপন করা হয় মার্বেল পাথরে তৈরি মন্দিরের কাঠামো, স্থাপন করা হয় বজরং দলের উপাস্য বাঁদরের মূর্তি। নাম দেওয়া হয় ‘পির পাছাড় হনমানজি মন্দির’। আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনুমান করে আসছি যে, বর্বর সঙ্ঘ পরিবার দেশের বেশ কিছু প্রাচীন ঐতিহ্যশালী মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে হিন্দু মন্দির তৈরি করবার ষড়যন্ত্র করছে। সেওয়াই ভোজ মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা আমাদের সেই অনুমান যে কতোটা সঠিক তা প্রমাণ করল। কারণ, পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে কী করে মসজিদ ধ্বংসের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্বেল পাথরে তৈরি একটি মন্দিরের কাঠামো সেই জায়গায় স্থাপন করা সম্ভব? … ’
[ গৌতম রায়, রাজস্থানে মসজিদ ধ্বংস বর্বর আরএসএস-এর গোপন কর্মসূচির অঙ্গ; উদ্ধৃত, ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক, ভারতে মুসলিম নির্যাতন, ঢাকা পাবলিকেশন্স, প্রথম প্রকাশ ২০১১, পৃ ২৬২]