জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত

পর্ব – ১১

পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের দুরভিসন্ধি

ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে ভেনিস প্রজাতন্ত্র শক্তিশালী হলে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস ঈর্ষান্বিত হয়। ভেনিসকে দখল ও লুটতরাজ করার জন্য তিনি ১৫০৮ সালে ক্যামব্রাই সংঘ গঠন করেন। মিলানের অধিপতি ফ্রান্সের রাজা দ্বাদশ লুই প্রায় সব যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং ভেনিস দখল করে নেন। পোপ লুণ্ঠিত দ্রব্যের কিছু অংশ পান। মিলান ও ভেনিস অধিকারের পর ইতালিতে ফ্রান্স কর্তৃক অত্যাধিক আধিপত্র প্রতিষ্ঠায় পোপ অত্যান্ত ভীত হন। তাই ইতালির দুই প্রদেশ থেকে ফ্রান্সকে বিতাড়িত করার নিমিত্তে ১৫১১ সালে তিনি ‘পবিত্র’ সংঘ গঠন করেন। এর সদস্য পোপ জুলিয়াস, ম্যাক্রিমিলিয়ান, ফার্দিন্যান্ড ও ভেনিস। (প্রফেসর ড. ওয়াজেদ আলী, ইংল্যান্ডের ইতিহাস, পৃ ৩০)

ছবি: পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস

মারাঠা বর্গীদের কোপন-ক্রূরতা

আঠার শতকে ভারতবর্ষে আবির্ভাব ঘটে এক ভয়ঙ্কর ত্রাস বাহিনী। হিন্দু মারাঠা-বর্গীদের লুণ্ঠনবৃত্তির কাহিনি স্মরণে আজ কেঁপে ওঠে মানব হৃদয়। সবরকম পাপাচারে তারা ছিলো দক্ষ ও পটু। ১৭৪২ থেকে ১৭৫০ সাল পর্যন্ত তারা বিহার ও বাংলায় দস্যুকার্য চালায়। সারা দেশের ওপর মারাঠা দস্যুদল নিঃশঙ্কচিত্তে সফর করত ধ্বংস ও বীভৎস অত্যাচারের মূর্তিমান প্রেত-মূর্তির মতো। হলওয়েল লিখেছেন, ‘তারা ভীষণতম ধ্বংসলীলা ও ক্রুরতম হিংসাত্মক কার্যে আনন্দ লাভ করত। তারা তুঁতগাছের বাগানে ঘোড়া চড়িয়ে রেশ উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে দেয়। দেশের সর্বত্র বিভীষিকার ছায়া পড়ে। গৃহস্থ, কৃষক ও তাঁতিরা সকলেই গৃহত্যাগ করে পলায়ন করেছে। আড়ংগুলো পরিত্যক্ত, চাষের জমি অকর্ষিত…খাদ্যশষ্য একেবারে অন্তর্র্হিত, ব্যবসা বাণিজ্য একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে উৎপীড়নের চাপে।’ (হলওয়েল: ইন্টারেস্টিং হিস্টরি: ইভেন্টস, পৃ ১২১-১৫১; উদ্বৃতি: আবদুল মওদুদ: মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশঃ সংস্কৃতির রূপান্তর, পৃ ৩১-৩২) মারাঠা বর্গীদের অমানুষিকতা, নিষ্ঠুরতা ও দানবীয় দানবতায় বাংলার সকল শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্র্ণের মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। সেই মারাঠা জাতির জনক জঙ্গি শিবাজীর উদ্দেশে ‘শিবাজি-উৎসব’ কবিতা লিখে বাংলাভাষার কথিত শ্রেষ্ঠ কবি, বিশ্বকবি।

ছবি: সন্ত্রাসী শিবাজী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শিবাজী উৎসব কবিতায় বলেছিলেন:

মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক কন্ঠে বলো
‘জয়তু শিবাজি’।
মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক সঙ্গে চলো
মহোৎসবে সাজি।
আজি এক সভাতলে ভারতের পশ্চিম-পুরব
দক্ষিণে ও বামে
একত্রে করুক ভোগ একসাথে একটি গৌরব
এক পুণ্য নামে।।

Image result for মারাঠাদের সন্ত্রাসের চিত্র

গঙ্গারাম নামক জনৈক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে জানা যায়, বর্গীরা সহসা উদিত হয়ে গ্রাম ঘিরে ফেলে, তখন সকল শ্রেণির মানুষ যে যা পারে অস্থাবর মালপত্র নিয়ে পলায়ন করে। বর্গীরা সবকিছু ফেলে দিয়ে কেবল সোনা-রূপা কেড়ে নেয়। তারা কারও হস্ত কর্তন করে, কারও কর্তন করে কর্ণনাসিকা, কাউকে একেবারে হত্যা করে। সুন্দরী স্ত্রীলোক দেখলেই টেনে নিয়ে যায় … তারপর বর্গীরা তার উপর অকথ্য পাপাচার করে পরিত্যক্ত করে যায়। লুণ্ঠন শেষে গ্রাম-কে-গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। প্রদেশের সর্বত্র এরূপ বীভৎস লুণ্ঠন ও অত্যাচার চালায় … তারা কেবল চীৎকার করে ‘‘টাকা দাও, টাকা দাও’’ টাকা না পেলে তারা হতভাগ্য মানুষের নাকে পানি ঢুকিয়ে কিংবা পুষ্করিণীতে ডুবিয়ে হত্যা করে … ভাগিরথী পার হয়ে অপর তীরে গেলে তাদের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি মিলে।’ বর্ধমান রাজার সভাপ-িত বানেশ্বর বিদ্যালঙ্কারের লেখা থেকে জানা যায়, ‘শাহু রাজার সৈন্যদের তথা মারাঠা-বর্গীদের থেকে গর্ভবর্তী নারী ও শিশুরাও রক্ষা পেত না। সকল মানুষকে হত্যা করা ও লুটতরাজ করাই ছিলো তাদের ব্রত।’ (হিস্টরি অব বেঙ্গল, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ ৪৫৭-৪৫৮; উদ্বৃতি: আবদুল মওদুদ: মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশঃ সংস্কৃতির রূপান্তর, পৃ ৩২)

চলবে …

ছবি: ইন্টারনেট

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *