ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলামের গবেষণা গ্রন্থ ‘যে নামাযে আল্লাহ খুশি হন’

আল হাফিজ আযাদ আলাউদ্দীন ।।

ইসলামের মূল পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো সালাত বা নামায। আল্লাহ পাক বলেন, ‘সময়মতো সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য ফরয’। রাসুল [সা.] বলেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখো সেভাবে সালাত আদায় করো।’ সুতরাং এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও প্রমাণিত শুদ্ধ পদ্ধতিতে আমাদেরকে সালাত আদায় করতে হবে।

এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ‘যে নামাযে আল্লাহ খুশি হন’ শীর্ষক প্রামাণ্য গ্রন্থটি রচনা করেছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম। এই গ্রন্থটি ‘মাওলানা ক্বারী ওয়ালিউল্লাহ ইসলামিক পাঠাগার ও কুরআন রিসার্স সেন্টার’-এর পক্ষে ডা. কাজী তৌকিয়া রহমান প্রকাশ করেন অক্টোবর ২০২২-এ। গ্রন্থটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী তামজিদা বিনতে জাহিদ জারিয়া। ৪৪৮ পৃষ্ঠার ঝকঝকে ছাপা ও সুন্দর মজবুত ভাবে বাঁধাই করা এ গ্রন্থটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৫২৫ টাকা।

বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম ‘যে নামাযে আল্লাহ খুশি হন’ শীর্ষক গ্রন্থে কুরআন, হাদিস ও নির্ভরযোগ্য ফিকাহ শাস্ত্রের আলোকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ ও জুম্য়াসহ অন্যান্য ওয়াজিব, সুন্নাত এবং নফল নামাযের যথাযথ বিধি-বিধান উল্লেখ করে সহজ সরল বোধগম্য ভাষায় আলোচনা করেছেন- যাতে সাধারণ মানুষের বুঝতে কোনো প্রকার অসুবিধা না হয়। সেই সাথে সালাতের ইহ ও পারলৌকিক উপকারিতার দিক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে মানুষের স্বাস্থ্যগত মাঙ্গলিক দিক নিয়েও বিশদ আলোচনা করেছেন তিনি। বিশেষ করে সালাত বা নামায সংক্রান্ত মতপার্থক্য নিয়ে যে সকল ফতোয়া আমাদের সমাজে বহুল ভাবে প্রচলিত রয়েছে সে গুলো নিয়ে বিভিন্ন ইসলামি পণ্ডিতদের মতপার্থক্যের দালিলিক বিশ্লেষণ করে যথার্থ ভাবে আমল করার সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গ্রন্থটি শুধু সাধারণ মানুষের জন্যই নয় বরং আলিম-উলামাদেরও উপকারে আসবে বলে আমরা মনে করি।

লেখক জাহিদুল ইসলাম গভীর আন্তরিকতার সাথে আমাদের প্রধান ইবাদত সালাত বিষয়ক নিয়ম-কানুন ও মাসয়ালা-মাসায়েল সমূহ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে যা সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য তা তিনি তুলে ধরেছেন যত্ন সহকারে। এ সম্পর্কিত কোনো ছোটখাট বিষয়কেও তিনি এড়িয়ে যাননি। সহজ-সরল ভাষায় সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে ‘যে নামাযে আল্লাহ খুশি হন’ নামক গ্রন্থটি তিনি আগ্রহী ও চিন্তাশীল পাঠকদের জন্য রচনা করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রচলিত ধ্যান-ধারণার পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতিও পেয়ে যাবেন সচেতন পাঠক সমাজ। মূলত সালাত বা নামায আদায়ের যথাযথ নিয়ম-কানুন ছাড়াও এ গ্রন্থে লেখক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমল করার বিশেষ বিশেষ কিছু দুয়া ও জিকির এবং মহান আল্লাহর শেখানো এমন কতিপয় মুনাজাত সংযোজন করে দিয়েছেন যা খুবই উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম ‘যে নামাযে আল্লাহ খুশি হন’ শীর্ষক গ্রন্থটিকে ৩ টি আলাদা আলাদা পরিচ্ছেদে ভাগ করেছেন।

প্রথম পরিচ্ছেদ-এ রয়েছে তাহারাত বা পবিত্রতা বিষয়ক বিশদ বর্ণনা। আবার এ পরিচ্ছেদে রয়েছে ৩ টি অধ্যায়, যথা- এক. অজু সম্পর্কিত আলোচনা, দুই. তায়াম্মুম সম্পর্কিত আলোচনা এবং তিন. গোছল সম্পর্কিত আলোচনা।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে রয়েছে সালাত বা নামায সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা। এ পরিচ্ছেদে উনচল্লিশটি অধ্যায় রয়েছে। এসব অধ্যায়ে সালাত বা নামাযের ভূমিকা, গুরুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, উপকারিতা, শাস্তি, মর্যাদা, কুরআন- হাদিসের আলোকে সালাত, বিজ্ঞান ও সালাত, মনোযোগ সৃষ্টির উপায়, খুশু-খুযু অর্জন, সালাত আদায়ের পদ্ধতি, সতর ঢাকা, সময়মত সালাত আদায়সহ সালাতের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতসমূহ, সালাত ও অজু ভঙ্গের কারণ, জুময়ার নামায, ঈদের নামায, তাহাজ্জুদ নামায, কাযা নামায, জামায়াতে নামায, মহিলাদের নামায ইত্যাদি বিষয়ে ছোট-বড় সকল কিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদে ‘সালাত নাজাতের উসিলা’ শীর্ষক প্রাণবন্ত একটি আলোচনা রয়েছে। এই পরিচ্ছেদে ১৪ টি অধ্যায় রয়েছে যেখানে বিশ্বনবির [সা.] সালাত আদায়ের আনন্দ, প্রশান্তি, বিনয় ও কান্নার কথা, পোশাক-পরিচ্ছদ, নামাযি সন্তান, বাস্তবধর্মী নামায, সমাজে প্রচলিত নামায আদায়ের ভুল পদ্ধতি, দুয়ার মহিমা, দৈনন্দিন পঠিত কিছু জরুরি দুয়া ও জিকির, মুনাজাত ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তবে বিশেষ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে ‘ইসলামের ঘোষণাপত্র: আমার রবের ফয়সালা’ এবং ‘আমার আমলনামা: চেকলিস্ট মাই লাইফ’।

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম বরিশালের মুলাদি উপজেলার চরলক্ষীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস, ২০১২ সালে বিসিএস [ স্বাস্থ্য ], এবং ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থোপেডিক সার্জারি বিষয়ে এম. এস. উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সমাজসেবক ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম শুধু মানুষের দৈহিক রোগের সুচিকিৎসকই নন বরং মানুষের মনোজাগতিক তথা আধ্যাত্মিক শুদ্ধির ক্ষেত্রেও তিনি সুচিকিৎসার দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষমতা রাখেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি। যার যথাবাস্তব স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি ‘যে নামাযে আল্লাহ খুশি হন’ শীর্ষক গ্রন্থে। আমরা এই গ্রন্থটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করি।

বইটি সংগ্রহ করতে আগ্রহীগণ যোগাযোগ করুন: ওবায়দুর রহমান হাসান, রয়েল সিটি হাসপাতাল, ব্রাউন কম্পাউন্ড, বরিশাল। 01728810051

One comment

Leave a Reply to Md Akbar Hossan Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *