মিডিয়ার পরিবেশনায় ভিন্নতা চান পাঠক ও দর্শকরা

আবদুর রহমান সালেহ

কঠোর অধ্যবসায় ও গভীর ভাবনা-চিন্তা করে রচিত প্রতিবেদন থেকে পাঠক যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে সকল পরিশ্রমটাই মাটি হয়ে গেলো। আর প্রতিবেদনে যদি ভিন্নতার স্বাদ না’ই থাকে তাহলে পাঠকশ্রেণি ‘অযথাই’ কেন সেই প্রতিবেদনের উপর আলাদা দৃষ্টি রাখবে? সময় ক্ষেপণ করবে?

ভিন্নতার উপাদান না রাখতে পারার ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মীদের। সংবাদকর্মীরা যদি পরিশ্রমী হয়, নিরন্তর চেষ্টায় পাঠক ধরে রাখতে আন্তরিক হয় তাহলে গতানুগতিক ধারার বাইরে কোন ধরণের রচনা পাঠককে আকৃষ্ট করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তারা। আর যদি পাঠকশ্রেণির কথা না ভেবে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান টেকানোর স্বার্থে দায় এড়িয়ে যতটুকু করার ততটুকু করা হয় তাহলে সেটি হবে দায়বদ্ধতার উপর লুকোচুরি করা মাত্র। এরকম লুকোচুরি করে হয়ত চাকুরী টেকানো যাবে কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়ার পাঠক কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দর্শক কাউকেই একটা নির্দিষ্ট সময় পড়ে আর ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
প্রিন্ট মিডিয়ার পাঠক চায় কাগজ পড়ে তৃপ্ত হতে। আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দর্শক চায় ভিন্নধর্মী পরিবেশনা দেখে টিভিসেটের সামনে পড়ে থাকতে। কিন্তু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি পাঠক চাহিদা ও তৃষ্ণার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ নাই করেন, নাই বোঝেন তাদের প্রয়োজন তাহলে পাঠক ও দর্শকেরা একটা সময় চিরতরে বিদায় জানাবে ‘অমনোযোগী‘ প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

নাগরিক ব্যস্ততায় এমনিতেই অফুরন্ত সময় অনিচ্ছায়ই চলে যায় শতকরা হারের উল্লেখযোগ্য কর্মক্ষম মানুষদের। কাজের অবসরে কিংবা শখের বশে যারা প্রিন্ট মিডিয়ার কাগজের পাতার প্রতি এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন চ্যানেলের উপর মনোযোগ রাখেন তারা চান যতটুকু সময় হাতে থাকে ততটুকুর সদ্ব্যবহার। এতটুকু সময় নষ্ট করার মত সময় তাদের হাতে নেই। যতটুকু সময় কাগজের উপর রাখেন ততটুকু সময় যেন তৃপ্ত থাকেন- পাঠক এটাই চায়।

পাঠক যে কাগজটি হাতে নিয়েছেন সেটি পাঠ করে তৃপ্ত থাকতে সেই কাগজটিতে যদি পর্যাপ্ত চমৎকারিত্বের উপাদান না থাকে তাহলে পাঠক কেন সেটিকে আঁকড়ে ধরবে? যুক্তিযুক্ত কারণেই পাঠক চাইবে না যে কাগজ পড়ে কোন ভাল লাগা কাজ না করে সেই কাগজের প্রতি দরদ দেখাতে।

সমান শব্দমালা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দর্শকদের প্রতিও। সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়া যদি পাঠক ধরে রাখার কৌশল রপ্ত করতে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানমালা প্রচারে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানও সন্দেহাতীতভাবে দর্শক হারাবেন। কিন্তু পাঠকশ্রেণি ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের করণীয়টা কি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আশা করি অন্ত এই প্রতিবেদন পড়ার দরকার হবে না! কারণ এর উত্তরটি আপনার কাছেই রয়েছে।

সবকিছুর উপস্থাপনে ভিন্নতা আনতে হবে। সেটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উভয়ের ক্ষেত্রে একই শব্দমালা। ভিন্নতা। চমৎকারিত্ব। শব্দ দুটো ভিন্ন হলেও এর স্বাদে রয়েছে সুনিপুণ বৈচিত্র্য। পাঠকশ্রেণি কোন ধরণের সংবাদ পড়তে ভালবাসেন, কোন কোন শব্দের গাঁথুনি পাঠককে আকৃষ্ট করে এসবের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মী ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দায়িত্বশীলদের।

অপরদিকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দায়িত্বশীলদের প্রচারিতব্য অনুষ্ঠানের মান নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা যদি তাদের কাজের প্রতি আন্তরিক হয় সেটি অতিরিক্ত পাওয়া। কিন্তু যদি আন্তরিক নাও হয় তদুপরি প্রতিষ্ঠানে নিজের পদ টিকিয়ে রাখতে হলেও তাদের মানসম্মত অনুষ্ঠান পরিবেশনা অব্যাহত রাখতে হবে! তবেই না দর্শক রিমোট হাতে নিয়ে নিজের দেশের চ্যানেল দেখে স্বস্তি পাবে। অন্যথায় আকাশ মাধ্যম উন্মুক্ত তো রয়েছেই। রিমোর্ট ঘোরাতে আর কতটা সময়ই বা লাগে? দর্শকদের জোর করে ধরে রাখা যাবে না কিছুতেই। আর অনুষ্ঠান উপস্থাপনে ভিন্নতা থাকলে, বৈচিত্র্য থাকলে নিজ দেশের দর্শক কখনোই রিমোর্ট টিপে অন্য দেশের চ্যানেলের প্রতি মনোযোগী হবে না। এতটুকু বিশ্বাস দেশের দর্শকদের উপর অনায়াসেই করা যায়।
প্রসঙ্গ বাড়িয়ে লেখার কলেবর দীর্ঘ করার প্রয়োজনীয়তা অহেতুক হয়রানির নামান্তর। এটি করা হলে পাঠক শিরোনামের সাথে মিল খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন। পাঠকদের বিভ্রান্ত করার ইচ্ছে নেই। কাগজে মুদ্রিত লেখা কিংবা ক্যামেরার লেন্সে ধারণকৃত সৃষ্টিশীল উপস্থাপনায় যদি চমৎকারিত্বের ছোঁয়া থাকে তাহলে পাঠক ও দর্শক সেই ছোঁয়াটুকু সর্বদাই উপভোগ করতে চাইবেন।

এই সহজ সমীকরণটুকু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা বুঝতেই পারলেই এই প্রতিবেদন লেখার সার্থকতা প্রাপ্তির পূর্ণতায় ভরে উঠবে। আমি আশাবাদী মানুষ বলেই সেই সুদিনের অপেÍগায় আছি- যেদিন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিশীল উপস্থাপনের প্রতি তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করবেন এবং চমৎকারিত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যে কোন প্রতিজ্ঞা কিংবা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবেন।

তথ্যসূত্র: ‘মুক্তবুলি’ ম্যাগাজিন ০৯ম সংখ্যা, জুলাই ২০১৯, প্রকাশক ও সম্পাদক: আযাদ আলাউদ্দীন

আবদুর রহমান সালেহ  ফ্রিল্যান্স সংবাদকর্মি, আমতলী, বরগুনা ০১৭৮৯১৫৯৯০৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *