বরেণ্য সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরী

মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।
সানাউল্লাহ নূরী বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ছিলেন।
১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের মূখপত্র ‘অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা ইহসানের’ সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্বের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করে দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক জনতা, দৈনিক বাংলা, দৈনিক গণবাংলা, দৈনিক দিনকাল ও সাপ্তাহিক কিশোর বাংলার সম্পাদক সহ বাংলা ভাষার বিভিন্ন পত্রিকার বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে দায়িত্বরত ছিলেন। রচনা করেছেন প্রায় ৬০টি বিভিন্ন গ্রন্থ।

সানা উল্লাহ নূরী ১৯২৮ সালের ২৮ মে লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর ফলকন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মাওলানা সালামত উল্লাহ ও মাতা নাম মনসুরা বেগম।
তিনি ১৯৪৭ সালে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময় তিনি বামছাত্র রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় যোগ দেন।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা কলেজের নুরপুর ভিলা ছাত্রাবাসে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামক সেমিনারে তিনি যোগ দেন।

১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। তার শৈশব শিক্ষা শুরু হয় কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট জুনিয়র এ্যাংলো ইংলিশ এ্যারাবিক মাদরাসায়। এরপর তিনি নেত্রকোনা জেলায় পড়াশোনা করেন।ম্যাট্টিকুলেশন পাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

১৯৯৪ সালে যোগদানের পর ১৯৯৭ সালের মে মাস পর্যন্ত দৈনিক দিনকালের সম্পাদক পদে দায়িত্বপালন করনে সানাউল্লাহ নূরী।
এর আগে ১৯৮৭ সালে দৈনিক জনতা পত্রিকার সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক দেশ (১৯৭৮), দৈনিক কিশোর বাংলা, নির্বাহী  সম্পাদক দৈনিক গনবাংলা (১৯৭২), দৈনিক বাংলা ও দৈনিক পাকিস্তানের (১৯৫২) বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৮ সালে দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯৬০ সালে মাসিক সওগাত পত্রিকায় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সানাউল্লাহ নূরী।
১৯৪৮ সালে দৈনিক আজাদ এবং ১৯৫২ সালে দৈনিক আজাদ ছেড়ে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দিয়ে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সংবাদে থাকেন।

১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের মূখপত্র অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ইহসান’ এর সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্বের মধ্য দিয়ে শুরু করা সাংবাদিকতা দিয়ে তিনি টানা ৫০ বছর সাংবাদিকতা করেন।

১৯৮৮ সালে গঠিত ‘বাংলাদেশ কাউন্সিল অব এডিটরস’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সানাউল্লাহ নূরী।

সানা উল্লাহ নূরী ১৯৮২ সালে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় একুশে পদক পান।

১৯৯৩ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন স্মৃতি পরিষদের শিল্পাচার্য পদক পান। ১৯৯৫ সালে পশ্চিম বাংলার ‘ড: দীনেশ চন্দ্র সেন গবেষণা পরিষদ’ প্রদত্ত দীনেশ সেন স্বর্নপদকে ভূষিত হন।

তিনি ৮টি উপন্যাস, ৭টি গল্প ও শিশুতোষ গ্রন্থ, ৩টি ভ্রমণ কাহিনী, ৪টি ঐতিহাসিক গ্রন্থ, সাংবাদিকতা বিষয়ে ২টি গ্রন্থ, রাজনৈতিক বিষয়ে ২টি গ্রন্থ, ২টি কাব্য গ্রন্থসহ ৬০টি গ্রন্থ রচনা করেন।

উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা:

আন্ধার মানিকের রাজকন্যা, নিঝুম দ্বীপের উপাখ্যান, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা,
নোয়াখালী-ভুলুয়ার ইতিহাস ও সভ্যতা, উপমহাদেশের শত বর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

১৯৯৭ সালের মে মাস পর্যন্ত দৈনিক দিনকালের সম্পাদক পদে দায়িত্বপালন করার সময় অসুস্থতার কারণে সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেন সানাউল্লাহ নূরী। ২০০১ সালের ১৬ জুন ৭৩ বছরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্রঃ ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ ১৬ জুন ২০০৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *