মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।
ভোলার প্রথিতযশা প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, দৈনিক বাংলার কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ পেয়েছেন। স্বাধীনতা পূর্ব থেকে টানা অর্ধ শতাব্দীর অধিককাল তৃণমূল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় তাঁকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
৩০ মে ২০২২ সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এম হাবিবুর রহমানের হাতে সম্মাননা স্বারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ডক্টর হাসান মাহমুদ। তিনি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতা করছেন। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ‘দৈনিক বাংলার কণ্ঠ’ পত্রিকা প্রকাশনা ও সম্পাদনা করেছেন।
ষাটের দশকের শেষ দিকে তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকার সাথে যুক্ত হন হাবিবুর রহমান। পরবর্তীতে দ্বীপ মহকুমা ভোলার সংবাদদাতা হিসেবে এম হাবিবুর রহমান কাজ শুরু করেন। পূর্বদেশ পত্রিকায় ৭০ সালের সেই ভয়াল ১২ নভেম্বের জলোচ্ছ্বাসের পর “কাঁদো বাঙালি কাঁদো। ভোলার গাছে গাছে ঝুলছে মানুষের লাশ” শিরনামে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনটি হাবিবুর রহমানকে দেশব্যাপী ব্যপক পরিচিতি এনে দেয়।
এরপর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভোলার ওয়াব দ্যা কলোনি সংলগ্ন বদ্ধভূমির সচিত্র প্রতিবেদনসহ যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে হাবিবুর রহমান দেশপ্রেমিক ও সাহসী সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
হাবিবুর রহমান দীর্ঘ চার দশক বাংলাদেশ বেতারের ভোলা সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ বেতারে ১৯৮৭ সালে ‘সামিয়া লঞ্চ’ ডুবির সংবাদ পরিবেশন করে রাষ্ট্রপতি পদক পেয়েছেন তিনি।
১৯৯৩ সালে ভোলা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বাংলার কণ্ঠ’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক এম হাবিবুর রহমান বর্তমানে ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৪৪ খ্রি. ৩১ জানুয়ারি ভোলা শহরের ঐতিহ্যবাহী সিকদার বাড়িতে হাবিবুর রহমানের জন্ম। তার পিতা মৃত মোঃ সেকান্দার আলী সিকদার এবং মাতা মৃত সায়েদা খাতুন। ১৯৫৯ সালে ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (ভোলা জিলা স্কুল) থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬২ সালে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে স্নাতক এবং ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এম. এ পাশ করেন।
এম হাবিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ( বাসস) এর তৎকালীন ভোলা মহকুমা প্রতিনিধি, ১৯৮৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতারের ভোলা জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে ‘দৈনিক বাংলার কণ্ঠ’ নামে ভোলা থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। যা সরকারি নিবন্ধনকৃত এবং ডিএফপিভূক্ত। পত্রিকাটি ২৭ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সততাও নিষ্ঠার সাথে প্রকাশ করে আসছেন।
১৯৮৫ সালে ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ভোলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এম.ভি সামিয়া নামের একটি লঞ্চ বরিশালের হিজলা এলাকায় ডুবে যায়। এই সংবাদটি ভোররাতেই বাংলাদেশ বেতারে পাঠিয়েছিলেন। যা সকাল ৭ টার সংবাদে রেডিওতে প্রচারিত হয়। এই সংবাদের জন্য রাষ্ট্রপতি পাদ পেয়েছিলেন।
১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ৪ দিন পর ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকার লিড নিউজ ৷ ‘বাংলার মানুষ কাঁদো।। ভোলার গাছে গাছে ঝুলসে লাশ।” এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচা, নির্যাতন ও গণহত্যার একাধিক সংবাদ সংগ্রহ ও সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের পর আবেগ আপ্লুত প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, আজ সেই পরিশ্রমেরই যেন মূল্যায়ন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাই এই গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এদিকে সাংবাদিক এম হাবিবুর রহমান ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ অর্জন করায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।